ঢাকা, রবিবার, ১৯ মাঘ ১৪৩১, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

যশোর উদীচী ট্র্যাজেডির ১৮তম বার্ষিকী সোমবার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০১৭
যশোর উদীচী ট্র্যাজেডির ১৮তম বার্ষিকী সোমবার উদীচীর সম্মেলনে বোমা বিস্ফোরণ

যশোর: যশোরে উদীচী ট্র্যাজেডি দিবস সোমবার (৬ মার্চ)। ১৮ বছর আগে ১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ রাতে টাউন হল ময়দানে উদীচীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাকালে বর্বরোচিত বোমা হামলা চালায় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী।

এতে ১০ জন নিহত ও দু’শতাধিক নারী-পুরুষ আহত হন। এ ঘটনায় মামলা হলেও বিচার কাজ শেষ হয়নি আজও।

ধরাছোঁয়ারও বাইরে রয়েছে ঘাতকরা।

দীর্ঘ ১৭টি বছর পার হলেও স্বজন হারানোর বিচার না পেয়ে হতাশ স্বজন ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা। প্রতিবছরের মতো এবারও শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ, রক্তদান, মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, আলোচনা সভা এবং প্রতিবাদী সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছে যশোর জেলা উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।

উদীচীর যশোর জেলা শাখার সভাপতি ডিএম শাহিদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, সিআইডির ত্রুটিপূর্ণ চার্জশিটের কারণে ২০০৬ সালের ৩০ মে আদালত থেকে খালাস পেয়ে যান মামলার সব আসামি। পরে রাষ্ট্রপক্ষ ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করলে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হলেও আটকে আছে আইনের বেড়াজালে। বিচারের এ দীর্ঘ বিড়ম্বনায় ক্ষুব্ধ যশোরের মানুষ এখন দ্রুত এ মামলার বিচারকাজ পূর্ণোদ্যমে চালুর দাবি জানিয়েছেন।

যশোর টাউন হল মাঠে উদীচীর ওই দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিন ছিল ৬ মার্চ। রাত ১টার কিছু সময় পর মঞ্চের পেছনে দু’টি শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এতে প্রাণ হারান নূর ইসলাম, নাজমূল হদা তপন, সন্ধ্যা রানী ঘোষ, ইলিয়াস মুন্সী, শাহ আলম বাবুল, বাবুল সূত্র ধর, শাহ আলম, বুলু, রতন রায় ও রামকৃষ্ণ।

আহতদের কেউ দুই পা, কারও এক পা, কারও হাত, কেউবা শ্রবণশক্তি হারিয়ে পঙ্গত্ববরণ করেন। এ ঘটনার পর দিন মামলা করা হয়।

মামলা সূত্রে জানা যায়, মামলার পর ওই বছরেরই ১৪ ডিসেম্বর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামসহ ২৪ জনের নামে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। পরে তরিকুল ইসলামের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট তার নাম বাদ দিয়ে দেন।

২০০৬ সালের ৩০ মে যশোরের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল এ মামলার রায়ে ২৩ আসামিকে বেকসুর খালাস দেন। উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ন্যায়বিচার হয়নি বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পুনঃতদন্তের আবেদন করলে মামলাটির বর্ধিত তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডিকে।

২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার হাতে গ্রেফতার হলে উদীচীর বোমা হামলা মামলা নতুন মোড় নেয়। ওই বছরের ১৯ নভেম্বর আদালতে হান্নান তার দেওয়া জবানবন্দিতে উদীচী বোমা হামলায় নিজে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তার স্বীকারোক্তিতে পুলিশ হরকাতুল জিহাদের সদস্য বরিশালের আবুল হোসেন ও মাদারীপুরের মাওলানা আবদুর রউফকে আটক করে।

পরে মহিউদ্দিন আলমগীর, আহসান কবীর হাসান ও মিজানুর রহমান মিজান মারা যান। আদালতের কাছে তাদের মৃত্যুর কাগজপত্র দাখিল হওয়ায় ওই তিনজন বাদে বাকি ২০ জনের বিরুদ্ধে সমন জারি করা হয়।

এরপর ২০১১ সালের ৪ মে সরকারের দায়ের করা আপিলটি গ্রহণ করেন বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান মিয়া ও কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ। এর ফলে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। উচ্চ আদালত এ মামলার খালাসপ্রাপ্তদের ফের আত্মসমর্পণের জন্য সমন জারির নির্দেশ দেন।

এ সংক্রান্ত একটি পত্র ২০১১ সালের ২০ জুন যশোর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এসে পৌঁছায়। এরপর ২১ জুন খালাসপ্রাপ্ত ২৩ আসামির বিরুদ্ধে সমন জারি করেন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।

সমনে উল্লেখ করা হয়, এক মাসের মধ্যে সবাইকে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিতে হবে। এরপর ১৭ জন বিভিন্ন সময়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন। কিন্তু শফিকুল ইসলাম মিন্টা, শরিফুল ইসলাম লিটু ও সোহরাব নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণ না করায় তাদের বিরুদ্ধে ২৪ জুলাই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন আদালত।

সর্বশেষ ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আটক হন এ মামলার অন্যতম আসামি শফিকুল ইসলাম মিন্টা। পরে তাকেও এ মামলায় জামিন দেন আদালত।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫০ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১৭
আরবি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।