সময় বাঁচাতে নিয়মের বাইরে চলাচল করেন মোটরসাইকেল চালকেরা। সিগন্যালে দীর্ঘ সময়েও যখন ট্রাফিক পুলিশের হাতের ইশারা মেলে না, তখন তারা একটু এদিক সেদিক দিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
ফুটপাতে কেন গাড়ি চলবে- এমন প্রশ্ন, প্রশ্ন থেকে আলোচনা-সমালোচনা। কয়েক বছর আগে বিষয়টি গড়ায় আদালত পর্যন্ত। আদালত রায় দেন, কোনো অবস্থায়ই পায়ে হাঁটার পথে মোটরবাইক চলবে না। এ আদেশের পরে নড়েচড়ে বসে পুলিশ প্রশাসন। প্রথমে সচেতনতামূলক কার্যক্রম। পরে অ্যাকশন-মামলা। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। রাস্তায় জ্যাম হলেই ফুটপাতে মোটরসাইকেল চলতে দেখা যায়। সেক্ষেত্রে পুলিশ প্রসাশনও পিছিয়ে নেই।
রাজধানীর সব এলাকার চিত্র একই। সকালে বাসা থেকে বের হলেই দেখা মেলে অসহনীয় যানজটের। কর্মস্থলে যেতে বাসে ওঠা নিয়ে করতে হয় রীতিমতো যুদ্ধ। বাসে উঠতে না পারলে অপেক্ষা আর অপেক্ষা। এরপর অতিষ্ট হয়ে ফুটপাত ধরে হাঁটা। যানজটের কারণে অনেকে মাঝপথে বাস থেকে নেমে হাঁটা শুরু করেন। কিন্তু বিপত্তি দেখা দেয় সেখানেই। আর এ নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই পথচারীদের সঙ্গে মোটরসাইকেল চালকদের ঝগড়াঝাটি হাতাহাতিতে গড়ায়।
ফুটপাতে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ করতে নতুন করে উদ্যোগ নেয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। ফুটপাতের মাঝখানে লোহার পাইপ কিংবা বাঁশ পুতে ব্যারিকেড সৃষ্টি করা হয়েছে।
রাজধানীর ফার্মগেট পুলিশ বক্সের কাছে সিগন্যালে কথা হয়, বাইকচালক নূরে আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাস্তায় পুলিশের ব্যবহার দেখে মনে হয়, এই শহরে মোটরসাইকেল চালকেরা সবাই সন্ত্রাসী। তাদের হয়রানি করা হয়। অথচ রাস্তায় সবচেয়ে বেশি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে বাস, লেগুনা, সিএনজি চালিত অটোরিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন।
তিনি বলেন, সবার আগে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা দরকার। শুধু বাইকারদের পেছনে লেগে থেকে লাভ নাই।
কারওয়ান বাজার (সোনারগাঁও ক্রসিং) সিগন্যালে কথা হয়, বাইক চালক আমিরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, বাস, লেগুনাসহ অন্যান্য যানবাহনের মালিক শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশন রয়েছে। তারা নিয়মিত পুলিশকে মোটা অঙ্কের টাকা দেয়। তাই প্রতি মুহূর্তে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলেও পুলিশ ওইসব যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না। কিন্তু মোটরসাইকেল চাকলদের কাছ থেকে যেহেতু টাকা পায় না, তাই সব অত্যাচার তাদের ওপর।
তবে ফুটপাত দিয়ে বাইক না চালানোর পক্ষে ওই বাইক চালক। তিনি মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা লেন করার দাবি জানান।
এদিকে, ফুটপাতে মোটরসাইকেলের পাশাপাশি চলে কার পার্কিং। ফুটপাতে ব্যক্তিগত গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। সঙ্গে রয়েছে ভাসমান হকারদের যন্ত্রণা। যেখানে সেখানে দোকান বসানোর কারণে চলাচলে সমস্যায় পড়তে হয় পথচারীদের।
মৎস্য ভবন ও রমনা এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা আকতার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, অনেকেই ফুটপাত দিয়ে অবাধে মোটরসাইকেল চালান। তবে যারা এ কাজ করেন তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও আছে। ধরা পড়লে আইন অনুযায়ী তাৎক্ষণিক ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলাও করা হয়।
এ ব্যাপারে রমনা জোনের ডিসি মারুফ হোসেন সরদার বাংলানিউজকে বলেন, যারা এ ধরনের আইন ভঙ্গ করছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি।
এ বিষয়ে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ এর সভাপতি ও চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে কথা হয় মোবাইল ফেনে। তিনি জানান, জনগণকে সবার আগে সচেতন হতে হবে। তাহলেই সব সমস্যার সমাধান সম্ভব।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৭
ওএফ/আরআর/এমজেএফ