সাভারের ঝাউচর এলাকায় ২০০৩ সালের ২০ জুন খোদেজা বেগমের মৃত্যুর ঘটনাটিকে নিছক সড়ক দুর্ঘটনা বলে দাবি করে মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) থেকে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয় সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। ধর্মঘটে টানা দু’দিন অচল হয়ে পড়ে পুরো দেশ, যানবাহন সংকটে ভোগান্তিতে পড়েন জনসাধারণ।
ট্রাকচাপায় নিহত খোদেজা বেগমের ছেলে বিল্লাল হোসেন ওই ঘটনা স্মরণ করে বাংলানিউজকে জানান, বাড়ির পাশের একটি জমি ভরাটের কাজ করছিলেন ট্রাকচালক মির হোসেন মিরু। অনুমতি না নিয়ে মাটি আনায় এবং বাতাসের সঙ্গে ধুলো-ময়লা ছড়িয়ে পড়ায় ওই রাস্তা দিয়ে মাটি আনার প্রতিবাদ জানান তার মা খোদেজা বেগম ও বাবা নুরু গাজী। তারা ওই রাস্তা দিয়ে ট্রাক চলাচল বন্ধ করার অনুরোধ করেন।
এ ব্যাপারে ট্রাকচালক মিরুর সঙ্গে খোদেজা বেগম ও নুরু গাজীর কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ট্রাকচালক মিরু সবাইকে রাস্তা থেকে সরে যেতে বলেন। নইলে সবার উপর দিয়ে ট্রাক চালিয়ে দেওয়া হবে বলেও হুমকি দেন তিনি। এক পর্যায়ে মিরু রাস্তার উপর অবস্থানকারীদের ওপর ট্রাক চালিয়ে দেন। এ সময় অন্যরা রাস্তা থেকে সরে যেতে পারলেও খোদেজা বেগম ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।
ওই ঘটনার দীর্ঘ ১৩ বছর পর পুলিশের তদন্ত এবং সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে মিরুর অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। দীর্ঘ সময় পরে কাঙ্ক্ষিত রায়ে খুশি হলেও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে খোদেজা বেগমের পরিবার।
বাংলানিউজের কাছে শঙ্কা প্রকাশ করে নুরু গাজী জানান, রায় ঘোষণার পর থেকে তার পরিবারকে জিম্মি করে ফেলেছে ট্রাকচালক মিরু হোসেনের আত্মীয়-স্বজন এবং স্থানীয় পরিবহন শ্রমিকরা। এমনকি এসব বিষয়ে গণমাধ্যমে কথা বলতেও বাধা দিচ্ছে তারা।
ছেলে বিল্লাল হোসেন বলেন, মামলাটি আদালতে বিচারাধীন থাকা অবস্থায় মিরু জামিনে এলাকায় ছিলেন। প্রায় সময়ই তিনি মাতাল অবস্থায় এসে আমাদের ওপর অত্যাচার চালাতেন। মামলা তুলে নিতে বারবার হুমকি দিতেন। হত্যাকাণ্ড হলেও একে সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দিতে চেষ্টা করেছেন ট্রাকচালক মিরু হোসেনের লোকেরা।
বিল্লাল আরও বলেন, আসামির পরিবারের লোকেরা হুমকি দিয়ে বলেছে, ‘এলাকায় কেমন করে বসবাস করবি দেখে নেব। প্রয়োজনে পরিবারের বাকিরাও ফাঁসিতে ঝুলব। তবু তোদের পরিবারকে শেষ করে দেব। আমাদের পিছনে অনেক বড় বড় সংগঠন আছে, তারাই সব ব্যবস্থা করবে। তোদের অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে’।
'এখন আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমরা সরকারের কাছে আমাদের নিরাপত্তা চাই। '-বলছিলেন বিল্লাল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান বলেন, 'আমরা এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। '
বাংলাদেশ সময়: ০৮০২ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৭
এমজেএফ/জেএম