শনিবার (২৫ মার্চ) সকাল ৮টা ২৮ মিনিটে ‘অপারেশন টোয়ালাইট’ শুরু থেকে এভাবেই চলছে গুলিবর্ষণ ও বোমা বিস্ফোরণ। ফলে বারুদের গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো এলাকায়।
এরইমধ্যে জঙ্গি আস্তানা ‘আতিয়া মহল’র চারপাশের দেড় কিলোমিটারের অভ্যন্তরের বাসিন্দাদের বাড়ি থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
দিনে বা রাতে কখনোই থেমে নেই গুলির শব্দ। কখনো জঙ্গিদের ছোঁড়া বোমা বিস্ফোরণের শব্দে প্রকম্পিত হয়ে উঠছে পুরো এলাকা। এভাবে অভিযানের তিনদিন পেরিয়ে সোমবার (২৭ মার্চ) চতুর্থ দিনে গড়িয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, বাতাসে বারুদের গন্ধ ভেসে আসায় আমরা আতঙ্কে রয়েছি। মনে হয়, এই বুঝি গুলি ছুটে এলো। এমনটি বলেছেন শিববাড়ি সংলগ্ন জৈনপুর এলাকার বাসিন্দা পোল্ট্রি ব্যবসায়ী আব্দুল খালিক (৬৫)। তিনি বলেন, শুক্রবার (২৪ মার্চ) ভোর থেকে আতিয়া মহল নামে উস্তার মিয়ার বাড়িটি ঘেরাও করে পুলিশ। পরদিন শনিবার সকাল থেকে গুলিবর্ষণ ও বোমা বিস্ফোরণের শব্দ। আতঙ্কে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে অন্য এলাকায় আত্মীয়ের বাড়িতে অবস্থান করছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও এভাবে গুলির শব্দ শুনেননি বলে মন্তব্য তার।
আব্দুল খালিকের মতো এভাবে বাড়ি ছাড়া শিববাড়ি সংলগ্ন জৈনপুর, তালুকদারপাড়া, মাঝেরহাট, পশ্চিমপাড়া, কৈতপাড়া ও পাঠানপাড়া এলাকার বাসিন্দারা।
শুক্রবার সকাল থেকে এসব এলাকায় গ্যাস সংযোগও বিচ্ছিন্ন রয়েছে বলে জানিয়েছেন শিববাড়ি এলাকার বাসিন্দা তাঁরা মিয়া।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, নিজেদের ঘরবাড়ি থাকার পরও আমরা নির্বাসিত। এখন আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে অবস্থান করছি। প্রায় তিন কিলোমিটারের মধ্যে লোকজনকে চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। এ কারণে এলাকার বাসিন্দারা সওদা করতেও যেতে পারছেন না। স্থানীয় নিহা রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী ছিদ্দেক আলী বাংলানিউজকে বলেন, অভিযানের কারণে ব্যবসা বন্ধ। দোকানে বসতে পারিনি, বারুদের গন্ধ আসে। কয়েকদিন ধরে আমরা এমন আতঙ্কে আছি।
সোমবার বেলা পৌনে ১১টায় একটি গ্রেনেড বিস্ফোরণের শব্দ প্রকম্পিত করে পুরো এলাকা। দুপুর ১২টা পর্যন্ত থেমে থেমে জঙ্গি আস্তানার দিকে গুলিবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে যৌথবাহিনীর অভিযানিক দল।
গত শুক্রবার (২৪ মার্চ) ভোরে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার শিববাড়ি এলাকায় আতিয়া মহলে জঙ্গি আস্তানার খবর পেয়ে অভিযান চালায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর থেকেই প্রথমে বাড়িটি, পরে পুরো এলাকা ঘিরে রাখা হয়। জঙ্গিদের আটক এবং জিম্মিদের মুক্ত করতে শনিবার সকাল থেকে শুরু হয় ‘অপারেশন টোয়ালাইট’। শনিবার সন্ধ্যায় দু’দফা বোমা বিস্ফোরণে ২ পুলিশসহ ৬ জন নিহত হন। এছাড়া আহত হয়েছেন সাংবাদিক, পুলিশ ও র্যাব সদস্যসহ ৩২ জন। এ ঘটনায় এসএমপির মোগলাবাজার থানায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা (নং-০৭(০৩)’১৭) দায়ের করেছেন।
রোববার বিকেল সাড়ে ৫টায় ১৭ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান সাংবাদিকদের জানান, সেনা অভিযানে ভেতরে দুই জঙ্গি নিহত হন। ভেতরে আরো জঙ্গি থাকতে পারেন, এ কারণে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
আরও পড়ুন
**সিলেটে জঙ্গি হামলায় হতাহতের ঘটনায় মামলা
** ২ জঙ্গি নিহত, আছে আরও, অভিযান চলবে
** রাতেও বিস্ফোরণ, গুলির শব্দ, উৎকণ্ঠায় শিববাড়ি এলাকা
** প্যারা-কমান্ডোদের ‘অপারেশন টোয়ালাইট’র খণ্ডচিত্র
** আতিয়া মহলে নিহত দুই জঙ্গি
** আতিয়া মহলে অভিযান চলবে
**সিলেটে অভিযানস্থলে থেমে থেমে সংঘর্ষ
**জঙ্গি আস্তানার কাছে বিস্ফোরণে ২ পুলিশসহ নিহত ৫, আহত ৩২
** অভিযানস্থলের কাছে বোমা বিস্ফোরণে নিহত ২, আহত ৩৫
** অভিযানস্থলের কাছে বোমা বিস্ফোরণে পুলিশসহ নিহত ২
** বোমা বিস্ফোরণে আহত যুবকের হাসপাতালে মৃত্যু
** জঙ্গি আস্তানায় প্যারা-কমান্ডো সদস্যরা
** বেসরকারি কোম্পানির নামে ফ্ল্যাট ভাড়া নেয় জঙ্গিরা
** সিলেটে অভিযানে যাচ্ছে সোয়াট টিম
** সিলেটে পৌঁছেছে সোয়াট টিম
** জঙ্গি আস্তানার চার পাশে অবস্থান সোয়াট টিমের
** আত্মসমর্পণে সাড়া দিচ্ছে না জঙ্গিরা
** জঙ্গি আস্তানায় সোয়াট টিমের অভিযান
** জঙ্গি আস্তানার সামনে দুই অ্যাম্বুলেন্স
** হাতকড়া পরিহিত একজনকে বের করেছে সোয়াট
** অভিযানস্থলে ক্রেন-জেনারেটর, এসেছে ফায়ার সার্ভিস
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৭
এনইউ/জেডএস