ঢাকা, মঙ্গলবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

গরু পালনে সফল তিন বন্ধু

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৭
গরু পালনে সফল তিন বন্ধু গরু পালনে সফল তিন বন্ধু

ফেনী: শরীফ, সুমন ও মুকুল তিন বন্ধু। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাস করার পর চাকরির জন্য কারো দ্বারস্থ হননি তারা। গ্রামের একখণ্ড জমিতে দু’টি গরু বাছুর নিয়ে শুরু করেন ডেইরি খামার। চার লাখ টাকা বিনিয়োগ করে করে তিন বন্ধুর সেই ডেইরি খামারের এখন সম্পদের পরিমাণ প্রায় কোটি টাকা।

২০১২ সালে ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার কামাল্লা গ্রামে এই ডেইরি ফার্মটি গড়ে তোলেন তিনি বন্ধু। তখন তাদের খামারে মাত্র দু’টি বাছুর ছিল।

এখন ফার্মে বিদেশি উন্নত জাতের দুধ ও মাংসের গরুর সংখ্যা ৫৬টি। এর বাজার মূল্য প্রায় ৯৫ লাখ টাকা। প্রতিদিন এ ফার্ম থেকে উৎপাদন হয় ২০০ লিটার দুধ। প্রতি লিটার দুধ বিক্রি হয় ৭০ টাকা করে। এ খামার থেকে প্রতিমাসে এখন লাখ টাকার উপরে লাভ হয়।

গরু পালনে সফল তিন বন্ধু

খামারী সাইফুদ্দিন আহমেদ মুকুল বাংলানিউজকে জানান, তিনি ও শরীফ হিসাব বিজ্ঞান, অপর বন্ধু সুমন তিতুমীর কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনায় মাস্টার্স শেষ করেন। ইচ্ছে করলেই তারা কোনো চাক‍রির চেষ্টা করতে পারতেন। কিন্তু তা তারা করেননি। তারা বিশ্বাস করতেন চাকরির চাইতে নিজেদের উদ্যোক্তা হওয়াই স্বাচ্ছ্যন্দের। আর সেই থেকেই তাদের পথচলা শুরু।

তাদের খামারটি এখন শুধু দুধ উৎপাদন করেই থেমে নেই, তৈরি করছে দুগ্ধ জাতীয় খাবার এবং পালন করছে মাংস উৎপাদনকারী গরুও। পুকুরে চাষ হচ্ছে মাছ।

তিন বন্ধু বলেন, বাংলাদেশের যুবকরা এ ধরনের খামার করে সহজেই নির্ভরশীল হতে পারে। মূলধন এ ক্ষেত্রে কোনো সমস্যাই না, শুরু করাটাই জরুরি।

ফেনী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবু আল মানসুর বাংলানিউজকে জানান, এই তিন যুবক বাংলাদেশের অন্য যুব সমাজের জন্যও আদর্শ হতে পারে। তারা তাদের কৃষি খামারে নিত্য নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার করে ব্যবসার উন্নতি করছে। শিক্ষিত যুবকরা কৃষি খাতে প্রযুক্তি ব্যবহার করে সহজেই এ খাতকে লাভজনক খাতে রূপান্তর করতে পারে।

গরু পালনে সফল তিন বন্ধু

তিনি আরও জানান, তিন খামারি নিয়মিতই জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কাছ থেকে সহযোগিতা নেয়।

সরেজমিনে খামারটি পরিদর্শন করে দেখা যায়, বেশ পরিপাটি তাদের খামার। প্রচুর খালি তৃণভূমি রয়েছে গরুদের চরার জন্য। বিদেশি জাতের গরুগুলো পালনের জন্য তারা আধুনিক উপায় কাজে লাগাচ্ছেন। খামারে নিয়োজিত কর্মচারীদের চাইতে এ যুবকরাই বেশি কাজ করছেন। তারা মনে করেন কাজের মধ্যে কোনো লজ্জা নেই। নিজের পরিশ্রমেই তারা সফল হতে চান।

খামারী সাইফুদ্দীন আহমেদ চৌধুরী মুকুল বাংলানিউজকে বলেন, এত সম্ভাবনা থাকার পরও খামার করতে নানা সমস্যায় পড়তে হয় যুবকদের। এর মধ্যে অন্যতম হলো বৈদ্যুতিক সংযোগ। শিল্প সংযোগ পেতে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। টানা তিন বছর চেষ্টা করেও একটি সংযোগ নেওয়া সম্ভব হয়নি। আর বৈদ্যুতিক সংযোগ ছাড়া খামার পরিচালনা করতে অনেক কষ্ট হয়।

গরু পালনে সফল তিন বন্ধু

তিনি আরও বলেন, এছাড়াও রয়েছে ঋণ প্রাপ্তিতে সমস্যা। ব্যাংকগুলোর ৫ শতাংশ লভ্যাংশে ঋণ দেওয়ার কথা থাকলেও তা আছে শুধু কাগজে কলমে। বাস্তবে তা হয় না। কৃষকরা যদি স্বল্প সুদে ঋণ পেত তাহলে খামার করতে আরও আগ্রহ পেত। সরকারের উচিত কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রযুক্তি এবং প্রশিক্ষেণের ব্যবস্থা করা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৭
এনটি/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।