একুশে পদকপ্রাপ্ত বাউল-সম্রাট শাহ আবদুল করিমের একমাত্র ছেলে বাউল নূর জালালের অভাবের কথা এগুলো।
বিশ্বজুড়ে শাহ আবদুল করিমের গান সমাদৃত।
বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ছিল শাহ আবদুল করিমের ১০১তম জন্মদিন। আগের দিন গত মঙ্গলবার সিলেটের লাইব্রেরি ঘুরে ঘুরে বাবার বই বিক্রির টাকা তুলছিলেন নূর জালাল। কিন্তু লাইব্রেরির মালিক এ সামান্য ক’টি টাকার জন্য তাঁকে বারেবারে ঘুরিয়েছেন। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়েছিলেন সেখানে।
এমন সময় দূর থেকে তাঁকে দেখা। তারপর কাছে গিয়ে জানা গেল টাকার জন্যই লাইব্রেরির মালিকের সঙ্গে কথা বলছেন।
কোনো কোনো লাইব্রেরি-মালিক ফোন করে তাঁর কাছ থেকে বই নিলেও পরে সব বেমালুম ভুলে যান। প্রাপ্য টাকার কোনো হিসেব পান না নূর জালাল। বইয়ের জন্য সিলেট শহরে এসে লাইব্রেরিতে টাকা পাবার জন্য ঘুরতে তাঁর আত্মসম্মানে লাগে।
অভাব তাঁর পিছু ছাড়েনি। অভাবের কথা জানার আগ্রহ দেখালে নুর জালাল ফিরে গেলেন আগেকার কথায়। বাবার গানের লাইন তুললেন, "১২ মাস কিনিয়া খাই/ তেল আনলে লবণ নাই/ কি করে ইজ্জত বাঁচাই/ পাইনা ভাবিয়া/ ঠেকলাম ভবের বোঝা লইয়া। "
তারপর একান্তে বসে কথা বললেন বাংলানিউজের সঙ্গে।
বাউল নূর জালাল বললেন, ‘'বাবা আমাকে দুই আইল জমি কিনে দিয়ে যাননি। আমার কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য নাই। বাবা বেঁচে থাকার সময়ই আমার মা বিনা চিকিৎসায় মারা গিয়েছিলেন। ২০০১ সালে বাবা একুশ পদক পাওয়ার পরও বাবা কেমন আছেন সে-খবর কেউ রাখে নি!'’
‘'সিলেটের ডাক্তার নাসিম সাহেব তাঁর হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে এগিয়ে না এলে মায়ের মতো বাবারও মৃত্যু হতো। '’
‘’বাবার লেখা 'আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম' এখন পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। প্রতিদিন দেড়শো থেকে দুইশো মানুষ আসে বাড়িতে। তাদের বসতে দেয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। বাবার সমাধিও অরক্ষিত অবস্থায় আছে। বাবার ব্যবহৃত জিনিসপত্র রক্ষণাবেণের কোনো ব্যবস্থা নেই। ’’
ক্ষোভের সঙ্গে আরও জানালেন, ‘‘প্রতিটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানি বাবার গান ওয়েলকাম টিউনস হিসেবে ব্যবহার করছে। কিন্তু কোনো রয়ালিটি দেয় না। আবেদন করেও কোনো লাভ হয়নি। ’’
এখন এমনভাবেই দিন কাটছে তার। টাকার জন্য ঘুরতে হয় লাইরেরির মালিকদের পিছু পিছু। কখনও পাওয়া যায়। কখনও যায় না।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৭
এসএ/জেএম