ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে, আতঙ্কিত ছাত্রের বাবা

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০১৭
তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে, আতঙ্কিত ছাত্রের বাবা চিকিৎসাধীন কাওসারের পাশে সহপাঠীরা

বগুড়া: দুই শিক্ষক দুটি বেত নিয়ে ছেলের ওপর হামলে পড়েন। ছেলেকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেন। পেটাতে পেটাতে ভেঙে ফেলেন বেত। এরপরও ক্ষ্যান্ত হননি তারা। ছেলের বুকের ওপর চড়ে নির্যাতন করেন দুই শিক্ষক।

সহপাঠীরা ভয়ে এগিয়ে যায়নি। চিৎকার শুনে অপর দুইজন শিক্ষক এগিয়ে গেলে তাদের শাসানো হয়।

শেষ পর্যন্ত তারা ছেলেটিকে উদ্ধার না করে খালি হাতে ফিরে আসেন। আমার ছেলেকে বিনা অপরাধে নির্যাতন, তারপরও থেমে নেই দুই শিক্ষক।
 

শুক্রবার (০৩ মার্চ) সন্ধ্যায় বাংলানিউজকে কথাগুলো বলছিলেন দুই শিক্ষকের মারপিটে আহত হয়ে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কাওসারের বাবা হাসান মাহমুদ।

 

তিনি অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষকরা এখন আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। তাদের ভয়ে আতঙ্কিত আমি। আমার বাড়িতে জুতো নিক্ষেপ করা হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছেলেকে রিলিজ নিতে চাপ দেওয়া হচ্ছে। পরিবার নিয়ে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।


ভয়ে তিনদিন ধরে বাড়ি যাইনি। হাসপাতালে ছেলের সঙ্গে আছি। ছেলেকে নির্যাতনকারী শিক্ষকদের বিচার চেয়ে অভিযোগ করায় আমার পিছু লেগেছেন তারা।


এদিকে, দুপুরে কাওসার মাহমুদের সহপাঠীরা তাকে দেখতে হাসপাতালে যায়। এসময় অনেকেই শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে কেঁদে ফেলে।


কাওসারের সহপাঠী ছাত্ররা বাংলানিউজকে জানায়, কাওসার মাহমুদ ছোট বেলা থেকেই মেধাবী ছাত্র। জেএসসিতে সে জিপিএ ৫ পেয়েছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি সবদিক দিয়েই সে ভাল। তারা এ ঘটনার উপযুক্ত বিচার চায়।
 

এর আগে মঙ্গলবার (২৮ফেব্রুয়ারি) উপজেলার ভাটরা ইউনিয়নের পন্ডিতপুকুর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র কাওসার মাহমুদকে অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম ও সহকারী শিক্ষক আমজাদ হোসেন দু’জন মিলে মারপিট করেন।

 শিক্ষকদের প্রহারে গুরুতর আহত কাওসার
ওইদিন তাকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শজিমেক) ভর্তি করা হয়।


পরদিন বুধবার (০১মার্চ) ছাত্রের বাবা হাসান মাহমুদ অভিযুক্ত দুই শিক্ষকের বিচার চেয়ে শিক্ষামন্ত্রী বরাবর অভিযোগ দেন। পাশাপাশি নন্দীগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপতরে অভিযোগের অনুলিপি দেন তিনি।

 

অভিযোগ পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোসা. শরিফুন্নেসা উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা মোতাহার আলীকে তদন্তের নির্দেশ দেন।


শুক্রবার (০৩ মার্চ) সন্ধ্যায় উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা মোতাহার আলী বাংলানিউজকে জানান, বৃহস্পতিবার (০২ মার্চ) দিনব্যাপী তিনি তদন্তকাজ চালিয়েছেন। স্কুলের ছাত্রছাত্রী, অভিযুক্ত শিক্ষক ও প্রতিবেশীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নানাভাবে কথা বলেছেন। হাসপাতালে গিয়ে নির্যাতনের শিকার ছাত্রকে দেখেছেন।


তিনি আরো জানান, শিক্ষক কর্তৃক ছাত্র কাওসার মাহমুদকে অমানুষিক নির্যাতনের সত্যতা পেয়েছেন। সেই অনুযায়ী স্কুল পরিচালনা কমিটিকে দায়ী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আগামী রোববার (০৫ মার্চ) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন বলেও যোগ করেন এই শিক্ষা কর্মকর্তা।


অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এ ঘটনায় দায়ী সহকারী শিক্ষক আমজাদ হোসেনকে স্কুল পরিচালনা কমিটি বৃহস্পতিবার (০২মার্চ) বরখাস্ত করেছে। এছাড়া ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টা করছি।


অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ছাত্রের বাবা হাসান মাহমুদকে হুমকি-ধামকি দেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়।


নন্দীগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে জানান, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছাত্রের বাবা হাসান মাহমুদ সার্বক্ষণিক তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেওয়া হবে বলেও জানান ওসি আব্দুর রাজ্জাক।

**শিক্ষকের প্রহারে হাসপাতালে ছাত্র!

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৪ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০১৭
এমবিএইচ/বিএস

 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।