কিন্তু আসলামুল হক সরকার দলীয় এমপি হওয়ার পর সব যায় পাল্টে। এমপি তার পেটোয়া সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে সাড়ে চার বিঘা জমির পুরোটাই দখল করে নেন।
শুধু তাই নয়। সম্প্রতি কাশেমের জমির পাশের এক জমিতে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন করতে যান আসলামুল হক। নির্মাণকাজও শুরু করে দেন। মালিকপক্ষ হাইকোর্টে এ নিয়ে মামলা ঠুকে দেন। হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় ফায়ার সার্ভিস নির্মাণের কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে।
আবুল কাশেমের জমিতে এমপি আসলামুল হকের গড়ে তোলা কাউন্টারগুলো থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৪/৫ লাখ টাকা আসে। আর এই কাজটি করছেন এমপি আসলামুল হকের নিয়োগকৃত কর্মচারী এক সময়ের ভ্যানচালক ইসলাম। তিনি মিরপুর থানার স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়,আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে ১০-১২টি হয়রানিমূলক মামলা করেছেন আসলামুল হক। ভূমিদস্যুতা,নারী নির্যাতন, হত্যা ও গাড়ি পোড়ানোসহ বিভিন্ন মামলায় তাকে ফাঁসানো হয়েছে। কিছু মামলা এখনো চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে আবুল কাশেমের এক নিকটাত্মীয় নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, আসলামুল হক বর্তমান সরকারের এমপি হওয়ার পর তাদের সাড়ে ৪ বিঘা জমি জোর করে দখল করে নেন। এখন সেখানে বাসের টিকিট কাউন্টার করা হয়েছে। এসব কাউন্টার থেকে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা আয় হচ্ছে এমপি আসলামুলের। এর পাশেই করা হবে হাসপাতাল। সাইনবোর্ডও ঝুলিয়ে দিয়েছেন। ৭ বছরের বেশি সময় ধরে এভাবে আবুল কাশেমের জমি দখল করে অন্যায় করে চলেছেন এমপি আসলামুল হক।
আবুল কাশেমের ওই নিকটাত্মীয় আরো অভিযোগ করেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের দিয়ে কয়েকবার কাশেমকে তুলেও নিয়ে যান আসলামুল। জমি হারিয়ে দিশেহারা কাশেম এখন প্রাণ হারানোর শঙ্কায় আছেন। তাই এটা নিয়ে এখন তিনি আর কিছুই করতে চান না। জমির চেয়ে প্রাণের মূল্য তার কাছে অনেক বেশি।
বাংলানিউজের অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, কল্যাণপুরের খালের জায়গা দখল করে এমপি আসলামুল হক গড়ে তুলেছেন দোকানপাট ও বস্তি। যেখান থেকেও প্রতিমাসে তার আয় লাখ লাখ টাকা।
রাজধানীর দারুস সালামের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কমিউনিটি সেন্টারের পশ্চিম পাশে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ করা হয় তিন একরের বেশি জায়গা। সেই জায়গা দখল করে ভবন তৈরি করছেন আসলামুল। অথচ বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন সংস্থার সঙ্গে ওই জমি নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মামলা চলছে। মীমাংসা হওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো স্থাপনা তৈরিতে আদালতের নিষেধাজ্ঞাও বহাল আছে। অথচ আদালতের নিষেধাজ্ঞাকেও আমলে নেননি এমপি আসলামুল হক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০০ সালের ২৩ মার্চ ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে ওয়াকফ প্রশাসন থেকে ২৩ দশমিক ২৩ একর জমি ৯৯ বছরের জন্য লিজ নেয় বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন সংস্থা। ২০০৭ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ওই জমির মালিকানা দাবি করলে মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন সংস্থার পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। মামলাটি এখনো বিচারাধীন।
জমিটি আসলামুল হক দখল করতে গেলে বাধা দেন মুক্তিযোদ্ধারা। এ কারণে মুক্তিযোদ্ধা মশিউর রহমান বাবু ও মহাসচিব হাবিবের নামে ১০ লাখ টাকার চাঁদাবাজির মামলা করেন তিনি।
এছাড়া মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের পাশে ওয়াকফ এস্টেটের জমি বালু দিয়ে ভরাট করেন আসলামুল। আর সেখানে একটি সাইনবোর্ডে লেখা ‘প্রস্তাবিত কাঁচা বাজার’।
জানা গেছে, বালু দিয়ে ভরাট করা এই জমির প্রকৃত মালিক মতিউর রহমান। কিন্তু আসলামুলের দাপটে প্রকৃত জমির মালিক আর নিজ জমিতে যেতে পারেননি।
মিরপুরের মাজার রোডের মাথায় বাতেন নগরের ‘গাবতলী মাঠ’ দখল করে সেখানে গাড়ি মেরামতের কারখানা ও দোকান করেছেন এমপি আসলামুল। সেখানের দোকানগুলো থেকেও প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা আয় হয় তার।
মিরপুর মাজার রোডের কোনাবাড়ি বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন প্রিয়াঙ্গন হাউজিংয়ের পাশে নইমুদ্দিন নামে এক ব্যক্তির ৫৪ শতাংশ জমি ছিল। কিন্তু এই জমিও দখল করে নেন আসলামুল। পরে জমির মালিকের ওয়ারিশরা বিষয়টি নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করলে তিনি ৫৪ শতাংশ জমির পুরোটাই মাজারকে দিয়ে দেন। এটা নিয়ে আর কোনো ঝামেলা না করতে জমির মালিককে হুশিয়ারিও দেন।
এ বিষয়ে জমির মালিক নইমুদ্দিনের ওয়ারিশরা বাংলানিউজকে বলেন, আসলামুল হক বর্তমান সরকারের এমপি হওয়ার পর তাদের ৫৪ শতাংশ জমি জোর করে দখল করে নেন। এক পর্যায়ে জমিটি সিটি জরিপে মাজারের নামে দান করে দেন। অথচ জমির মালিক বা তার ওয়ারিশদের কেউ ঐ জমি মাজারের নামে লিখেও দেননি। আসলামুল হক গোপনে সিটি করপোরেশনের লোক দিয়ে এটা করিয়েছেন। সেখানে এখন ‘প্রস্তাবিত কাঁচাবাজার’ লেখা সাইনবোর্ড শোভা পাচ্ছে। কাঁচাবাজার হয়ে গেলে টাকা তো তারই পকেটে যাবে।
এ বিষয়ে বাংলানিউজের পক্ষ থেকে সংসদ সদস্য আসলামুল হকের ব্যক্তিগত ফোনে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি কোনো ফোনকল রিসিভ করেননি। একারণে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৭/আপডেট ১৩৩৪ ঘণ্টা
এসজে/জেএম