দেশি জাতের মহিষের বাছুরের গড় জন্মকালীন ওজন যেখানে ২০-২৫ কেজি সেখানে প্রায় দ্বিগুণ ওজনের এই মহিষের বাছুরের জন্ম দেবার ঘটনায় দেশের প্রাণিসম্পদ নিয়ে নতুন সম্ভাবনার বার্তাই দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
দীর্ঘ সাত বছরের গবেষণায় এই সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে দেশের গবেষক ও প্রাণি বিজ্ঞানীরা।
প্রতিষ্ঠানটির প্রথম নারী মহাপরিচালক ড. তালুকদার নূরুন্নাহারের নেতৃত্বেই সাত বছর আগে এই নিয়ে শুরু হয় গবেষণা কার্যক্রম।
দেশে যখন অপর্যাপ্ততার কারণে গরুর দুধের দাম বাড়ছে। মাংসের বাজার আকাশছোঁয়া তখন মহিষ নিয়ে সম্ভাবনার আরো অনেক গল্পই শোনালেন এই গবেষক। ইতালিয়ান মেডিটারেনিয়ান মুররাহ আর পাকিস্তানি নিলিরাভি জাতের মহিষের সিমেনের মাধ্যমে দেশি জাতের মহিষের জাতোন্নয়নের এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন হলে কেবলমাত্র মহিষ থেকেই দেশে দ্বিগুণ দুধ ও মাংস উৎপাদন হবে বলে জানিয়েছেন ড. তালুকদার নূরুন্নাহার।
‘রাতের মহিষ সকালেই রূপ নেয় গরুতে। কসাইয়ের হাত ধরে মহিষ হয়ে যাচ্ছে গরু। অজ্ঞতা আর অগোচরে এই প্রতারণার মাসুল হিসেবে আমরা কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই মহিষের মাংস খাচ্ছি গরু হিসেবেই। দামটাও গুনছি বাড়তি। অথচ গরুর তুলনায় মহিষের উৎপাদন খরচ যেমন কম, তেমনি মহিষের মাংসের দামও কম। আবার গরুর তুলনায় মহিষের মাংসের গুণাগুণও অনেক বেশি।
আমাদের অজ্ঞতা থেকেই আমরা মহিষের মাংসের চাহিদার কথা জানাই বিক্রেতাদের। এ অবস্থা থেকে সরে আসলে কসাইরা আর লুকোচুরি না করে কম দামেই মহিষের মাংস বিক্রি করতো- জানান বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক (ডিজি) ড. তালুকদার নূরুন্নাহার।
তিনি জানান, গরুর মাংসের তুলনায় মহিষের মাংসে কোলেস্টোরেল ও চর্বি কম থাকায় হৃদরোগের ঝুঁকিও কম। আবার শিশুদের উপকারি ল্যাকটোজের পরিমাণ-ও বেশি মহিষের দুধে।
গবেষণা দলে থাকা অপর সদস্য ড. গৌতম কুমার দেব বাংলানিউজকে জানান, আমাদের পাশের দেশেও ৬০-৬৫ ভাগ দুধ উৎপাদিত হয় মহিষ থেকে। সেখানে এতদিন আমাদের দেশে বলতে গেলে এই প্রাণিটি এক ধরনের অবহেলার মধ্যেই ছিলো। দেশে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা হলে এমনিতেই মহিষের মাংসের প্রসার হবে। মানুষ তুলনামূলক কম দামে অধিক গুণাগুণ সম্পন্ন মাংসও পাবে মহিষের মাধ্যমে। যার কারণে দেশে আমিষের যে ঘাটতি তা-ও স্বল্প সময়ের মধ্যে পূরণ করা যাবে। আমরা মাত্র চার মাসের বিশেষ যত্নে তিন বছর বয়সী মহিষের ওজনকে বাড়িয়ে ৫’শ ৮৫ কেজিতে উন্নীত করতে পেরেছি।
কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে দেশের উত্তরাঞ্চল, চরাঞ্চল ও হাওড়াঞ্চলে স্বল্প খরচে মহিষ পালনের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন,আমাদের সাফল্যকে কাজে লাগানো গেলে দেশে আমিষের উৎস যেমন বাড়বে। তেমনি সবার জন্যে পুষ্টি ও আমিষের উৎস হিসেবে কমে আসবে গরু মহিষের দাম। এ জন্য প্রয়োজন সকলের সচেতনতা। যোগ করেন এই গবেষক।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৭
আরআই