নির্বাচনে ফলাফল নিয়েও শঙ্কিত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। কারণ এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দলের দুই বলয়ের প্রার্থীর সমর্থকদের সহিংসতায় দু’জন খুন হওয়ার ঘটনা পুরো নির্বাচন পরিস্থিতি টালমাটাল করে দিয়েছে।
সেই সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের দুই প্রভাবশালী চৌধুরীর বিপরীত মেরুতে অবস্থান এবং নিজ নিজ সমর্থিত প্রার্থী থাকায় ভোটার ও দলীয় নেতাকর্মীরাও পড়েছেন বেকায়দায়। প্রথমবারের মতো উৎসবের এ নির্বাচন যেনো দুই চৌধুরীর ‘প্রেস্টিজ ইস্যু’র লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে।
ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে চারজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে দু’জন এবং ভাইস চেয়ারম্যান (নারী) পদে চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এ উপজেলায় ৮টি ইউনিয়নে এক লাখ ৩০ হাজার ৪৬০ জন ভোটার রয়েছেন। এর মধ্যে ৬৪ হাজার ৩৮৭ জন নারী এবং ৬৫ হাজার ৪৭০ জন পুরুষ ভোটার।
স্থানীয় নেতাকর্মী ও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলা নির্বাচনে ভোটারদের মন জয় করে বিজয়ী হতে প্রার্থীরা নির্ঘুম প্রচারণা চালিয়েছেন। এবার ফলাফল দেখার পালা।
তবে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুই মেরুর দুই প্রার্থীর প্রেস্টিজ জড়িত। এ শঙ্কার মূলে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের স্থানীয় গ্রুপিং-সংঘাত ভোটারদের কপালে চিন্তার বলিরেখা টেনে দিয়েছে। গ্রুপিংয়ের কারণে এরইমধ্যে ঘটেছে হতাহতের ঘটনা।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আতাউর রহমান এ নির্বাচনী এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীর অনুসারী।
অপরদিকে দলের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদফতর সম্পাদক আখতারুজ্জামান চৌধুরী (জগলু চৌধুরী) বর্তমানে স্থানীয় রাজনীতিতে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগে সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর লোক হিসেবে পরিচিত। এর আগ পর্যন্ত এ বিদ্রোহী প্রার্থী শফিকুর রহমান চৌধুরীর আজ্ঞাবহ ছিলেন। উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীক না পেয়ে জগলু চৌধুরী বিদ্রোহী প্রার্থী হন। এ কারণে দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। তার ওপর থেকে চোখ ফিরিয়ে নেন শফিক চৌধুরীও।
এ সুযোগ হাতছাড়া করেন নি আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তাকে সমর্থন দিয়ে কাছে টেনে নেন। তৃণমূলে আনোয়ারুজ্জামানের পক্ষে নেতাকর্মীরা কাজ করলে প্রতিপক্ষ তাতে বাধা দেয়। এতে এলাকায় দলীয় গ্রুপিং বাড়ে।
এ নিয়ে এলাকায় সংঘর্ষ হয়। পরে শুধু আনোয়ার চৌধুরীর অনুসারীদের আসামি করে মামলা করা হয়।
কবিরকে আটকের পর ওসমানীনগর উত্তপ্ত হয়ে উঠলে এক পর্যায়ে তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। যদিও পুলিশ বলছে, তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছিল। এর প্রভাব পড়ে স্থানীয় রাজনীতিতে।
আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী দুই চৌধুরীর নেতাকর্মী-সমর্থকরাও বিভক্ত হয়ে নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীকে যেকোনো কিছুর বিনিময়ে বিজয়ী দেখতে মাঠে নেমে পড়েন।
নির্বাচনে দল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) আহমদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, কেন্দ্রীয় সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমানসহ অন্য নেতারা।
আওয়ামী লীগে দ্বিধাবিভক্তির এ সুযোগ কাজে লাগাতে চান বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী ময়নুল হক চৌধুরী। দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে নিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও দলের নিরঙ্কুশ সমর্থন তার পক্ষে নেই।
প্রথম অবস্থায় প্রকাশ্যে বিরোধিতা করলেও ইলিয়াস পত্মী লোনা এলাকায় এসে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে দেন। উপজেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল নেতাদের নিয়ে বসলে লোনার সামনেই সংঘাতে জড়ায় তারা। অবশ্য পরবর্তীতে তা মিটমাট হয়।
বিএনপি প্রার্থী ময়নুল হকের পক্ষে বিএনপির নিখোঁজ নেতা এম ইলিয়াস আলীর ইমেজ এবং শরিক দলগুলোর নিরব ভোট রয়েছে। যদিও বিএনপি দলীয় এ প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় দেখা যায়নি জেলা ও মহানগর কমিটির বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষসারির নেতাদের।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাতীয় পার্টির শিব্বির আহমদ। প্রবাসী ও সাবেক ছাত্রসমাজ নেতাকে বিজয়ী করতে যথেষ্ট খাঁটুনি দিয়েছেন নেতাকর্মীরা।
ভোটারদের মতে, মাঠে প্রচারণায় এগিয়ে জগলু চৌধুরী। নীরব ভোটে ময়নুল হক চৌধুরী। তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে আতাউর রহমানকে উড়িয়ে দেওয়ার নয়। সব শেষে আওয়ামী লীগ-বিএনপি ভোট ভাগাভাগি, আর দলীয় ব্যক্তিগত ইমেজ কাজে লাগিয়ে সংঘাত-সংঘর্ষ এড়িয়ে ভোটারদের সমর্থন আদায় করে কে হবেন নতুন উপজেলার অধিপতি? সে অপেক্ষার অবসান হচ্ছে বিকেলে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১৭
এনইউ/জেডএস