বিমানবন্দরে এসে মশার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন, এমন যাত্রী খুঁজে পাওয়া মুশকিল। মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন দায়িত্বরত কর্মকর্তারাও।
ফলে বিদেশি যাত্রীদের কাছে দেশের ভাবমূর্তি যেমন ক্ষুণ্ন হচ্ছে, তেমনিভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও দেশের সুনাম নষ্ট হচ্ছে।
প্রতি বছরই বিমানবন্দরের আশপাশের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা, মশা-মাছি নিধন ও অভ্যন্তরের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে বড় অংকের বাজেট হয়। আবার বিমানবন্দরকে বেডরুমের মতো পরিষ্কার রাখতে প্রতি মাসে খরচ হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। ২০০৫ সাল থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার এসব কাজ করছে বেসরকারি কোম্পানি এ কে ট্রেডার্স। কিন্তু তাদের কাজে গাফিলতির অভিযোগ রয়েছে।
প্রতিদিন দেশি-বিদেশি শতাধিক ফ্লাইট ওঠা-নামা করে শাহজালাল বিমানবন্দরে। ভ্রমণ সম্পন্ন করতে যাত্রীদের ইমিগ্রেশন, কনভেয়ার বেল্ট, কাস্টমস হল ও গ্রিন চ্যানেল অতিক্রম করতে হয়। কিন্তু এসব স্থানে মশার উৎপাত এতোটাই যে, দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও যাত্রীরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। দিনে মশার দাপট কম থাকলেও সন্ধ্যা নামতেই পুরো বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় মশার হাতে।
এদিকে বিমানবন্দরের ডিপারচার লাউঞ্জ রয়েছে কয়েকটি খাবারের দোকান। দোকানগুলোতে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় খাবার কিনে লাউঞ্জে বসে খান যাত্রীরা। আর খাবারের ময়লা ডিপারচার লাউঞ্জে পড়ে থাকলেই হানা দেয় বেড়াল। তখন যাত্রীদের পড়তে হয় বিড়ম্বনায় আর ছোট বাচ্চা থাকলে তো কথাই নেই।
সরেজমিনে শাহজালাল বিমানবন্দরে গেলে ইংল্যান্ড প্রবাসী নিঝুম মজুমদার বাংলানিউজকে জানান, তার জন্ম বাংলাদেশে, কিন্তু বেড়ে ওঠাসহ সবকিছুই ইংল্যান্ডে। বর্তমানে ইংল্যান্ডে আইনজীবী হিসেবে কর্মরত আছেন।
তিনি বিশ্বের ২০টির বেশি দেশ ভ্রমণ করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের বিমানবন্দরের মতো এতো নোংরা কোনো বিমানবন্দর দেখেননি। বাংলাদেশের চেয়ে অনেক গরিব দেশ আছে। কিন্তু তাদের বিমানবন্দরও ঝকঝকে পরিষ্কার।
নিঝুমের অভিযোগ, ‘শাহজালালে যাত্রীরা যখন ইমিগ্রেশন পার হয়ে ডিপারচার লাউঞ্জে ফ্লাইটের জন্যে অপেক্ষা করেন, তখন সিলিংয়ের ওপর দিয়ে লাফিয়ে নিচে পড়ে বেড়াল। খাবারের ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট কোনো বিন না থাকায় যাত্রীরা চেয়ারের নিচে রেখে দিচ্ছেন। নোংরা বেড়ালগুলো লাউঞ্জে সেই খাবার খেয়ে পরিবেশকে আরও দূষিত করছে’।
‘ডিপারচার লাউঞ্জের সিলিংও ভাঙা এবং বের হয়ে আছে বিভিন্ন লাইনের তার। মনে হয়, এগুলো কতো বছরের পুরনো! আর মশা তো পুরো বিমানবন্দর জুড়েই। ফলে অন্য দেশের নাগরিক প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ সম্পর্কে তার নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে। যা বাংলাদেশের সুনাম নষ্ট করছে’।
শাহজালাল বিমানবন্দরের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, বিমানবন্দর জুড়ে এখন মশার দাপট। তাদের উপদ্রব এতোটাই বেড়েছে যে, ঠিকমতো মনোযোগ দিয়ে কাজও করা যায় না। রাতে যাদের ফ্লাইট থাকে, তারা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। শুধু তাই নয়, এয়ারক্রাফটের দরজা খুললেই শত শত মশা ভেতরে প্রবেশ করতে থাকে। আবার ডিপারচার লাউঞ্জের সিলিংয়ের ওপরে দেড় শতাধিক বেড়ালের বসবাস। সিলিংয়ের ওপর থেকে লাফ দিয়ে সেগুলোর নিচে পড়ার মতোও ঘটনা ঘটছে।
তাদের মন্তব্য, একদিন পরপর ফগার দিয়ে ওষুধ ছেটালে কি আর মশা নিধন করা যায়?
বিমানবন্দরের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এবং সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এহসানুল গণি চৌধুরীর মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৪ ঘন্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৭
এসজে/এএসআর