রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) প্রথম কার্যদিবসে অন্য চার নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে বিকেল ৫টায় সংবাদ সম্মেলনে আসেন সিইসি। এর আগে বিকেল ৩টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে তারা শপথ নেন।
সংবাদ সম্মেলনের প্রথমেই কে এম এম নুরুল হুদা ভাষা শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে তাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। একইসঙ্গে নিয়োগ দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
সিইসি বলেন, বিকেল ৩টায় প্রধান বিচারপতির মাধ্যমে শপথ গ্রহণ করেছি। তারপর থেকেই আমাদের ওপরে নির্বাচন কমিশনের আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। আমাদের কার্যক্রমের প্রধান পাথেয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান, সংবিধানের অধীনে প্রণীত বিভিন্ন আইন, আইনের অধীনে প্রণীত বিধিমালা, নির্বাচন কমিশনের নীতিমালা এবং নির্বাহী আদেশসমূহ।
কে এম নুরুল হুদা বলেন, আমাদের অনুসরণীয় হবে ১৯৭২ সালের ৭ জুলাই থেকে ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ১১টি নির্বাচন কমিশনের রেখে যাওয়া অভিজ্ঞতা সংবলিত দিক নির্দেশনা।
তিনি বলেন, সংবিধানের ১১৯ অনুচ্ছেদের বিধান বলে নির্বাচন কমিশনের প্রধান তিনটি দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে, রাষ্ট্রপতি পদের ও সংসদের নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা প্রস্তুকরণ, অনুরুপ নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব পালন এবং সংসদ নির্বাচনের জন্য সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ। এছাড়া স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বও নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত। দেশের সব ভোটারের স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের দায়িত্বও নির্বাচন কমিশনের ওপর। অভিজ্ঞ এবং নিষ্ঠাবান নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে নিয়ে এ সব দায়িত্বপালনে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
সিইসি বলেন, আমরা সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের শপথ গ্রহণ করেছি। আমরা সংবিধান এবং সংবিধানের অধীন প্রণীত আইন-কানুন, বিধি বিধানের ভিত্তিতে দায়িত্ব পালনে অটল এবং আপসহীন থাকবো। নির্বাচন কমিশনের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার ভাণ্ডারের অণুসরণীয় দিক নির্দেশনা কাজে লাগাবো এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের দক্ষতা ব্যবহার করবো। এসব করতে গিয়ে আমরা সরকার, সব রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, সংবাদমাধ্যম এবং জনগণের সহযোগীতা কামনা করছি।
কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আপনার সম্পৃক্ততা আছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, শপথ নেওয়ার পর থেকে কোনো দলের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কোনোদিন কোনো রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী বোর্ডেও কাজ করিনি। জনতার মঞ্চের সঙ্গে যে সম্পৃক্তার কথা বলা হচ্ছে-তা মিথ্যা।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এখানে সরকারের প্রভাব বিস্তার করার কোনো সুযোগ নেই। কোনো সরকার, কোনো দল বা কারো দ্বারা কখনও প্রভাবিত হবো না।
তিনি বলেন, মাত্র দায়িত্ব নিয়েছি। তাই ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করবো। এছাড়া তাদের সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নেবো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কখন কি সংলাপের প্রয়োজন আছে কি না।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম ও ব্রি জে (অব.) শাহাদত হোসেন, ইসি সচিব মুহাম্মদ আবদুল্লাহসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বিকেল ৩টার দিকে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা কমিশন সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করান। কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে কে এম নুরুল হুদাকে সিইসি করে পাঁচ সদস্যের কমিশন নিয়োগ দেন। বর্তমান কমিশনের মেয়াদ রয়েছে ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে তারা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছাড়াও ৬০ হাজারেরও বেশি স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্পন্ন করবেন।
শপথ নেওয়ার পর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে প্রথমে সিইসি পরে অন্য নির্বাচন কমিশনাররা নির্বাচন ভবনে প্রবেশ করেন। তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা। এরপর সবাই সিইসি’র কক্ষে গিয়ে স্বাক্ষর করার মধ্য দিয়ে কাজে যোগদান করেন।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন দেশের দ্বাদশ নির্বাচন কমিশন।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন ভবনে নতুন সিইসি-ইসিদের বরণ
শপথ নিলো নুরুল হুদা কমিশন
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৭/আপডেট ১৮১৬
ইইইডি/আইএ