সোমবার (০৬ মার্চ) রেজিস্ট্রি ডাকযোগে সংসদ সচিবালয়ের সচিব, আইন সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব বরাবর নোটিশ পাঠান আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ।
তিনি বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাল্য বিয়ের অনুমোদন সংক্রান্ত বিধানটি বাতিল বা প্রত্যাহারে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে হাইকোর্টে রিট করবো।
বিয়ের বয়স নির্ধারণে পুরুষরাও বিশেষ প্রেক্ষাপটে ছাড় পাবেন। এমন বিধান রেখে ২৭ ফেব্রুয়ারি বিকেলে সংসদে ‘বাল্য বিবাহ নিরোধ বিল-২০১৭’ পাস হয়েছে। এই বিল পাসের ফলে নারীদের মতো পুরুষরাও বিশেষ প্রেক্ষাপটে ১৮ বছরের আগেই বিয়ে করার সুযোগ পাবেন।
বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। বিল পাসের আগে জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব দেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম, সেলিম উদ্দিন, রওশন আরা মান্নান।
তবে তাদের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। এরপর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বিলটি পাসের প্রস্তাব কণ্ঠ ভোটে দিলে তা সর্বাধিক ভোটে পাস হয়।
বিভিন্ন মহলের আপত্তির মধ্যেই ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ মেয়েদের বিয়ের বয়সে ছাড়ের বিধান রেখে আলোচিত ‘বাল্য বিবাহ নিরোধ বিল-২০১৬’ সংসদে ওঠে গত ৮ ডিসেম্বর। ব্রিটিশ আমলে প্রণীত ‘চাইল্ড ম্যারেজ রেসট্রেইন্ট অ্যাক্ট-১৯২৯’ বাতিল করে নতুন আইন করতে বিলটি সংসদে তোলা হয়।
পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, আইনের অন্যান্য বিধানে যা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্ক সর্বোত্তম স্বার্থে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী এবং বাবা-মা’র সম্মতি অনুযায়ী বিধির মাধ্যমে নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিবাহ কার্যক্রম হলে তা এ আইনের অধীন অপরাধ বলে গণ্য হবে না। যা আগে অপ্রাপ্তবয়স্কের ক্ষেত্রে শুধু নারীদের কথা উল্লেখ ছিলো। এছাড়া ‘বিশেষ প্রেক্ষাপট’ বিধির মাধ্যমে নির্ধারিত রাখা হয়েছে।
প্রস্তাবিত আইনে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স আগের মতো ১৮ বছর রাখা হলেও ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ের সুযোগ রাখা হয়। এতে ক্ষেত্র বিশেষে ১৮ বছরের আগেও বিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, কোনো প্রাপ্তবয়স্ক নারী বা পুরুষ বাল্য বিয়ে করলে তিনি অনধিক দুই বছর কারাদণ্ড বা অনধিক এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। অনাদায়ে আরও তিন মাস কারাদণ্ড হবে।
আর অপ্রাপ্ত বয়স্ক নারী বা পুরুষ বাল্যবিবাহ করলে তারা এক মাসের কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
আইনজীবী আকন্দ বলেন, পাস হওয়া আইনটি সংবিধানের ৭, ১১, ১৫, ২৬, ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। এটি মুসলিম বিবাহ আইন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনেরও পরিপন্থী। এমনিতেই বাল্যবিয়ের দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম সারিতে। এই আইনের ফলে বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের হার আরও বাড়বে।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৩০ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১৭
ইএস/টিআই