সর্বোচ্চ দরদাতা বনে যান পছন্দের ঠিকাদার। মেহগনি, শিশু, বকনাসহ ৩৮টি মূল্যবান গাছের মালিক হন ঠিকাদার খোকন মিয়া।
এভাবে প্রায় বারো লাখ টাকার গাছ মাত্র দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়। সমঝোতা মাফিক লুটপাটের টাকার একটি নির্দিষ্ট অংশ প্রধান কর্মকর্তার পকেটে যায় বলে অভিযোগ মিলেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে বগুড়ার শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চারদিক সীমানা প্রাচীর বেষ্টিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য গাছ রয়েছে। প্রবেশ পথের প্রধান ফটক থেকে শুরু করে দক্ষিণ প্রাচীর ঘেঁষে অনেক পুরানো একাধিক মেহগনি গাছ ছিল। পশ্চিমে অবস্থিত মসজিদের পাশেও ছিল এমন গাছ। ইতোমধ্যেই বড় বড় বেশ কয়েকটি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। তাদের নিথর দেহ পড়ে রয়েছে মাটিতে। কতগুলোর ডালাপালা কেটে ন্যাড়া বানিয়ে ফেলা হয়েছে।
বাকি গাছগুলো কেটে ফেলতে অনেক গাছের গোড়ায় কোপ বসানো হয়েছে। গাছগুলো কাটিয়ে ফেলতে দ্রুত হাত চালিয়ে যাচ্ছেন নির্ধারিত শ্রমিকরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের লাগানো ৩৮টি মূল্যবান গাছ বিক্রির উদ্যোগ নেন স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোখলেছুর রহমান। ঠিক করেন অত্র প্রতিষ্ঠানে খাদ্য সরবরাহের কাজে নিয়োজিত পছন্দের ঠিকাদার খোকন মিয়াকে।
সে মোতাবেক তিনি কাগজে-কলমে দরপত্র আহ্বান করেন। তাতে অংশগ্রহণকারী হিসেবে ১৪-১৫ জন ঠিকাদারকে কাগজে-কলমে দেখান তিনি। পাশাপাশি সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ঠিকাদার খোকন মিয়ার কাছে মাত্র ১ লাখ ৪৬ হাজার টাকায় গাছগুলো বিক্রি করেন। গেলো ৮ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) গাছগুলো বিক্রি করা হয়।
আমির হোসেন, জমির আলী, কফিল উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন কাঠ ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে জানান, মেহগনি গাছের কাঠের দাম অত্যন্ত বেশি। গাছগুলোও অনেক পুরাতন। শিশু গাছগুলো অনেক বড় বড়। বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী ১২ লাখ টাকার কমে এসব গাছ কেনা সম্ভব নয় বলেও যোগ করেন এসব ব্যবসায়ীরা।
ঠিকাদার খোকন মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমার নামে কাঠ ব্যবসায়ী লতিফ ও রিপন নামে দুইজন ওপেন টেন্ডারে ৩৪টি গাছ কিনেছেন। গাছগুলো কম মূল্যে কেনা হলেও সবাইকে ম্যানেজ করতে অনেক টাকা গুণতে হয়েছে।
এছাড়া মেহগনি চারটি বাদে বাকি গাছগুলো তুলনামূলক অনেক ছোট। তাই গাছগুলো সঠিক দামে কেনা হয়েছে বলে দাবি করেন এই ঠিকাদার।
উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোখলেছুর রহমান তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, যথাযথ নিয়ম মেনে দরপত্র আহ্বান এবং সর্বোচ্চ দরদাতার কাছে গাছগুলো বিক্রি করা হয়েছে।
এছাড়া গাছগুলোর দাম নির্ধারণ করেছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা। তাই গাছ বিক্রির ক্ষেত্রে ঠিকাদারের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না বলেও দাবি করেন এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ০৩১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৭
এমবিএইচ/আইএ