স্থানীয়দের অভিযোগ, সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করার আগে বালু দিয়ে নিচু জমি ভরাট করে বিশাল সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেন এ নেতা। মালিকদের কাছ থেকে জমি লিখে না নিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো প্রত্যেকের জমির কাগজ বানিয়েছেন আসলামুল হক।
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিন ওয়াসপুর গেলে বাংলানিউজের কাছে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে জোর করে জমি দখলের অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।
ওয়াসপুর জামে মসজিদ কমিটির এক সদস্য বলেন, মসজিদের প্রায় দেড় একর জমি ছিলো। চার কোটি টাকা দাম ঠিক করে ওই জমি কিনে নেন আসলামুল হক। কিন্তু তিনি মাত্র ৮০ লাখ টাকা দিয়েছেন। বাকি টাকা চাইতে গেলে তিনি বলেন, টাকা হবে না, এই টাকা দিয়ে আমি অন্য একটি মসজিদ করবো। যা দেওয়ার তা তো আগেই দিয়েছি।
ওয়াসপুরের স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা বাংলানিউজের কাছে আসলামুল হকের নানা অপকর্মের কথা জানান। কিন্তু কে লড়বে তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সঙ্গে? এর চেয়ে ভালো যেমন আছি তেমন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওয়াসপুরের একজন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দুই বিঘা জমি ছিলো। যার প্রতি কাঠার দাম এখন প্রায় ১৫ লাখ টাকা করে। সেই হিসেবে দাম কতো চিন্তা করেন? এছাড়া আমরা পাঁচ ভাই তিন বোন। কিন্তু এমপি আসলামুল হক হঠাৎ করে সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে আমাদের নিচু জমিতে বালি ফেলা শুরু করেন। এক পর্যায়ে আমাদের বলা হয়, জমি চাই নাকি জীবন। তখন থেকে জমির মায়া ত্যাগ করেছি।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আসলামুল হকের দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী, তিনি ও তার স্ত্রী মাকসুদা হক ৪ একর ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ জমির মালিক। এসব জমির দাম তখন দেখিয়েছেন ২০ লাখ ৬৯ হাজার ৫০০ টাকা। আর দশম সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ১ ডিসেম্বর জমা দেওয়া হলফনামায় উল্লেখ করেছেন, আসলামুল হক ও তার স্ত্রী এখন ১৪৫ দশমিক ৬৭ একর (১৪ হাজার ৫৬৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ) জমির মালিক। জমির দাম উল্লেখ করা হয়েছে এক কোটি ৯২ লাখ ৯৯ হাজার ৫০০ টাকা।
অপরদিকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে সংসদ সদস্য আসলামুল হককে তলব করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। নির্বাচনী হলফনামায় তার সম্পদের হিসাবে ব্যাপক পরিবর্তন হওয়ায় তাকে তলব করা হয়। এসময় তিনি ১৪৫ একরের জায়গায় ১ দশমিক ৪৫ হবে বলে দুদককে বোঝান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আইনের ফাঁক গলে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে দুদককে ফাঁকি দিয়ে পার পান আসলামুল। ২০১৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর আসলামুল হককে অব্যাহতি দেয় দুদক।
শুধু তাই নয়, আসলামুল হক সংসদ সদস্য হওয়ার পর শুধু তার অর্থবিত্ত বাড়েনি, বেড়েছে তার শিক্ষাগত যোগ্যতাও! ২০০৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি ছিলেন অষ্টম শ্রেণি পাস। আর এখন বিবিএ পাস তিনি।
২০১২ সালে পত্রিকায় ফলাও করে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ৭৬ বিঘা জমি বিক্রি করেন তিনি। যার মধ্যে তার মালিকানাধীন মায়িশা গ্রুপের নামে থাকা সাভারে (মহাসড়কের পাশে) ৫৭ বিঘা, আমিনবাজারে (মহাসড়কের পাশে) ১৪ বিঘা, মিরপুর এশিয়ান হাইওয়ের পাশে ৭১ কাঠা ও দারুস সালাম থানার গৈদারটেক এলাকায় ৩১ কাঠা জমি বিক্রি করেছেন বলে জানা যায়।
অপরদিকে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও প্রতারণার অভিযোগে ১৯৯৬ সালে আসলামুল হকের বিরুদ্ধে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, সাভার, পল্টন ও মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে আলাদা পাঁচটি মামলা হয়। একই বছর মিরপুর থানায় তিনটি জিডি (সাধারণ ডায়েরি) হয় তার বিরুদ্ধে।
অবশ্য আসলামুল হক ২০০৮ সালের নির্বাচনী হলফনামায় বলেছেন, তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা ছিলো, তিনটিতেই তিনি আদালত থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। তবে ২০১৩ সালের হলফনামায় পাঁচটি মামলার কথাই উল্লেখ করেন তিনি। এবং সবগুলোতে খালাস পান বলে লিখেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, তিনি তার কর্মজীবনের শুরুতে অর্থাৎ, আশির দশকে যাত্রীবাসের কাঠামো (বডি) তৈরির কাজ করতেন। এরপর নব্বইয়ের দশকে এলাকায় জমি-বেচাকেনায় মধ্যস্থতার কাজ করতেন। এরইমধ্যে নিজেই গড়ে তোলেন মায়িশা প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট নামে একটি আবাসন কোম্পানি। আর এখন তা হয়েছে মায়িশা গ্রুপ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮,২০১৭
এসজে/এএ