বুধবার (০৮ মার্চ) দুপুরে সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আকবর হোসেন মৃধা নার্গিস হত্যাচেষ্টার রায়ে ৩২৬ ধারায় বদরুল আলমের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ২ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন।
প্রথমবারের মতো বাংলায় দেওয়া এই রায় বেলা সাড়ে ১১টায় পড়া শুরু করেন বিচারক।
বিচারক তার পর্যবেক্ষণের শুরুতে বলেন, নার্গিসের সঙ্গে বদরুল প্রেমের সম্পর্ক, তার বাড়িতে লজিং থাকা, এসব বিচার্য বিষয় নয়। সাক্ষীদের সাক্ষ্য থেকে আসামি বদরুলের সম্পৃক্ততা অবিশ্বাস করার মতো কোনো সাক্ষ্য পাইনি। উপর্যুপরি ১০টি আঘাতের ধরণ এবং চাপাতি কিনে আনার ঘটনা প্রমাণ করে, নার্গিসকে খুন করার পরিকল্পনা ছিল আসামির। কাজেই আমি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি, রাষ্ট্রপক্ষ আসামির বিরুদ্ধে সন্দেহাতীতভাবে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে।
নারী দিবসের কথা উল্লেখ করে বিচারক আকবর হোসেন মৃধা বলেন, আজ এমন একটি দিবস। নারী দিবস। নারীরা এখন দুর্বল নয়। কর্মক্ষেত্রে নারীরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছেন। এদেশ এগিয়ে যাচ্ছে একজন নারীর নেতৃত্বে। এদেশের প্রধানমন্ত্রী নারী। জাতীয় সংসদের স্পিকারও একজন নারী। জনপ্রতিনিধি থেকে প্রতিটি স্তরে নারীরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, এ দিবসে খাদিজাকে নৃশংস ও বর্বরোচিতভাবে কোপানোর অভিযোগে আসামি বদরুলের যথোপযুক্ত শাস্তি নারীদের সুরক্ষায় তাৎপর্যপূর্ণ ও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া নার্গিসকে এক জীবন্ত কিংবদন্তী নারী উল্লেখ করে রায় পর্যালোচনায় বলেন, প্রেমে প্রত্যাখ্যাত পাষণ্ড প্রেমিকের চাপাতির নৃশংস আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত খাদিজা দীর্ঘদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে মৃত্যুর কাছে হেরে না যাওয়া সমগ্র বিশ্ব নারী সমাজের প্রতীভূ, বিজয়িনী, প্রতিবাদকারিণী হিসেবে মনে করেন।
তিনি এও উল্লেখ করেন যে, পৃথিবীতে যুগেযুগে ভালোবাসা থাকবে। প্রেম প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। তাই বলে, নৃশংসতা কোনো জাতির কাম্য নয়। নারীদের মর্যাদার জন্য আদালতের এ রায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
এদিকে আদালতের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্র ও বাদী এবং বাদীপক্ষের আইনজীবী। নার্গিসের ওপর বর্বরোচিত হামলার মামলায় ন্যায়বিচার করেছেন আদালত। নারী দিবসে এ রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন তারা।
পক্ষান্তরে, রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়ে আপিল করবেন বলেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাজ্জাদুর রহমান চৌধুরী।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে মামলার বাদী ও খাদিজার চাচা আবদুল কুদ্দুস সাংবাদিকদের বলেন, আদালতের এ রায়ে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে উচ্চ আদালতে যদি আসামিপক্ষ আপিল করে, সেখানেও এ রায় বহাল থাকে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ কে এম শিবলী সাংবাদিকদের বলেন, আদালতের এ রায় বাংলাদেশের বিচার বিভাগের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। যুগান্তকারী এ রায় বিচার বিভাগের জন্যও মাইলফলক।
তিনি আরও বলেন, আশা করি সমাজে ঘাপটি মেরে থাকা অপরাধীরা এ রায়ের পর নিজেদের সংশোধনের চেষ্টা করবে।
সিলেট জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, সিলেটের এমনকি বাংলাদেশের ইতিহাসে ৩২৬ ধারায় আসামির যাবজ্জীবন বিরল। এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যাতে কেউ নারীদের ক্ষমতায়নে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, নারীর ওপর এ ধরনের নৃশংস আচরণ না হয় সেজন্য এ রায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, মার্চ ০৮. ২০১৭
এনইউ/জেডএস