মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৬টা থেকে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত আন্তঃজেলার বিভিন্ন রুটে বাস চলাচল করে। তবে বেলা ১০টা নাগাদ সব রুটের বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয় পরিবহন নেতারা জানিয়েছেন, সারাদেশে একযোগে শুরু হওয়া ধর্মঘটের সঙ্গে তারা একাত্মতা প্রকাশ করে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে।
এদিকে, সকাল থেকে শুরু হওয়া অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের প্রথম দিনেই অচল হয়ে পড়েছে রাজশাহী। ধর্মঘটের কারণে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ থাকায় সড়ক পথে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দূর-দূরান্তে নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিয়েও যানবাহন না পেয়ে পথে পথে যাত্রীদের বিভিন্ন হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামরুজ্জামান বাস টার্মিনাল, ঢাকা বাস টার্মিনাল ও নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, এখান থেকে সকাল ১০টার পর কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। সকাল থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার উদ্দেশে মহানগরীর শিরোইল, ভদ্রা ও রেলগেট বাসস্ট্যান্ডে সাধারণ যাত্রীদের অপেক্ষা করতে দেখা যাচ্ছে। বাস না পেয়ে কেউ বিকল্প যানবাহনে গন্তব্যে রওনা হচ্ছেন। কেউবা বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। অনেককে আবার রাজশাহী রেল স্টেশনে ভিড় করতে দেখা যাচ্ছে। ধর্মঘটের ফলে চাপ পড়েছে ট্রেনে। তবে সাপ্তাহিক বন্ধ থাকায় মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী থেকে ঢাকার কোনো আন্তঃনগর ট্রেন নেই। এতে আরও দুর্ভোগে পড়েছেন রাজধানীমুখী যাত্রীরা। তবে অন্যান্য রুটের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকায় সিট না পেলেও স্ট্যান্ডবাই টিকিট নিয়ে রওনা দিচ্ছেন যাত্রীরা।
এছাড়া রাজশাহী থেকে রংপুর, কুড়িগ্রাম, বগুড়া, নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটে বিআরটিসি বাস চলাচল করায় ভুক্তভোগীরা মহানগরীর কুমারপাড়া ডিপো ও রেলগেট বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছেন। তবে সব সময় বিআরটিসির বাস না থাকায় এবং বিআরটিসির বাস কম থাকায় দুর্ভোগ কাটছে না। ফলে মাইক্রোবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও দূরের যাত্রার জন্য রেলপথকেই বেছে নিচ্ছেন অনেকে।
রাজশাহীর শিরোইলে থাকা ঢাকা বাস টার্মিনালে আসা মহানগরীর উপশহর এলাকার শফিকুল ইসলাম বলেন, সকালে জরুরি কাজে তার ঢাকা যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু টার্মিনালে আসার পরে তিনি জানতে পারেন পরিবহন ধর্মঘট চলছে। বিকল্প হিসেবে তিনি দুপুরের ট্রেনে ঢাকা যাওয়ার কথা ভাবছিলেন। কিন্তু স্টেশনে গিয়ে দেখেন দুপুরে ট্রেন নেই। যেতে হবে রাতের ট্রেনে। সেখানেও আবার টিকিট নেই। তাই ১ মার্চ সকালের সিল্কসিটি ট্রেনের টিকেট কেটে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
পরিবহন শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে এ দুর্ভোগের জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
সাইলা ইসলাম নামের অপর এক যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, সকালে ঢাকা যাওয়ার জন্য হানিফ কাউন্টার থেকে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আগ্রিম টিকিট নিয়েছিলেন। টিকিটে মোবাইল নম্বর ছিলো। তবুও বাস চলাচল না করার কথা কাউন্টার থেকে জানানো হয়নি। আকস্মিক এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে বাস কাউন্টারের মধ্যে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তিনি।
এদিকে, পরিবহন ধর্মঘটের সমর্থনে সকালে শিরোইল বাস টার্মিনালে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন পরিবহন শ্রমিকরা। বিক্ষোভ মিছিল থেকে তারা দণ্ডপ্রাপ্ত বাস চালক জামির হোসেনের নিশর্ত মুক্তির দাবি করেন। এসময় সড়ক দুর্ঘটনার চালককে সাজা দেওয়ার আইন সংশোধনেরও দাবি জানান তারা।
রাজশাহী জেলা বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কামাল হোসেন রবি জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকে দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। পরিবহন মালিক সমিতি এবং মোটরশ্রমিক ইউনিয়ন ও ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নসহ শ্রমিক সংগঠনগুলোর সিদ্ধান্তে রাজশাহীতেও ধর্মঘট চলছে।
দাবি না মানা পর্যন্ত এ ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে বলেও জানান এ শ্রমিক নেতা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৭
এসএস/জেডএস