ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

‘ফেনিউরিজম’ অভ্যন্তরীণ পর্যটন বিকাশে অনন্য মডেল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৪ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০১৭
‘ফেনিউরিজম’ অভ্যন্তরীণ পর্যটন বিকাশে অনন্য মডেল ‘ফেনিউরিজম’ অভ্যন্তরীণ পর্যটন বিকাশে অনন্য মডেল-ছবি: বাংলানিউজ

ফেনী: ছোট জেলা ফেনী। ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী এ জেলাকে বলা হয় নেভেল (নাভি) অব দ্যা বাংলাদেশ। প্রাচীন অনেক নিদর্শন রয়েছে এ জেলায়। রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সাগর, নদী এবং ঐতিহাসিক বেশ কয়েকটি দিঘি।

এক কথায় পর্যটনে সম্ভাবনাময় জেলা এটি। আর এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতেই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ হাতে নিয়েছে ফেনী জেলা প্রশাসন, পর্যটন বিকাশে ‘ফেনিউরিজম’ নামে একটি মডেল তৈরি করেছে।

যা অন্য জেলার জন্য হতে পারে মডেল। অভ্যন্তরীণ পর্যটনের উন্নয়ন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দেশপ্রেমে উজ্জীবিত প্রজন্ম গড়ে তোলার লক্ষ্যে ফেনী জেলা প্রশাসনের এক অনন্য উদ্যোগ এটি।

জেলা প্রশাসক আমিন উল আহসান বাংলানিউজকে বলেন, ফেনী এবং ট্যুরিজমকে যুক্ত করে ‘ফেনিউরিজম’ ফেনী জেলার অভ্যন্তরীণ পর্যটন বিকাশের এক নতুন ধারণা। অভ্যন্তরীণ পর্যটন বিকাশ ও সৃজনশীলভাবে তরুণ সমাজকে জেলার ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে জানানোর এক নতুন উদ্ভাবনী উদ্যোগ এটি। এ ধারণাটির প্রবর্তন ও ‘ফেনিউরিজম’ নামকরণ করেছে ফেনী জেলা প্রশাসন। জেলার তরুণ প্রজন্মকে ঘিরেই এ কার্যক্রমের মূল পরিকল্পনা। কিন্তু জেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সৌন্দর্য তরুণ প্রজন্মের একটি বড় অংশের কাছেই অনাবিষ্কৃত।

তিনি আরো বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে ফেনীর বিলোনিয়া সীমান্তে সোলিয়ার সম্মুখ সমরের জীবন্ত ইতিহাস বা শর্শদির শাহী মসজিদের শত বছরের গল্পগুলো আমরা এ জেলার তরুণ প্রজন্মের কাছে সেভাবে তুলে ধরতে পারিনি। মুক্তিযুদ্ধে এ জেলার কৃতি সন্তানদের বীরত্বগাথা অনেকেরই অজানা। ফেনিউরিজমে আমরা পর্যটনের জন্য সম্ভাব্য স্থানগুলোকে আকর্ষণীয় করে তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরবো এবং জেলা প্রশাসনের উদ্যোগেই সে স্থানগুলোতে স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভ্রমণের আয়োজন করা হবে। প্রতিটি ভ্রমণেই জেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে একাধিক স্পট ঘুরিয়ে দেখানো হবে শিক্ষার্থীদের। পর্যটন স্পটগুলোতে সংশ্লিষ্ট এলাকার বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত থেকে পর্যটকদের কাছে স্থানটির গুরুত্ব বর্ণনা করবেন।

জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পৃক্ত করে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনানো হবে শিক্ষার্থীদের। বিভিন্ন পর্যটন স্পটের ডকুমেন্টারি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলা ও কুইজের মাধ্যমে ভ্রমণকে আনন্দঘন ও আকর্ষণীয় করে তোলা হবে।

প্রাথমিক পর্যায়ে জেলা প্রশাসন খুব সামান্য রেজিস্ট্রেশন ফি নিয়ে এ আয়োজনকে পরিচিত করে তুলবে। পরে বেসরকারি ট্যুর আয়োজকরা উদ্যোগটিকে বাস্তবায়িত করবে। প্রতি সপ্তাহে ৩০ জনের একেকটি ব্যাচ ট্যুরের সুযোগ পাবে। এভাবে জেলা প্রশাসন বছরে প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থীকে মাঠে নিয়ে এ জেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিবে। শিক্ষার্থীরা ওয়েবসাইটে সম্ভাব্য ভ্রমণকারী হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করবে।

তিনি আরো বলেন, এরই মধ্যে অনেক শিক্ষার্থী ট্যুরে অংশ নেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছে। প্রথম ট্যুরটি হয়েছে এ বছরের ১ মার্চ ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামের বিলোনীয়া স্থলবন্দরে। ফেনী বালিকা উচ্চ বিদ্যায়ের শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেয়।
‘ফেনিউরিজম’ অভ্যন্তরীণ পর্যটন বিকাশে অনন্য মডেল-ছবি: বাংলানিউজট্যুর আয়োজনের বাইরেও ফেনিউরিজমের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি হলো পর্যটন স্পটগুলোর উন্নয়ন এবং নতুন সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পট খুঁজে বের করা। নির্মাণ করা হবে বিলবোর্ড, ফ্রেসকো, ডকুমেন্টারি ইত্যাদি।

নিজ মাটিকে জানার জন্য এ ধরনের ধারণা একেবারেই নতুন এবং ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে জানার জন্য হাতে-কলমে মজা করে শেখার ধারণাটিও নতুন। ফলে এ উদ্যোগটি জেলার শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিপুল আগ্রহ ও উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। উদ্যোগটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে এটি থেকে অনেকগুলো অর্থনৈতিক, সামাজিক ও অনুপ্রেরণামূলক কর্মধারা বিকশিত হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।

তিনি বলেন, চীন এবং ভারত তাদের দেশে অভ্যন্তরীণ পর্যটনের মাধ্যমেই অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে এবং অভ্যন্তরীণ পর্যটন থেকেই পর্যটন খাতের আয়ের একটি বড় অংশ তারা পেয়ে থাকে। বাংলাদেশে এ সম্ভাবনাময় শিল্পটি এখনো সেভাবে বিকশিত হয়নি। কাজেই ঘরের কাছের আপাত: সাধারণ দর্শণীয় স্থানটিকে তার ঐতিহাসিক গুরুত্বের মিশেলে অসাধারণ করে তোলায় কাজ করবে ফেনিউরিজম। এক কথায় জেলা প্রশাসন অথবা কোনো উদ্যোক্তা যদি ফেনী জেলার অভ্যন্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য পর্যটন স্পটকে আকর্ষণীয় করে পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে পারে, তাহলে মানুষ নিজ মাটিকে জানার এ অনন্য সুযোগের দিকে ঘুরবেই।

তিনি মনে করেন, জেলা প্রশাসনের ট্যুর টিমগুলো প্রতিনিয়ত এসব পর্যটন স্পটে ভ্রমণ করলে স্থানীয় জনগণ এতে সম্পৃক্ত হবে এবং সংশ্লিষ্ট পর্যটন স্পটের অবকাঠামো, রাস্তা-ঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থারও উন্নয়ন ঘটবে। যা সঠিকভাবে অভ্যন্তরীণ পর্যটনকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০১৭
আরবি/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।