শুক্রবার (২৪ মার্চ) সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে বিমানবন্দরের সামনের গোলচত্বরে পুলিশ বক্সের সামনে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে বোমা বহনকারী নিজেই নিহত হন।
বিমানবন্দরের ওই গোলচত্বরে রয়েছে ট্রাফিক পুলিশের উত্তরা অঞ্চলের সহকারী পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়, বিমানবন্দর ট্রাফিক পুলিশ বক্স এবং পুলিশের টহল পরিদর্শকের কার্যালয়। তবে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনারের কার্যালয় ও বিমানবন্দর ট্রাফিক পুলিশ বক্সের মাঝখানে অবস্থিত কাঁঠাল গাছের নিচে বোমা বহনকারী এসে দাঁড়ান।
বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার পর তার পাশ থেকে একটি বোমা উদ্ধার করা হয়। এ সময় তার সঙ্গে থাকা ট্রলি বেগের ভেতরে বোমা তৈরির বিভিন্ন বিস্ফোরক ও সরঞ্জাম পাওয়া যায়। ডিবি’র বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট তিন দফায় ঘটনাস্থলে থেকে উদ্ধার করা বোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করে।
এর মধ্যে ট্রলি ব্যাগে থাকা বোমাটি দুই দফায় নিষ্ক্রিয় করার সময় পুলিশের এক কনস্টেবলসহ ছয়জন আহত হন। স্প্লিন্টারের আঘাতে আহত হন পুলিশ কনস্টেবল আলমগীর হোসেন। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। স্প্লিন্টারের আঘাতে আহত বাকিদের মধ্যে একজন মহিয়ান মঞ্জু (২৭)।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) ছানোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, নিহত ওই ব্যক্তির পাশে একটি ছোট বোমা ছিল এবং ট্রলি ব্যাগের ভেতরে পুরোটাই বোমা তৈরির বিস্ফোরক ও উপাদান ছিলো। যার মধ্যে রয়েছে লোহার টুকরা, গোল লোহার বল।
তিন দফায় উদ্ধারকৃত অবিস্ফোরিত বোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয় বলেও জানান তিনি।
এর আগে, বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলের আশপাশের বিভিন্ন দোকানদার ও সাধারণ মানুষ আতষ্কিত হয়ে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি শুরু করেন। পরে পুলিশ ও ৠাব সদস্যরা এসে ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলেন। নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।
নিহত ব্যক্তির পরনে জিন্স প্যান্ট ও ফুল হাতার শার্ট ছিল উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, তার পেটের বাম পাশে বোমা বাঁধা ছিল। সে কারণে বিস্ফোরণে পেটের বাম পাশ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। নিহত ব্যক্তির পরিচয় জানা যায়নি, তবে তার বয়স আনুমানিক ৩০-৩২ বছর। ওই ব্যক্তির পরিচয় তদন্ত করে বিস্তারিত জানা যাবে।
ডিএমপি কমিশনারের ব্রিফিংয়ের আগ থেকেই ঘটনাস্থলে তৎপর হয় ডিবি ও ৠাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এবং সিআইডি ক্রাইম সিন ইউনিট। তার ব্রিফিংয়ের পর ডিবির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট নিহত ব্যক্তির বহন করা ট্রলিটি তল্লাশি করে। পরে সেখান থেকে অবিস্ফোরিত বোমা জব্দ করা হয়। এরপর পৃথক সময়ে বোমাগুলো বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এ সময় বিমানবন্দর সড়কের উভয় পাশের যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ‘কোনো হামলা নয়’। তিনি বলেছেন, দেখে মনে হচ্ছে, এটা হামলা নয়। নিহত ব্যক্তি ট্রলি ব্যাগে (ট্রাভেল ব্যাগ) করে বোমা বহন করছিল। তবে পুলিশের ব্যাপক অবস্থান দেখে অতি সতর্কতাবশতঃ বোমাটি বিস্ফোরণ হয়ে গেছে।
এদিকে, বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত হামলাকারীর ময়না তদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে নেওয়া হয়। শুক্রবার দিনগত রাত আড়াইটার দিকে মরদেহটি ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ।
স্প্লিন্টারের আঘাতে আহত পুলিশ কনস্টেবলের নাম আলমগীর হোসেন। তিনি কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তার গাড়ির চালক বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৬০০ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৭
এসজেএ/পিএম/এজেডএস/জেডএস