শুক্রবার (০৩ মার্চ) বেলা সাড়ে ৩টায় রাজধানীর পুরানা পল্টনে মুক্তি ভবনের প্রগতি সম্মেলন কক্ষে ‘ডে-কেয়ার শিশুর নিরাপদ শৈশব ও নারীর সত্তার বিকাশ’ শীর্ষক এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে নারী সংহতি।
সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তাসলিমা আখ্তারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক অপরাজিতা চন্দের সঞ্চালনায় মতবিনিময়ে অংশ নেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আহমেদ কামাল, অধ্যাপক আনন্দময়ী মজুমদার, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নারী সেলের আহ্বায়ক লক্ষ্মী চক্রবর্তী, আইনজীবী আইনুন নাহার লিপি, নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী শম্পা বসু, পোশাক শ্রমিক রুপালি আখতার, শ্রমিক খালেদা আক্তার, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য ফিরোজ আহমেদ, আলাকচিত্রী মুনিরা মোর্শেদ মুন্নি, সাদেকা চৌধুরী জুঁই, মিথিলা মাহফুজসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিরা।
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে উপলক্ষ করে আয়োজিত এ মতবিনিময় সভায় নারী সংহতির পক্ষ থেকে বক্তব্য উত্থাপন করেন নারী সংহতির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কানিজ ফাতেমা।
বক্তারা বলেন, বর্তমান সময়ের একক পরিবার আর সমাজ কাঠামোয় সবার দমবন্ধ দশা। আর ‘মা নারী’ যদি হয় খেটে খাওয়া কিংবা কর্মজীবী বা কৃষক তবে তো কথাই নেই। দায় দায়িত্বের এ কঠিন চাপ ভাগ করে নেয়ার জন্য কোথাও নারীর পাশে পরিবার, রাষ্ট্র ও সমাজ দাঁড়ায় না। বাস্তবতার এ সংকট কাটাতে শিশুর নিরাপদ শৈশব এবং নারীর সৃজনশীল সত্তার বিকাশে পাড়ায়-মহল্লায়-কর্মস্থলে-কারখানায় পর্যাপ্ত মানসম্মত শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা জরুরি।
শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র কেবল শিশুর নিরাপত্তা বা পেশাজীবী নারী পুরুষের জন্যই দরকার নয়, এটি নারী মুক্তির লড়াইয়েরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি বলে উল্লেখ করেন বক্তারা।
তারা বলেন, নারীর প্রকৃত ক্ষমতা ও অধিকারের সাথে অত্যাবশ্যকভাবে নারীর শিক্ষা, উপার্জন, সুস্বাস্থ্য, জ্ঞান ও দক্ষতার চর্চা জরুরি বিষয়। শিশু লালন পালনের দায় রাষ্ট্র সমাজ যথাযথভাবে না নেবার কারণে নারী পিছিয়ে পড়ছে তার কর্মজীবনে। একইসাথে সৃষ্টিশীল এবং নীতি নির্ধারণী কাজে, রাজনৈতিক নেতৃত্বে নারীর উপস্থিতির স্বল্পতা তৈরি হচ্ছে।
শ্রম আইনে কর্মক্ষেত্রে ৪০-এর অধিক কর্মী থাকলে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র থাকার কথা থাকলেও রাষ্ট্রের উদাসীনতার কারণে বাস্তবে এর কোনো বাস্তবায়ন নেই বলেও অভিযোগ করেন আলোচকরা।
বক্তারা বলেন, সমাজ আশা করে নারী আয় রোজগারও করবে আবার সন্তান লালন পালনসহ সংসারের সব কাজের দায় নিজের ঘাড়ে তুলে নিবে। শুধু সন্তান এবং সংসারের কথা চিন্তা করে অনেক মেধাসম্পন্ন নারী, অনেক প্রতিভা ও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কাজের ক্ষেত্র থেকে সরে পড়েন, যোগ্যতার যথাযথ পরিচয় দিতে পারেন না। অথবা কাজ করলেও বাচ্চাকে সময় দিতে পারছেন না বলে আত্মগ্লানিতে ভোগেন।
নারী পুরুষ উভয়ের জন্য তাদের শিশুর নিরাপত্তা ও যথাযথ বিকাশের জন্য ডে কেয়ার জরুরি। বিশেষভাবে দরকার নারীর জন্য। সৃজনশীল মানবিক-সত্তা বিকাশে এবং নারীকে ঘরের কাজের বোঝা থেকে মুক্ত করতে ডে কেয়ার এ সময়ের দাবি। এ দাবি বাস্তবায়নের জন্য বিশেষভাবে নারীদের মধ্যে এবং সমাজের মধ্যে ডে কেয়ারের আন্দোলন জোরদার করার আহবান জানান বক্তারা।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০১৭
পিআর/এমজেএফ