ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ মাঘ ১৪৩১, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

সাভারে ‘ইয়াম্মী ইয়াম্মী’র খাবার খেয়ে অসুস্থ শতাধিক

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৭
সাভারে ‘ইয়াম্মী ইয়াম্মী’র খাবার খেয়ে অসুস্থ শতাধিক ইয়াম্মী ইয়াম্মীর খাবার খেয়ে সাভারে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন শতাধিক ব্যক্তি

ঢাকা: যথারীতি অনুষ্ঠান শেষ। খাবার বিতরণের পালা। যে সে বাবুর্চির তৈরি খাবার নয়। রীতিমতো বাংলাদেশ ও কানাডার মালিকানাধীন একটি ব্র্যান্ড ‘ইয়াম্মী ইয়াম্মী’র খাবার। সে খাবার খেয়ে সাভারে অসুস্থ হয়েছেন শতাধিক।

এ ঘটনায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে আটক করেছে ইয়াম্মী ইয়াম্মী ফ্রুটস এ্যান্ড ফ্লেভার্স লিমিটেডের এক কর্মকর্তাকে। ৫০ হাজার টাকা জরিমা‍না অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয় তাকে।

পাশাপাশি ক্ষুব্ধ ভোক্তারা ওই প্রতিষ্ঠানটির ওপর চড়াও হয়। তবে খাবারগুলো প্রধান কার্যালয় থেকে আনা হয়েছে- এ কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন আমন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।

শনিবার (ফেব্রুয়ারি ১১) দুপুরে ঢাকা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর ১ম বার্ষিক সদস্য সভায় খাবার বিতরণের পর অর্ডার দেয়া এক হাজার প্যাকেট খাবারের পুরোটাই নষ্টের বিষয়টি জানাজানি হয়।

বিষয়টি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক মন্তব্য করে ঢাকা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর জেনারেল ম্যানেজার সৈয়দ ওয়াহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, সমিতির ১ম বার্ষিক সদস্য সভার খাবার বিতরণের জন্যে ইয়াম্মী ইয়াম্মী ফ্রুটস এ্যান্ড ফ্লেভার্স লিমিটেডকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

অনুষ্ঠান শেষে প্রত্যেকের হাতে তুলে দেয়া হয় খাবারের প্যাকেট। যাতে ছিলো ফ্রাইড রাইস, দুই পিস চিকেন উইংস, গ্রেভি ভিজিটেবল আর এক বোতল পানি।

অনুষ্ঠান শেষেই শুরু হয় খাবার নিয়ে কানাঘুষা। দেখা যায় অতিথিদের অনেকেই খাবার ফেলে রেখে যাচ্ছেন। কেউ বা গেট থেকে বেরিয়ে ড্রেনে খাবার ফেলে দিচ্ছেন।

বিষয়টি কানে আসার পর আমি নিজেই ছুটে যাই। তলব করি খাবারের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের। সেখানে তারা আমাকে খাবার নষ্টের বিষয়টি অবহিত করে। জানান সৈয়দ ওয়াহিদুল ইসলাম।

খবর পেয়ে ঢাকা পল্লী বিদ্যু‍ৎ সমিতি-৩ এর প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় থমথমে পরিবেশ। সেখানে সবাই স্থির হয়ে আছেন কালো মুখে।
সাভারে পরিবেশন করা ইয়াম্মী ইয়াম্মীর সেই খাবারগুলো, যা খেয়ে অসস্থু হয়ে পড়েন অতিথিরা

এর মধ্যে পচা খাবার নিয়ে জোরালো গুঞ্জনে অস্বস্তিতে পড়তে দেখা যায় কর্মকর্তাদের। ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম (টেকনিক্যাল) প্রকৌশলী আকরাম হোসেনকে দেখা যায়, একের পর এক খাবারের প্যাকেজ খুলে তা কতটা পচে গিয়েছে সেটা পরখ করতে।

খাবারের দায়িত্বে নিয়োজিত অতি উৎসাহী দু’একজন কর্মকর্তা আবার দু’একটি খাবার প্যাকেট খুলে গন্ধ শুঁকে দিগ্বিজয়ী ভঙ্গি উল্লাসে বলছিলেন,স্যার এটা ঠিক আছে।

প্রচণ্ড উৎসাহ নিয়ে কর্মকর্তারা সেটা পরীক্ষা করার পরই স্তিমিত হয় তাদের সেই উৎসাহ। নাহ এটা থেকেও বিশ্রী গন্ধ আসছে- এমন উত্তর শুনে হতাশ হন তারা।

ইয়াম্মী ইয়াম্মী ফ্রুটস এ্যান্ড ফ্লেভার্স লিমিটেডের সাভারের শো-রুমে গিয়ে দেখা যায় সেখানেও চাপা আতংক। নাজেহাল হবার ভয়ে তটস্থ কর্মীরা।

সেখানকার সেলসের দায়িত্বে নিয়োজিত সোলায়মান নামের একজন কর্মী জানান,পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ থেকে শোরুমের ব্যবস্থাপককে তলব করা হয়েছে। তিনি নেই। আমাদের সাভারের শাখাটি তেমন চলছে না বলে আমরা অর্ধেক মূল্যেই খাবার সরবরাহ করছি। পল্লী বিদ্যুত সমিতি-৩ এর কর্মকর্তারা সেই সুযোগটিকেই কাজে লাগিয়েছেন বলে জানান সোলায়মান।

পরে অবশ্য সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু নাসের বেগের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে আটক করে সোলায়মানকে। পচা বাসি খাবার পরিবেশের অভিযোগে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তিন মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয় সোলায়মানকে।

যোগাযোগ করা হলে ইয়াম্মী ইয়াম্মী ফ্রুটস এ্যান্ড ফ্লেভার্স লিমিটেডের গ্রাহক সেবা কর্মকর্তা শফিউল ইসলাম জানান, রাত তিনটা থেকে রান্না শুরু হয়েছিলো। নষ্ট খাবার পরিবেশনের বিষয়টি নিশ্চিত করে এ বিষয়ে কোন খবর পরিবেশন না করার অনুরোধ জানান তিনি।

ইয়াম্মী ইয়াম্মী রেস্টুরেন্ট এর সাভার শাখার আরেক বিক্রয় প্রতিনিধি মো. হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, পচা বাসি খাবার ফেরত দিলে আমরা টাটকা ও ফ্রেশ খাবার বিনিময় করার ঘোষণা দিয়েছি। দু’একজন খাবার বদলে নিয়েছেন।

এ ব্যাপারে সাভার উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আমজাদুল হক বাংলানিউজকে জানান, খাবার নষ্ট হওয়ার খবরটি আমরা জানতে পেরেছি। অনেকে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের আশ্বস্ত করে বলেছি,পরিস্থিতি সামাল দিতে। আতংকিত না হতে। এ বিষয়ে পৌরসভার স্যানেটারি ইন্সপেক্টরকে জানানো হয়েছে। তারা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। মন্তব্য করেন এই চিকিৎসক।

ইয়াম্মী ইয়াম্মীর পচা খাবারগুলোর গন্ধ শুঁকে দেখছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জনৈক কর্মকর্তা সূত্রমতে, সমিতি খরচ বাঁচাতে খাবার সরবরাহকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে। তবে কেউ জনপ্রতি ১’শ টাকায় ফ্রাইড রাইস, দুই পিস চিকেন উইংস, গ্রেভি ভিজিটেবল আর এক বোতল পানি সরবরাহে রাজি না হলে এগিয়ে আসে ইয়াম্মী ইয়াম্মী ফ্রুটস এ্যান্ড ফ্লেভার্স লিমিটেড।

তারা বাজারদরের চাইতে কমমূল্যে কিভাবে খাবার সরবরাহ করলো সে প্রশ্ন করা হলে সন্তোষজনক কোন উত্তর দিতে পারেননি ঢাকা পল্লী বিদ্যু‍ৎ সমিতি-৩ এর কর্মকর্তারা।

‘গোটা আয়োজনটিই মাঠে মারা গেলো। একে তো কম মূল্যে নিম্নমানের খাবার সরবরাহ। অন্যদিকে এর মধ্যে সম্পৃক্ত কর্মকর্তার কমিশনের চাহিদা এই পরিস্থিতিকে জটিল করে দিয়েছে। যার পরিণতি খাবার নিয়ে কেলেংকারি’- হাস্যরসে যোগ করেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা।

সাভার মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কবির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, পচা বাসি খাবার পরিবেশনের অভিযোগ আটক ইয়াম্মী ইয়াম্মী ফ্রুটস এ্যান্ড ফ্লেভার্স লিমিটেডের কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িত অন্যরা গা ঢাকা দিয়েছে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৭
আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।