ঢাকা, সোমবার, ২০ মাঘ ১৪৩১, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ফসলের ক্ষেতে ‘ম্যাজিক’ দেখিয়ে কোটিপতি সাভারের অভি

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৭
ফসলের ক্ষেতে ‘ম্যাজিক’ দেখিয়ে কোটিপতি সাভারের অভি ফসলের ক্ষেতে ‘ম্যাজিক’ দেখিয়ে কোটিপতি সাভারের অভি; ছবি- দেওয়ান ইমন

সাভার (ঢাকা): ইচ্ছে ছিলো বিদেশে যাবার। দক্ষতা বলতে শূন্য । ছিলো না কোন বিশেষ ডিগ্রিও। তারপর কোন এক কারণে বিদেশ যাওয়া পণ্ড হওয়াটাই যেন ভাগ্য ফিরিয়ে দিলো সাভারের কোব্বাত হোসেন অভির। ভিনদেশি সবজি চাষ করে অভি আজ কোটিপতি। অজ পাড়াগাঁয়ে প্রাসাদোপম বাড়ি আর দামি গাড়িই এখন তার সাফল্যের স্মারক।অনেকের কাছে আদর্শ। এখন গ্রামটাকেই যেন বিদেশ বানিয়ে ফেলেছেন অভি।

বিদেশি সবজির টানে অনেক বিদেশিই ছুটে আসেন তার কাছে। প্রতি মাসে এই গ্রামে বসেই দশ লাখ টাকার ভিনদেশি সবজি বিক্রি করেন অভি।

এভাবে সাভারের মেইটকা গ্রামটিই এখন এক অর্থে পরিচিতি পেয়েছে ভিনদেশি সবজির গ্রাম হিসেবে।

কিভাবে?প্রতিবেদককে উৎপাদিত সবজি দেখাচ্ছেন স্থানীয় এক কৃষক; ছবি- দেওয়ান ইমন

সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়নের মেইটকা গ্রামের আব্দুল কাদেরের ছেলে অভি। চার ভাই পাঁচ বোনের মধ্যে তিনি অষ্টম। অনার্সে ভর্তি হয়েছিলেন। শেষ আর করতে পারেননি। এর মধ্যে বাবার মৃত্যু গোটা পরিবারকে ফেলে দেয় এক অনিশ্চয়তায়। চিন্তা করলেন বিদেশে পাড়ি দেবার। অন্তত ভাগ্যটা যদি বদলায় এই আশায়। কিন্তু সে আশাও গুড়ে বালি। বিদেশ যাওয়া পণ্ড হলে চেষ্টা করেন ঘুরে দাড়াঁতে। ভিন্ন কিছু করা ছাড়া যে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব না এটা মাথায় রেখেই শুরু করলেন ভিনদেশি সবজি উৎপাদনের কাজ। প্রথমে নিজের জমি। তারপর ফসলের উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় পড়শীদের জমি লিজ নিয়ে ব্যাপক পরিসরে শুরু করলেন ভিনদেশি সবজির চাষাবাদ। গড়ে তুললেন কৃষক বাংলা এগ্রো নামের কৃষি ফার্মের। সেই ফার্ম এখন বহু কৃষি শ্রমিকের রুটিরুজির ঠিকানা। এখানে কাজ করেন বহু নারী শ্রমিক। অভির হাত ধরেই এই অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এখন চেরি টমেটো, ক্যাপসিকাম, অ্যাসপারাগাস, সুইটকর্ন, ব্রকলি,বেবি কর্ন, আইজ বাক লেটুস, বিট রুট, থাই আদা, থাই পাতা, স্কোয়াশ, নীলাপাতা, বানচিং অনিয়ন, রেড ক্যাবেজসহ নানা জাতের সবজির হাসি। সাভারের মেইটকা গ্রামেই বিদেশি সবজি ফলাচ্ছেন অভি; ছবি- দেওয়ান ইমন

বিকেল না হতেই দূর দূরান্ত থেকে পাইকাররা ছুটে আসেন এই গাঁয়ে। এভাবেই সাভারের মেইটকা গ্রামের সবজি গুলশান, বনানী, বারিধারার কূটনীতিকের খাবার টেবিল থেকে পৌঁছে যায় বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও সিলেটেও।

অভির এই সাফল্য দেখে উদ্বুদ্ধ অন্যরাও। এখন গ্রামের অনেকেই চাষ করছেন ভিনদেশি এই সবজির। প্রচলিত চাষাবাদের পাশাপাশি ভিনদেশি সবজির চাষ করে এখন অনেকেই বদল করেছেন নিজেদের ভাগ্য। মেইটকা গ্রামে উৎপাদিত সবজি চলে যাচ্ছে দূর দূরান্তে; ছবি- দেওয়ান ইমনসাফল্যের চাবিকাঠি আসলে কোনটি?

‘আপনাকে আগে লক্ষ্য স্থির করতে হবে। সেই অনুযায়ী এগিয়ে যেতে হবে। আমার পূর্বপুরুষ ধানসহ প্রচলিত সবজির আবাদ করতেন। আমি ভাবলাম এই মাটিতেই ভিন্ন কিছু ফলনের। চাহিদাটা মাথার রেখে শুরু করলাম চাষাবাদ। ব্যস সাফল্য ধরা দিলো। জানান- কোব্বাত হোসেন অভি।

এখন গ্রামের অনেকেই আমার দেখাদেখি ভিনদেশি নানা সবজির আবাদ করেন। তাদের ভাগ্য বদল আমাকে আনন্দ দেয়। এভাবে আমি স্বপ্ন দেখি স্বনির্ভর এক বাংলাদেশের। ’ বাংলানিউজকে এভাবেই নিজের অনুভূতির কথা জানান অভি।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৭
আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।