অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে নতুন নতুন পণ্য আমদানি ও যৌথ উদ্যোগে শিল্প স্থাপনে আগ্রহ দেখিয়েছে দেশটি।
বাংলাদেশে নিযুক্ত কাতারের রাষ্ট্রদূত আহমেদ মোহাম্মেদ আল দিহাইমী সোমবার (০৬ মার্চ) সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে দেখা করে এসব প্রস্তাব দেন।
এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রী ও কাতারকে সরকার ঘোষিত ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের (এসইজেড) যেকোনো একটিতে সে দেশের বড় বড় ব্যবসায়ী গ্রুপকে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেন।
রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক শেষে তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি, কাতারকে অনুরোধ করেছি, তাদের বড় বড় বিনিয়োগকারীরা যেন যেকোনো একটা জোনে বিনিয়োগ করে। তিনিও (রাষ্ট্রদূত) জানিয়েছেন, তাদের দেশের (কাতার) ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায়।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি (রাষ্ট্রদূত) এজন্য আমাদের সহযোগিতা কামনা করেন। সরকার তাদের কি ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত তাও জানতে চেয়েছেন। আমি তাকে বলেছি, আমাদের বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনেতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। তাহলেই আপনি অনেক তথ্য পাবেন।
কাতার বাংলাদেশের কোন কোন খাতে বিনিয়োগ করতে চায়-এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, খাতগুলো এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে আমরা ৭-৮টা ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছি। এখন এসব বিষয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের সমঝোতার কাজ চলছে। যার মধ্যে তরল গ্যাসও রয়েছে। আমরা তাদের কাছ থেকে এলএনজি ও সার নেবো। তারা এলএনজিতে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম। জাপান, কোরিয়ার মতো দেশ তাদের এলএনজিতে চলে।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, যাতে আমাদের দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আরো বৃদ্ধি পায়-সেটা আমরা আলোচনা করছি। গ্যাস সংকট মেটাতে আমরা এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করতে যাচ্ছি। এটা বেসরকারি খাতই করবে। তবে সরকারও একটি টার্মিনাল করছে। এটা ভাসমান টার্মিনাল হবে। আমাদের এ প্রকল্প এরইমধ্যে অনুমোদিত হয়েছে।
তিনি বলেন, বেসরকারিভাবে অনেকেই স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল করার আগ্রহ দেখিয়েছে। আমাদের এসব টার্মিনালের গ্যাসের মূল উৎস কাতার। এখানে ইরান থাকলেও এ বিষয়ে কাতারের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি আছে। সে ব্যাপারে সমঝোতা চলছে। এটা হলে ২০১৮ সালের মধ্যে গ্যাস সংকট দূর হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী আরো বলেন, তারা আমাদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক একটা চুক্তি করতে চাচ্ছে। তারা অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও কারিগরি সহযোগিতা বিষয়ে এ চুক্তি করতে চায়। এটার খসড়া নিয়ে আমরা আলোচনা করে চুক্তি করবো।
তিনি জানান, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে কাতারের দ্বৈত কর এড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদিত হওয়ার পর ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসবে।
মন্ত্রী বলেন, কাতার বাংলাদেশ থেকে বেশি পরিমাণে আগর ও আতর আমদানিতে আগ্রহী। এজন্য দ্রুতই কাতারের রাষ্ট্রদূত মৌলভীবাজার ভ্রমণে যেতে চান। তিনি আগর বাগান এবং কারখানা পরিদর্শন করতে আগ্রহী। আমি এরইমধ্যে এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার এবং জেলা প্রশাসককে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।
এর আগে কাতারের রাষ্ট্রদূত চট্টগ্রামের কবির স্টিল মিল (কেএসআরএম) ও কুষ্টিয়ার বিআরবি কেবলস কারখানা পরিদর্শন করেছেন বলেও জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, দেশটিতে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলে গেছে। এমনিতেই তাদের মাথাপিছু আয় দুই লাখ ডলার। ১১ লাখ বর্গকিলোমিটারের দেশটির জনসংখ্যা মাত্র ৫ লাখ। তাদের দেশে আমাদেরও প্রচুর লোক থাকে। সেখান থেকে প্রচুর রেমিট্যান্সও আসে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১৭
আরএম/জেডএস