পুলিশ ও র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা এনিয়ে তদন্ত করতে শুরু করেছে। এ তদন্ত করতে গিয়ে অপরাধীদের শনাক্তে বেশি বেগ পেতে হচ্ছে না বলে তারা জানিয়েছে।
কারণ বসুন্ধরার মত সুশৃঙ্খল আবাসিক এলাকা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং বাসায় আগে থেকে লাগানো ছিল সিসি ক্যামেরা। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের ক্যামেরা ও ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন থেকে ধারণকৃত ছবি বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
অনেক সাধারণ ব্যক্তি এ ধরনের ঘটনার ভিডিও ও ছবি ফেসবুকে আপলোড করেছে সেখান থেকেও দোষীদের শনাক্ত করা হবে বলে জানা গেছে। এ ঘটনার সঙ্গে ইন্ধনদাতা হিসেবে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষকের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে বলেও তদন্ত সূত্রে জানা গেছে।
ভাঙচুরকারীরা বুঝতেই পারেনি তাদের অপরাধ রেকর্ড হয়ে যাচ্ছে।
ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে গোয়েন্দারা দেখতে পেয়েছেন, ছাত্র বেশে কিছু বহিরাগত সুপরিকল্পিতভবে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় চড়াও হয়। তারা ব্যাংক, খাবার দোকান, এটিএম বুথসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান লুট করেছে। হামলায় অংশগ্রহণকারী এবং নেপথ্য মদদদাতাদের খুঁজে বের করতে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে পুলিশ-র্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থা। তদন্তের বিভিন্ন কৌশলের পাশাপাশি তারা সহায়তা নিচ্ছেন ভিডিও ফুটেজের।
বুধবার মধ্যরাতে এ্যাপোলো হসপিটালসের পার্শ্ববর্তী গেটে আনসার সদস্যদের সঙ্গে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শাহরিয়ার হাসনাত তপুর হাতাহাতির ঘটনা থেকে শুরু করে বৃহস্পতিবার দিনভর দফায় দফায় হামলার ভিডিও সংগ্রহ করেছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা। এখন চলছে তথ্য বিশ্লেষণের কাজ। তাছাড়া সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টু্ইটারে যারা নির্দেশ দিয়েছে অরাজকতা করতে তাদেরও শনাক্ত করা শুরু হয়েছে।
ঘটনার সময় প্রমাণ হিসেবে মোবাইল ট্রাকিং করে দুর্বৃত্তদের অবস্থান শনাক্ত করা শুরু হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘পুরো ঘটনাটি তদন্তের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সব দিক বিবেচনা করা হচ্ছে। তদন্তের ক্ষেত্রে আমরা প্রযুক্তির সহায়তা নেব। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। ফুটেজ বিশ্লেষণ করে প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করা হবে।
জানা গেছে, বুধবার রাতের তুচ্ছ ঘটনাকে পুঁজি করে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উসকানি দেয় একটি মহল। প্রকৃত ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করে তারা সাধারণ ছাত্রদের খেপিয়ে তোলে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একাধিক পেজ খুলে তারা সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের উসকানি দিতে থাকে। আহত তপুর শারীরিক অবস্থাকে সংকটাপন্ন বলে অপপ্রচার চালানো হয় ফেসবুক পেজের স্ট্যাটাসের মাধ্যমে। উসকানিদাতাদের কয়েকজন ভিডিও কলের মাধ্যমে উৎসাহ দিয়েছেন অন্যদের। ফেসবুক পেজের নির্দেশনামূলক স্ট্যাটাসগুলো ছিল অনেকটা যুদ্ধপ্রস্তুতির মতো। প্রশিক্ষিত যোদ্ধা এবং প্রশিক্ষকরাই সাধারণত তাদের সহযোদ্ধাদের এ ধরনের নির্দেশনামূলক বক্তব্য দিয়ে থাকেন বলে মন্তব্য করেছেন অনেক নিরাপত্তা বিশ্লেষক।
একটি ফুটেজে দেখা যায়, সমবেত ছাত্রদের উত্তেজিত করে তুলতে এক যুবক বক্তৃতা দিচ্ছেন। অনেকের মুখ ছিল কালো কাপড় দিয়ে মোড়ানো।
কালো কাপড়ে মুখ মোড়ানো থাকলেও তাদের শনাক্ত করা খুব একটা কঠিন হবে না বলে মনে করছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ।
ফেসবুকে আপলোড করা বেশকিছু পোস্ট পরে মুছে ফেলে ওই দুর্বৃত্তরা। সেখানেই তারা বলতে থাকে, নিরাপত্তার স্বার্থে এগুলো মুছে ফেলা জরুরি। কিন্তু তারা যা মুছে ফেলেছে তাও হাতে পেয়েছে গোয়েন্দারা।
বসুন্ধরা করপোরেট অফিসের নিচতলায় একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, অজ্ঞাত এক যুবক হামলা ও অফিসে ভাঙচুরের পর ডেস্কে পড়ে থাকা মোবাইল ফোন সেট এবং তিনটি ব্লেজারসহ কিছু সরঞ্জাম নিয়ে যাচ্ছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলছেন, ফেসবুক পেজে ভিডিও বক্তব্য দেওয়া শাহজাদাসহ সন্দেহভাজনদের ব্যক্তিগত প্রোফাইল ঘেঁটে দেখা হচ্ছে। নজরদারিতে রাখা হচ্ছে তাদের গতিবিধি। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত এসব উসকানিমূলক শব্দ ব্যবহার করে হিযবুত তাহরিরের জঙ্গিরা। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে তারা নিরীহ ছাত্রদের পুঁজি করে থাকতে পারে। তবে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা দরকার।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, জননিরাপত্তা বিঘ্ন হয় এমন কোনো কাজ করতে দেওয়া হবে না। বুধ থেকে বৃহস্পতিবার দিনভর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যারা তাণ্ডব চালিয়েছে তাদের খুঁজে বের করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩০ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৭