আন্তর্জাতিকভাবে যাতে এই দিবসটি পালিত হয় সেজন্য আমরা বিভিন্ন দেশের কাছে গণহত্যা সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত সরবরাহ করব। ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস, এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে দশম জাতীয় সংসদের ১৪তম অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ পাকিস্তানের জুনায়েদ আহমেদের বই ‘ক্রিয়েশন অব বাংলাদেশ: মিথস এক্সপ্লোডেড’-এর প্রতিবাদ জানান।
ওই বইতে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দ্বারা এদেশের গণহত্যাকে মুক্তিবাহিনীর হত্যাকাণ্ড হিসেবে দেখানোর চেষ্টা হয়েছে। বইটির নিন্দা জানিয়ে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস ঘোষণার দাবি করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ঘোষণা ও পালন প্রসঙ্গে একমত প্রকাশ করেন এবং এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানান।
সরকারের পক্ষ থেকে পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিকভাবে বইটি প্রসঙ্গে প্রতিবাদ জানানো হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেন, পাকিস্তান একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা নিয়ে মিথ্যা প্রপাগান্ডা দিয়ে বই ছাপিয়ে সেটা আবার বাংলাদেশে পাঠায়, এত বড় দুঃসাহস তাদের কোথা থেকে আসলো?
তিনি বলেন, পাকিস্তান এখন এই বই লিখে তাদের কৃতকর্ম, গণহত্যা, মানুষকে গুলি করে মারার ঘটনাগুলোকে এখন উল্টো মুক্তিবাহিনীর উপর দোষ দিয়ে, নিজেদের দোষ ঢাকার চেষ্টা করছে। এটা পাকিস্তানের জন্য লজ্জার বিষয়। তারা এই লেখার সাহস কোথা পেল?
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের অত্যন্ত দুভার্গ্য। এখানে একজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী আছেন। যার স্বামী অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। সেই তিনি মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহিদ হয় নাই বলে প্রশ্ন তোলেন। যে কথাটি দেশের প্রত্যেকটি মানুষ জানে, সবাই স্বীকার করে নিয়েছে। আর সেখানে এই বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া সেই গণহত্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সেই প্রশ্ন তুলেই মনে হয়, বিদেশি প্রভুদের সুযোগ করে দেওয়া বোধহয় তার ইচ্ছা ছিল। তারই প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ মার্চসহ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরে বলেন, আজকে তারা এই গণহত্যাকে এখন মুক্তিবাহিনীর ওপর চাপাতে চাচ্ছে। এটা কোনোদিনই গ্রহণযোগ্য হবে না। পাকিস্তান গণহত্যা চালিয়ে যে অপরাধ করেছে সেজন্য তাদের আমরা বারবার বলেছি, তোমরা মাফ চাও। কিন্তু তারা মাপ তো চায়নি বরং উল্টা এখন তাদের অপকর্মকের দায়বার আমাদের মুক্তিবাহিনীর ওপর তুলে দিচ্ছে। এটা কখনও মেনে নেওয়া হবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা এই বই তৈরি করেছে। আমি তাদের ধিক্কার জানাই। আমাদের এখান থেকে কারা তাদের মদদ দেয়, এটাও মনে হয় দেশবাসীর জানা উচিত। দেশবাসীকেও এটা দেখতে হবে। কারা বিদেশি প্রভুদের ভুলতে পারে নাই। কারা এখনও বিদেশি প্রভুদের তোষামোদী করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তারা গণহত্যা শুরু করেছিল। এই বিষয়টি নিয়ে আমি মনে করি, আমাদেরই উদ্যোগে নিতে হবে। ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে আমাদের গ্রহণ করতে হবে। রজন্য যথযাথভাবে একটি প্রস্তাব আমরা সংসদে আনতে পারি। সেই সাথে সাথে আমরা বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক সংস্থার কাছেও সমস্ত তথ্য দিয়ে এটার প্রচার করব এবং দাবি জানাব। যাতে করে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা হয়।
যুদ্ধাপরাধীদের জন্য যাদের মায়া কান্না সেই শক্তি আবার অপপ্রচার শুরু করেছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে। তারা বই প্রকাশ করে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ঘোষণার যে প্রস্তাব দিয়েছেন। একই প্রস্তাব একজন সংসদ সদস্যও দিয়েছেন। আগামী অগ্নিঝরা মার্চের যে কোনো দিনে সংসদে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।
** ‘পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা ঢাকতে দুঃসাহস দেখানে হচ্ছে’
** নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন করার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৭/আপডেট: ২০৫৫ ঘণ্টা
এসএম/এসকে/আরআইএস/এমজেএফ