ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

মার খেলো রোগী, রেহাই পেলো না লাশবাহী গাড়ি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৭
মার খেলো রোগী, রেহাই পেলো না লাশবাহী গাড়ি অ্যাম্বুলেন্সে পরিবহন শ্রমিকদের ভাঙচুর, ছবি: রানা

ঢাকা: ঘড়ির কাটায় তখন মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত দুইটা। অ্যাম্বুলেন্স গাবতলী থেকে মাজার রোডে আসতে ভয় পাচ্ছে পরিবহন শ্রমিকরা হামলা করতে পারে ভেবে। তখন অ্যাম্বুলেন্সের মাইক থেকে উচ্চস্বরে ঘোষণা আসছে ‘ভাই অ্যাম্বুলেন্সে মুমূর্ষু রোগী, আপনারা সহায়তা করুন, দয়া করে হামলা করবেন না।’

এর পরে পুরনো অ্যাম্বুলেন্সটাকে মাজার রোডে ঘিরে ধরে মিডিয়া কর্মীরা। চুয়াডাঙ্গা থেকে ডান পা ভাঙ্গা রোগী রশিদ তালুকদার আসছেন রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তির হওয়ার উদ্দেশ্যে।

প্রায় ৩০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন। কিন্তু গাবতলী আমিন বাজার ব্রিজ পার হয়েই অ্যাম্বুলেন্সের উপর হামলা- ভাঙচুর করে ধর্মঘটরত পরিবহন শ্রমিকরা। ভেঙে দেওয়া হয় অ্যাম্বুলেন্সের গ্লাস, আহত হন স্বজনেরা।
 

হাতের রক্ত গণমাধ্যম কর্মীদের দেখান আর পাশপাশি আল্লাহর নিকট বিচার প্রার্থনা করেন রোগীর স্বজনরা। ভাঙ‍া পায়ের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন অ্যাম্বুলেন্সে ঘুমিয়ে থাকা রোগী। অ্যাম্বুলেন্সের গ্লাস ভেঙে রোগীল মুখ ক্ষত বিক্ষত হয়।


তখনও গাবতলী বাস টার্মিনালের সামনের সড়কে টায়ারে আগুন ধরিয়ে অবরোধ করেন শ্রমিকেরা। এ সময় অ্যাম্বুলেন্সসহ সব ধরণের যানবাহনে হামলা চালায় শ্রমিকেরা। এ সময় শ্রমিকরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে ইট ছুঁড়ে।

 

মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার পর থেকে রাত দেড়টা পর্যন্ত এ তাণ্ডব চালায় পরিবহন শ্রমিকরা।

মার খেলো রোগী, রেহাই পেলো না লাশবাহী গাড়ি

গাবতলী থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে রাখেন পরিবহন শ্রমিকরা। তাদের তাণ্ডবে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না বিভিন্ন পরিবহন। এদিকে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে মাজার রোড মোড়ে অবস্থান নেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

 

কল্যাণপুর থেকে ছেড়ে আসা সকল পরিবহণ মাজার রোড হয়ে আশুলিয়া রুটে চলাচল করতে বলা হচ্ছে। গাবতলী বাস টার্মিনালে শ্রমিকদের হামলার শিকার যাতে না হয় সেই লক্ষ্যে এই রুটে যেতে বাধ্য করছেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
 

রাত দেড়টার সময় ঢাকা মেডিকেল থেকে আসে মরদেহবাহী গাড়ি। গাবতলী হয়ে গাইবান্ধার সাঘাটার উদ্দেশ্যে যেতে চায় গাড়িটি। গাড়ির মধ্যে থাকা নিহতের স্বজনেরা বলতে থাকেন ভাই আমাদের গাড়িতে মরদেহ রয়েছে আমাদের যেতে দিন। কিন্তু মরদেহবাহী গাড়িতেও হামলা করতে পারে সেই হিসেবে বেড়িবাঁধ আশুলিয়া রুটে যেতে বলা হয় মরদেহবাহী গাড়িটিকে।  

 

বাসচালক জামির হোসেন ও এবং সাভারে ট্রাকচাপা দিয়ে নারীকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ট্রাকচালক মীর হোসেনের মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ আন্তঃজেলা ট্রাক চালক ইউনিয়নের সভাপতি তাজুল ইসলাম।

মার খেলো রোগী, রেহাই পেলো না লাশবাহী গাড়ি

র‌্যাব-পুলিশ শ্রমিকদের টিয়ারসেল, রাবার বুলেট ছুঁড়ে ছত্র ভঙ্গ করছেন। পুনরায় পরিবহন শ্রমিকরা পাশের ইট ভাটা থেকে ইট সংগ্রহ করে পিকেটিং করে। বিশেষ করে তারা পুলিশ ছাড়াও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছেন। আশপাশের গাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। যাত্রীদেরও পরিবহণ থেকে নামিয়ে দেয়া হয়।


এতে করে সব ধরণের মানুষের দুর্ভোগের যেন কোনো অন্ত নেই। মানিকগঞ্জ সিঙ্গাইরের রফিকুল ইসলাম। বুধবার ভোর ছয়টায় ফ্লাইট। ভাড়া প্রাইভেট কারে আমিন বাজার পর্যন্ত আসতে পেরেছেন। অথচ গাবতলী বাস টার্মিনালে প্রাইভেট কারের সকল যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে প্রাইভেট কারটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। রফিকুল ও তার স্বজনেরা মাথায় লাগেজ নিয়ে পায়ে হেটে যান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর।

 

এই সময় রফিকুল বাংলানিউজকে বলেন, সৌদি আরব যাবো, বুধবার ভোরে ফ্লাইট। মানিকগঞ্জ থেকে প্রাইভেটকারে গাবতলী পর্যন্ত আসতে পেরেছি। আমাদের প্রাইভেটে থেকে নামিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। তাই পায়ে হেটে শুরু করছি বাকিটা আল্লাহ ভরসা। ’

পরিবহন শ্রমিকরা ঘটে অ্যাম্বুলেন্সের রোগি থেকে শুরু করে লাশও রেহায় পায়নি।


বাংলাদেশ সময়: ০৫৩১ ঘণ্টা, মার্চ ০১ , ২০১৭
এমআইএস/বিএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।