ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

জুনেও শেষ হচ্ছে না মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের কাজ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০১৭
জুনেও শেষ হচ্ছে না মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের কাজ জুনেও শেষ হচ্ছে না মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের কাজ- ছবি: দীপু মালাকার

ঢাকা: মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজের সময় দফায় দফায় বাড়ানো হলেও শেষ হচ্ছে না ফ্লাইওভারটির নির্মাণ কাজ। ফলে রাজধানীতে বসবাসরত নগরবাসীদের প্রতিনিয়ত পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। আর এই দুর্ভোগের পেছনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করছেন নগরবাসী।

ফ্লাইওভারের মোট দৈর্ঘ্য  ৮ দশমিক ২৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে রমনা থেকে তেজগাঁও সাতরাস্তা পর্যন্ত দুই কিলোমিটার ও ইস্কাটন থেকে ওয়্যারলেস (মৌচাক ক্রসিং) পর্যন্ত এক কিলোমিটার অংশ আগেই খুলে দেওয়া হয়েছে।

আর এখনো কাজ বাকী রয়েছে প্রায় ছয় কিলোমিটার।

শুক্রবার (০৩ মার্চ) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মালিবাগ আবুল হোটেলের সামনে থেকে রাজারবাগ পুলিশ লাইন ও মৌচাক থেকে শান্তিনগর মোড় পর্যন্ত কাজের গতি খুব ধীর। আবার উপরে কাজ চলছে তো নিচে রাস্তায় পানি জমে থাকা ও খানা খন্দের কারণেও তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ যানজটের। আর রাস্তা বন্ধ করে কাজ করার অভিযোগ তো আছেই। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে।

জানা যায়, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্পটি ২০১১ সালের ৮ মার্চ একনেক বৈঠকে অনুমোদন পায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। প্রথমে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১১ থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরে প্রকল্পের মেয়াদ ডিসেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু এই সময়েও কাজ শেষ না হওয়ায় সময় বাড়ানো হয় চলতি বছরের (২০১৭) জুন পর্যন্ত।
রাস্তায় জমে থাকা পানি ও খানা খন্দে দুর্ভোগ নগরবাসীর
এদিকে প্রথম ধাপে প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ছিল ৩৪৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। দ্বিতীয় ধাপে তা বেড়ে ৭৭২ কোটি টাকা আর এখন  প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২১৮ দশমিক ৮৯ কোটি টাকা।

মৌচাক এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজে ধীরগতি থাকায় সাধারণ মানুষ চলাচল করতে পারছেন না। এ কাজ কবে শেষ হবে একমাত্র আল্লাহই জানে। দুই বছর ধরে দুর্ভোগ সহ্য করছি। কবে যে এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবো। নির্মাণ কাজের সময় বাড়লেও নির্ধারিত সময়েও শেষ হচ্ছে না প্রকল্পটির কাজ।

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা গ্রুপের মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. শরিফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, তাদের হাতে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার সময় রয়েছে জুন পর্যন্ত। কিন্তু জুনের মধ্যে শেষ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কেননা তারা একদিকে উপরে কাজ করছেন আর নিচে সিটি করপোরেশন ও ডিপিডিসির কাজ চলছে। যার ফলে তাদের কাজ করতে ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। সমস্যার বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ে দফায় দফায় কথা হলেও কোনো সমাধান হয়নি। ফলে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটির কাজ শেষ করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
জুনেও শেষ হচ্ছে না মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের কাজ- ছবি: দীপু মালাকার
ফ্লাইওভারের বিষয়ে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বাংলানিউজকে বলেন, ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানি সমীক্ষা করে এই উড়াল সড়কের নকশা করে। আট বছর পর ২০১৩ সালে এই নকশা অনুযায়ী কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু কাজ শুরু হলেও প্রকল্প এলাকায় মাটির নিচে বিভিন্ন সেবা সংস্থার পাইপ ও তার বসে যাওয়ায় আবার নকশাও পরিবর্তন করা হয়। যা মোটেও কাম্য নয়। কেননা কোনো কাজ করার আগে নকশা হলো মূল বিষয়। যদি সেটাতে সমস্যা থাকে তাহলে আগে কেন পরীক্ষা না করে কাজ শুরু করা হলো।

তিনি বলেন, রাজধানীতে যতোগুলো ফ্লাইওভার হয়েছে সবগুলোতেই যানজট দূর হওয়ার চেয়ে দুর্ভোগ বেড়েছে বেশি। এজন্য আমাদের এলিভেটেড ও আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যবস্থা নিয়ে ভাবতে হবে। কেননা রাজধানীতে ফ্লাইওভার মোটেও কাম্য নয়। এছাড়া ফ্লাইওভারটির নকশাতেও সমস্যা রয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে আমাদেরকে আরো বেশি দুর্ভোগে পড়তে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৭
এসজে/বিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।