ঢাকা, সোমবার, ১৯ মাঘ ১৪৩১, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

খেসারির ডাল খেয়ে সন্তান মানুষ করেছি

উর্মি মাহবুব, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৭
খেসারির ডাল খেয়ে সন্তান মানুষ করেছি মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির হাত থেকে ‘জয়িতা’ সম্মাননা গ্রহণ করছেন ফিরোজা বেগম। ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) নূরজাহান খানম। মা ফিরোজা বেগমকে নিয়ে এসেছেন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। তার মা পেয়েছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘জয়িতা-২০১৭’ পুরস্কার। সমাজের সব বাধা-প্রতিবন্ধকতাকে ডিঙিয়ে যারা শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হয়েছেন, তাদের দেওয়া হয়েছে এ ‘জয়িতা’ সম্মাননা। 

ফিরোজা বেগমও এসেছেন ‘জয়িতা’ পুরস্কার নিতে। অনুষ্ঠানস্থলে আসনে বসে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন।

চোখটা যেন খানিকটা ভিজে উঠলো। মনে পড়ছে বুঝি পেছনে ফেলা আসা শত কষ্টের দিনগুলো! 

মনে পড়ে সেই একাত্তর। পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছিলেন স্বামী আবদুল কাদের মিয়া। স্বাধীনতাযুদ্ধের ঘোষণা আসার পর কাদের মিয়া যোগ দেন সশস্ত্র লড়াইয়ে। যুদ্ধ করতে করতে ১ জুন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মুখোমুখি হন তিনি। সেই সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন দেশের তরে।

তারপর নয় সন্তানকে নিয়ে পঞ্চগড় থেকে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানার জামিলতা গ্রামে চলে আসেন ফিরোজা বেগম।  

সবচেয়ে ছোট সন্তানের বয়স তখন মাত্র ২ মাস। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটতো ফিরোজা বেগম ও তার সন্তানদের। জমিতে পড়ে থাকা খেসারির ডাল খেয়ে দিন কাটতে থাকে।  

সেই দিনগুলো বলেন ফিরোজা বেগম, ‘খেসারির ডাল খেয়ে সন্তান পালন করেছি ঠিক, কিন্তু তাদের লেখাপড়া বন্ধ করিনি। আমার সন্তানরাও পড়ালেখায় ভালো ছিলো। স্কুলের শিক্ষকরা তাদের যত্ন নিয়েছেন। ’দুই এএসপি সন্তান নূরজাহান বেগম ও মো. সামিউল আলমের সঙ্গে ‘জয়িতা’ ফিরোজা বেগম।  ছবি: জিএম মুজিবুরঅশ্রু সজল চোখে বলেন, ‘নিজে অনেক সময় জমিতে কাজ করেছি। সন্তানরা পড়ালেখাও করেছে, জমিতে কাজও করেছে। সন্তানদের কষ্ট দেখে কত রাত কেঁদে কাটিয়েছি। সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে সেলাই মেশিন কিনলাম। মেশিনে আশেপাশের বাড়ির মানুষের কাপড় সেলাই করে কিছুটা আয় হতো। তাই দিয়ে নয় সন্তানের পড়ালেখার খরচ চালিয়েছি। ’

সেই দুঃখ-সংগ্রামের দিনগুলো শেষ হয়েছে বহু আগেই। এখন কেবল সাফল্যে মুখ উজ্জ্বল হওয়ার দিন। ফিরোজা বেগমের নয় সন্তানই দেশ-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত।  

তার কন্যা নূরজাহান বেগম পুলিশের এএসপি, পুত্র মো. সামিউল আলমও তাই। এক কন্যা লন্ডনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনায়। অন্য ছয় সন্তানও স্ব স্ব কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।

জামালপুরের মাদারগঞ্জ সার্কেলে দায়িত্বরত সামিউল বাংলানিউজকে বলেন, হাজারো কষ্ট করে মা আমাদের মানুষ করেছেন। আমরা মাকে নিয়ে গর্বিত। কোনো পুরুষ মানুষ হলেও সহায়-সম্বলহীনভাবে নয় সন্তানকে এভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারতেন না।  

ফিরোজা এবার ‘জয়িতা’ পুরস্কার পেলেও ২০১১ সালে পান ‘রত্নগর্ভা’ পদক। এবার তার সঙ্গে আরও চার নারীকে ‘জয়িতা’ সম্মাননা দিয়েছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৭
ইউএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।