প্রতিদিন বিকেলে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোডের রেলক্রসিংয়ে কাছে রেল লাইনের খুব কাছে ভিক্ষা করেন। তবে শুধু ভিক্ষা করাই নয়, রেলক্রসিং দিয়ে পারাপাররত লোকজনকেও সতর্ক করেন তিনি।
কথা হয় কুড়িল বিশ্বরোডের রেলক্রসিংয়ের পাশে শুয়ে ভিক্ষারত অরু’র সঙ্গে। প্রায় ১০ বছরে আগের কথা, ভালোই চলছিল অরুণা-অরু’র সংসার। হঠাৎ ট্রেনে কাটা পড়ে তার দু’পা। সেই থেকে পঙ্গু অরুকে বেছে নিতে হয়েছে ভিক্ষাবৃত্তি। এখন ভিক্ষার টাকায়ই চলে তার আট সদস্যের সংসার।
অরু মিয়া ভিক্ষুক সিন্ডিকেটের লোক কিনা জানার জন্য তাকে নানা প্রশ্ন করি। এক পর্যায়ে নিশ্চিত হওয়া গেল কোনো সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত নন তিনি। রেললাইনের পাশেই ভিক্ষা করেন। কারণ রেললাইনেই অবসাবধানতার কারণে ট্রেনে তার পা কাটা গেছে। সে কারণে ভিক্ষার পাশপাশি মানুষকে সচেতন করেন ক্রসিং পার হওয়ার সময়। যেন আর কারো জীবন না যায়। তার মতো পঙ্গু যেন আর কেউ না হয়।
অরু’র গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। ঢাকার কুড়িলের এক বস্তিতে ছেলেমেয়েসহ আটজনের সংসার তার। তার একার আয়ে চলে পুরো পরিবার। দু’পা হারিয়ে ভিক্ষাই আয়ের একমাত্র পথ তার।
অরু জানালেন, দর্জির কাজ করতেন তিনি। ট্রেনে দু’পা কাটা পড়ার পর কেউ আর কাজ দিতে চায় না। আর পা ছাড়া দর্জির কাজ করাও প্রায় অসম্ভব। তাই পরে বাধ্য হয়ে ভিক্ষাবৃত্তিকেই বেছে নিতে হয় তাকে। কোনো দিন ভিক্ষা না করলে না খেয়ে থাকতে হয় পরিবারের সবাইকে।
অরু মিয়ার চার মেয়ে। প্রতিদিন রেল ক্রসিংয়ে সকালে তার স্ত্রী রুনা বেগম তাকে পৌঁছে দিয়ে যান। সন্ধ্যায় আবার নিয়ে যান এসে।
‘রেলক্রসিংয়ে ভিক্ষা করেন কেনো? --জানতে চাইলে অরু মিয়া বলেন, ‘দুই কাজ এক সাথে হয়। ভিক্ষা করা হয় আবার পথচলতি লোকদেরও সতর্ক করা যায়। রেলদুর্ঘটনার হাত থেকে কাউকে বাঁচাতে পারলে মরেও শান্তি পাবো। আমরা মতো কাউকে যেন ভিক্ষা করতে না হয়। পঙ্গু হয়ে যেনো কারো বোঝা হতে না হয়। ’’
অরু মিয়া জানান, চিকিৎসার জন্য বাপের ভিটা পর্যন্ত বিক্রি করতে হয়েছে তাকে। শেষ সম্বল বলে কিছুই আর নেই। পঙ্গু হওয়ার পর কোনো উপায় না দেখে শহরে আসেন ভিক্ষার জন্য। । তারপর থেকেই রেললাইনের পাশেই ভিক্ষা করেন। এছাড়া এখানে রেললাইনের ধারে ভিক্ষা করলে কাউকে চাঁদা দিতে হয় না। আগে ফার্মগেট এলাকায় ভিক্ষা করার সময় তাকে চাঁদা দিতে হতো।
সেখানে পুলিশ ও স্থানীয় লোকেদের চাঁদা দিতে হতো বলেও জানান অরু।
রাজধানীর কমলাপুর স্টেশন থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি ট্রেন এই কুড়িল রেলক্রসিং অতিক্রম করে যায়। উড়ালসেতু হওয়ার পর থেকে রেললাইনের উপর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ থাকায় এই ক্রসিংয়ে ট্রেন যাওয়ার সময় কোনো ধরনের সিগনাল দেওয়া হয় না। অননুমোদিত এই লেভেল ক্রসিংয়ে পারাপারের সময় অনেক দুর্ঘটনায় ঘটে বলে জানান স্থানীয় লোকজন।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৭
আরএটি/বিএস/জেএম