এই কর্মকর্তারা এখন কী করবেন? সে প্রশ্ন নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, তারা এখন বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করতে প্রস্তুত।
তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী আবুল হোসেন, সেতুসচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ছাড়াও প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করতেন এমন কয়েকজন পদ্মাসেতু দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে বলেছেন, এই ক্ষতিগ্রস্তরা চাইলে বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন। আর প্রধানমন্ত্রীর সে বক্তব্যের সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তরাও একমত। এখন তারা বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে সরকারের তরফ থেকে সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।
পদ্মাসেতু প্রকল্পের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সরকার চাইলে ক্ষতিগ্রস্তরা মামলা করতে প্রস্তুত। তারা অপেক্ষা করছেন সরকারের নির্দেশনার। নির্দেশনা পেলে মামলা করে ক্ষতিপূরণ দাবি করবেন তারা।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি জার্মানির মিউনিখে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মাসেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের মিথ্যা অভিযোগে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারাই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করবেন।
সূত্র জানায়, মামলা কে করবেন সে বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা না পাওয়ায় এখনও অপেক্ষা করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিথ্যা অভিযোগের কারণে সেসময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন পদ্মাসেতু প্রকল্পের সে সময়কার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী মো ফেরদৌস ও তৎকালীন সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। তাদের দুজনকে দেড় মাস জেলেও কাটাতে হয়েছিলো। এক বছর সাসপেন্ডেড ছিলেন দু’জনই। আর সব ধরণের পদোন্নতি থেকেও বঞ্চিত হন।
মোশাররফ ভূঁইয়া বর্তমানে স্থানীয় সরকার সচিব আর কাজী ফেরদৌস এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে রয়েছেন।
এর বাইরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ওই সময় সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রকৌশলী তিনি রিয়াজ উদ্দিন জাবের। তিন বছর সাসপেন্ডেড ছিলেন তিনি। পরে আদালতের রায়ে চাকরি ফিরে পান। বর্তমানে ভুলতায় সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের একটি প্রকল্পের দায়িত্বে রয়েছেন রিয়াজ।
তৎকালীন পদ্মাসেতু প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলাম চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। কিন্তু অভিযোগের পরপরই চাকরি থেকে তাকে ‘টারমিনেট’ করা হয়।
এছাড়াও আরও দু’জন প্রকৌশলী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে তারা পরবর্তীতে নিজস্ব অর্থায়নে নেওয়া সেতু প্রকল্পে দায়িত্ব পান। এরা হচ্ছেন নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ রজব আলী ও মো. কামরুজ্জামান। এ দুজনকেও একাধিকবার দুদকে তলব করা হয়েছিলো।
এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আরও একাধিক প্রকৌশলী যারা এখন বলছেন, এই অভিযোগ চাকরিক্ষেত্রে তাদের পাঁচ বছর পিছিয়ে দিয়েছে। ঠিক ঠিক মতো চললে এতোদিনে পদ্মাসেতু হয়ে যাওয়ার কথা। তা হলে পদ্মাসেতুর নির্মাণের অভিজ্ঞতায় যুক্ত হতে পারতো তাদের নাম।
তবে বিশ্বব্যাংকের আনা দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগের ব্যক্তি বা পক্ষ ছাড়াও সবচেয়ে বড় ইমেজগত সংকটে পড়েছিলো সরকার তথা দেশ। যার আর্থিক ক্ষতিও হয়েছে বিপুল অংকে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সঙ্কট সৃষ্টি না হলে বিশ্বব্যাংক থেকেই সবচেয়ে কম সুদে ঋণ পাওয়া যেত। এখন নিজস্ব অর্থে পদ্মাসেতু করলেও চীনা কোম্পানির সঙ্গে যে চুক্তির ভিত্তিতে পদ্মাসেতু নির্মিত হচ্ছে, তাতে খরচ অনেক বেড়ে গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১০ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৭
এসএ/আরআইএস/এমএমকে