ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

প্রতিবেশ সংকটাপন্ন সিলেটের শাহআরেফিন টিলা

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৮ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০১৭
প্রতিবেশ সংকটাপন্ন সিলেটের শাহআরেফিন টিলা শাহ আরেফিন পাথর কোয়ারি/চবি: বাংলানিউজ

সিলেট: পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে একের পর এক প্রাণহানির ঘটনায় অবশেষে শাহ আরেফিন টিলাকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করেছে প্রশাসন।

শুক্রবার (০৩ মার্চ) অস্থায়ীভাবে বাঁশ ফেলে  শাহ আরেফিন টিলার প্রবেশদ্বার বন্ধের পাশাপাশি প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ব্যানার টানিয়ে সতর্কবাণী লিখে দেওয়া হয়েছে।  

উপজেলা প্রশাসন কোম্পানীগঞ্জের নির্দেশক্রমে লিখা ব্যানারে উল্লেখ করা হয়, শ্রমের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি’ শাহ আরফিন টিলা একটি প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা।

এ এলাকায় টিলা কেটে গর্ত করণ, পাথর উত্তোলন ও পরিবহন সম্পূর্ণ বেআইনি। এ কাজে জড়িত সবার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়দের অভিযোগ, সর্ষেতে ভূত রেখে ভূত তাড়ানো এক ধরনের প্রলাপ বটে। উপজেলা প্রশাসন শাহ আরেফিন টিলায় পাথরবাহী যানবাহন যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ করলেও কোয়ারি এলাকায় খুপড়ি ঘরগুলো উচ্ছেদ করেনি।  

এসব ঘরে বসেই কোয়ারি মালিকসহ সংশ্লিষ্টরা পাথর উত্তোলন কার্যক্রম চালিয়ে যান। এমনকি রাতের বেলায় এসব খুপড়ি ঘরে লোকজন থেকে পাথর উত্তোলনের সুযোগ পাচ্ছে। এরই প্রতিফলন ঘটেছে বৃহস্পতিবার (০২ মার্চ) রাতে চোরাইভাবে পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে ফের প্রাণ হারায় এক শ্রমিক।

এ ব্যাপারে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নবনিযুক্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল লেইছ বাংলানিউজকে বলেন, আমি ২৬ ফেব্রুয়ারি এসে যোগদান করেছি। প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ব্যানার টানিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছি। তবে একদিনেতো আর সব কিছু সম্ভব না, পর্যায়ক্রমে কোয়ারি এলাকায় খুপড়ি ঘরগুলোও উচ্ছেদ করা হবে।

এছাড়া নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও শুক্রবার (৩মার্চ) কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনকালে এক  শ্রমিককে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন তিনি।  

এদিকে, বৃহস্পতিবার (০২ মার্চ) রাতে পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে ইয়াকুব আলী (২২) নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। তিনি স্থানীয় নারাইনপুর গ্রামের রজব আলীর ছেলে। এ ঘটনায় নিহতের বাবাসহ ১৭ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২০/২৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।  

কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলতাফ হোসেন বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনার পর বৃহস্পতিবার রাতে নিহতের বাবা রজব আলীসহ দু’জনকে আটক করা হয়। শুক্রবার আরও একজন নিয়ে মোট ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।  

বৃহস্পতিবার (০২ মার্চ) রাতে শাহ আরেফিন টিলায় চোরাইভাবে কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনকালে মাটিচাপায় ইয়াকুব আলী নিহত হন। দুর্ঘটনা কবলিত পাথরের কোয়ারিটি স্থানীয় আব্দুল হান্নানের কাছ থেকে লিজ নিয়েছিলেন নিহতের বাবা রজব আলী। লিজ নেওয়া গর্তেই প্রাণ হারায় তার ছেলে।  

এ নিয়ে আরেফিন টিলায় দেড় মাসে ৭ জনের মৃত্যু হয়। গত ২৩ জানুয়ারি টিলা সংলগ্ন মাটিয়া টিলার আঞ্জু মিয়ার গর্ত ধসে ৫ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এঘটনায় পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ৪৭ ভূমিখেকোকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া তৎকালীন দায়িত্বরত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বদলি এবং ওসির গাফিলতির বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছিল।

ঠিক দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ফের ১১ ফেব্রুয়ারি সেখানে আরও এক শ্রমিক মারা যান। এ ঘটনায় পর ওসিকে প্রত্যাহার এবং ইউএনওকে বদলি করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৫ ঘণ্টা,  মার্চ ০৪, ২০১৭
এনইউ/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।