এর বাইরেও রয়েছে ইনোকটিন, সিডাক্সিন জাতীয় আরও কিছু ঘুমের কিংবা ব্যথানাশক ট্যাবলেটের কথা। সীমান্তজুড়ে এই নামগুলো খুব পরিচিত।
বিলোনীয়া, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার একটি নগর পঞ্চায়েত শাসিত এলাকা। আর সোনামুড়া, রাজ্যের সিপাহীজলা জেলার অন্তর্গত একটি মহকুমা। এ দু’টি জনপদের সীমান্ত এলাকা বর্তমানে ভারত থেকে বাংলাদেশে নিরাপদে ও অবাধে মাদকপাচার করছে। এখান দিয়ে প্রতি মাসে বাংলাদেশে ঢুকছে কোটি-কোটি টাকার মাদক। আর এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে সেখানকার মাদক ব্যবসায়ীদের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট।
কতগুলো মাদকের নামের মতোই পাচারকারীদের কতগুলো নামও শোনা যায় এসব এলাকা ঘুরে। তাতে রয়েছে, এপার-ওপার দুই দিকেরই মাদক ব্যবসায়ী।
সম্প্রতি বিলোনীয়া সংলগ্ন ফেনীর ফুলগাজী এলাকার বদরপুর সীমান্তে মাদক ব্যবসায়ীদের হামলায় বাংলাদেশি এক আনসার সদস্য নিহত এবং উপজেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আহত হওয়ার ঘটনার পর বাংলানিউজের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে এমন তথ্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশে সীমান্ত এলাকার একাধিক মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে শক্তিশালী এই মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের নানা তথ্য মেলে। জানা যায়, এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ত্রিপুরার বিল্লাল হোসেন নামের একজন। তার সঙ্গে আরো আছেন সোনামুডা, শ্রীনগরের দুলাল ঘোষ, গোলাপ, রতন,সহিদুল, মানিক লাল সহ আরো অনেকেই। তাদের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করছেন বাংলাদেশের আরো অর্ধ শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী।
বাংলাদেশেও রয়েছে ত্রিপুরার এই দুই অংশ দিয়ে আসা বাংলাদেশের মাদকের পরিচিত স্পট। এর মধ্যে অন্যতম ফেনীর ছাগলনাইয়া, পরশুরাম বিলোনীয়া, ফুলগাজী, ফেনী সদর উপজেলার ধর্মপুর, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা। এসব এলাকাতেই মাদকের নামগুলো যেমন পরিচিত তেমনি বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে ব্যবসায়ী চক্রের নামগুলোও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতের ত্রিপুরার বিভিন্ন পাহাড়েই গড়ে উঠেছে ফেনসিডিলের কারখানা। আর এসব কারখানা থেকেই প্রতিদিন বাংলাদেশে ঢুকছে এ মাদক দ্রব্য, যা তরুণ সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
কথা বলে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে, তা হচ্ছে- বাংলাদেশের তরুণ সমাজের মধ্যে এমনকি স্কুল কলেজ পর্যন্ত এই সব মাদক ছড়িয়ে পড়ছে, ফলে বাংলাদেশের ভবিষ্যত প্রজন্ম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এমনটা জানলেও তাতে ভ্রক্ষেপ করছে না ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। তারা জানিয়েছে, বাংলাদেশের তরুণ সমাজ নষ্ট হোক সেটাই তাদের চাওয়া। আর সে কারণেই মাদকপাচার রোধে ভারতীয় বাহিনীগুলো খুব একটা কার্যকর ভূমিকা রাখে না।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এ ব্যাপারে স্পিকটি নট। তারা কিছুই বলতে চাননি। আর তাতে সন্দেহ ঘনীভূত হয়।
আবদুস সাত্তার নামে ত্রিপুরার এক সংবাদকর্মী বাংলানিউজকে বলেন, ভারত চাইলে বহু আগে কফ সিরাপ জাতীয় নিষিদ্ধ ওষুধ উৎপাদন বন্ধ করতে পারে, কিন্তু করছে না। এক্ষেত্রে ত্রিপুরার পুলিশ অফিসারদের বক্তব্য হলো ‘যা শালা হগল খাইয়া মর’। মাদকপাচার হলো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের কূটনৈতিক ঠান্ডা যুদ্ধ।
এদিকে সীমান্তে অপরাধ ও মাদকপাচার বেড়ে যাওয়ায় ভারত সরকারের কাছে ও পারের অপরাধীদের তালিকা দিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু এতেও কোনো প্রতিকার মিলছেনা। প্রতিনিয়তই আসছে মাদক।
বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) কুমিল্লা ১০ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল সারওয়ার জানান, সর্বশেষ গেল মাসে বিজিবি-বিএসএফ এবং দুই দেশের প্রতিনিধিদের সদর পর্যায়ের বৈঠকে দুই দেশের অপরাধীদের তালিকা আদান-প্রদান হয়েছে।
এ ব্যাপারে বাংলানিউজের কথা হয়, ত্রিপুরার দক্ষিণ জেলার পুলিশ সুপার তপন দেব বর্মার সঙ্গে। তিনি আমাদের আগরতলা প্রতিনিধি সুদীপ নাথকে জানান, তার কাছে এ ধরনের কোনো তালিকা এখোনো এসে পৌঁছায়নি।
তিনি অবশ্য জানান, ত্রিপুরার পুলিশ প্রশাসন নিয়মিতই মাদক পাচারকারীদের ব্যাপারে অভিযান পরিচালনা করে আসছে, অপরাধীদের ধরার জন্য চেষ্টা করে করে থাকে তারা।
তিনি বলেন, মাদক সবার জন্যই ক্ষতিকর। এটি প্রতিরোধে সীমান্তে কড়া নজরদারিতে থাকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১২ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৭
এমএমকে