দুদুকের নির্ভারযোগ্য একটি বাংলানিউজকে এ তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, দুদকের মামলা চলাকালে বা আসামির মৃত্যুবরণজনিত কারণে বিচারাধীন মামলার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও একটি বিধিমালা প্রণয়ন করার উদ্যোগ নিয়েছে কমিশন।
কেননা বিভিন্ন মানি লন্ডারিং বা অবৈধ সম্পদ মামলায় আসামির সম্পদ পুলিশ বা জেলা প্রশাসকের জিম্মায় রাখা হয়। কিন্তু অবৈধ সম্পদের মামলা চলাকালীন তথা আদালত থেকে রায় না হওয়া পর্যন্ত এটা দুদকের সম্পদ। তাই অবৈধ সম্পদ দুদকের হেফাজতে রাখার এখতিয়ার রয়েছে। এছাড়া মানি লন্ডারিং আইন ২০১৫ সংশোধনীতে সম্পদ উদ্ধার/রক্ষণাবেক্ষণ দুদকের হেফাজতে রাখার বিধান রয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, দুর্নীতির মামলা চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন সম্পদ পুলিশের নিকট রাখায় তার অধিকাংশ নষ্ট হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে দুদকের ইমেজে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হয়। যেমন ডেসটিনি ও হলমার্কের দুর্নীতি মামলায় অনেক গাড়ি উদ্ধার করে দুদক। কিন্তু সেগুলো পুলিশের জিম্মায় থাকায় অধিকাংশ গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় এই ইউনিট গঠিত হলে দুদকের ইমেজে আরো নতুন মাত্রা যুক্ত করবে বলে দুদক কর্মকর্তাদের বিশ্বাস।
এ বিষষে দুদকের মহাপরিচালক (লিগ্যাল) মঈদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, দুর্নীতি মামলায় কোনো ব্যক্তি অভিযুক্ত হলে তার সম্পদও সম্পৃক্ত। তখন সেই সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। আর সেই দায়িত্ব কমিশনের। অন্যদিকে সেই অবৈধ সম্পদ বেহাত হয়ে গেলে দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি আইনের মারপ্যাচে বের হয়ে যান।
এছাড়া কমিশন আইনের ১৬ (৩) উপধারায় বলা আছে, কমিশনের কার্যাবলী দক্ষতার সঙ্গে সম্পাদনের জন্য কমিশন প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল নিয়োগ করতে পারবে। এছাড়া এই ইউনিট গঠন করতে ২০০৪ সালের কমিশন আইন ও ২০০৭ সালের বিধি পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়ছে না। তবে কমিশনের সাংগঠনিক কাঠামো, জনবল ও বাজেটের (অর্থের) প্রয়োজন রয়েছে। তাই কমিশন সকল প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে সরকারের নিকট অনুমতির আবেদন করলে সরকার অবশ্যই এই ইউনিটটি গঠনের অনুমতি দেবে।
দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, অবৈধ সম্পদ পুনরুদ্ধারে কমিশন একটি ইউনিট স্থাপন করতে যাচ্ছে। এজন্য কমিশন ইতোমধ্যে একটি খসড়াও তৈরি করেছে। আর এই ইউনিট খুব শিগগিরই গঠন করা হবে। কেননা দুর্নীতিবাজদের অবৈধ সম্পদ অনেক ক্ষেত্রে মামলা চলমান অবস্থায় বেহাত হয়ে যাচ্ছে। ফলে দেখা যায়, মামলা করার সময় তার যে সম্পদ ছিলো সেটি মামলার পর অন্যহাতে চলে গেছে। এমতাবস্থায় দুদকের মামলা থেকে ছাড় পেয়ে যাচ্ছে দুর্নীতিবাজরা।
সম্পদ পুনরুদ্ধারে ইউনিট গঠনের যুক্তিকতা বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, এটা অত্যান্ত সময়োপযোগী এবং যৌক্তিক একটি পদক্ষেপ। কারণ সম্পদ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ দেশে যেরকম আহরণ হচ্ছে তেমনিভাবে বিদেশেও হরহামেশায় পাচার হচ্ছে। এছাড়া দুর্নীতির অর্থ উদ্ধারে এটা আশানুরুপ একটি ফলাফল নিশ্চত করবে। কাজেই এটার গুরুত্ব রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এই ইউনিট গঠনে দুটি বিষয়ে কমিশনকে গুরুত্ব দিতে হবে। সেটি হচ্ছে এই ইউনিটে যাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হবে তাদের যোগ্যতা এবং শুরু থেকে দুদকের একটি কর্মপরিকল্পনা থাকতে হবে। এছাড়া এটি গঠনে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহনের প্রয়োজন রয়েছে। কেননা এই ধরনের কাজটি দুদকের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। এখানে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও অ্যাটর্নি জেনারেলের সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। তাহলেই দুদকের পক্ষে এটি করা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২,২০১৭
এসজে/বিএস