ঢাকা, শুক্রবার, ২৪ মাঘ ১৪৩১, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

আইপিইউ সম্মেলনে আলোর ঝলকানিতে ‘বাংলাদেশ’

মহিউদ্দিন মাহমুদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০১৭
আইপিইউ সম্মেলনে আলোর ঝলকানিতে ‘বাংলাদেশ’ আইপিইউ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান/ছবি: পিআইডি

ঢাকা: রঙিন আলোর ঝলকানির মধ্যে হঠাৎ চারদিক অন্ধকার। গুলির শব্দ-আর্তনাদ। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা লাশের স্তূপ। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় বিশেষ এ উপস্থাপনা বিশ্ববাসীকে আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিলো একাত্তরের পাকিস্তানি হানাদারদের সেই গণহত্যার কথা। এরকম অনেক চমকপ্রদ উপস্থাপনায় উদ্বোধন হলো ১৩৬তম আইপিইউ সম্মেলন।

শনিবার (১ এপ্রিল) রাতে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) এ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে লেজার শো, প্রামাণ্য চিত্র ও মঞ্চায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংগ্রামের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, গ্রাম-বাংলার সংস্কৃতি ও জীবনচিত্রসহ অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তুলে ধরা হয়।

সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় আইপিইউ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।


শুরুতে একটি ডকুমেন্টরির মাধ্যমে ভাষা আন্দোলন, শোষিত-বঞ্চিত বাঙালির অধিকার আদায়ের সংগ্রাম, ৭ মার্চের ভাষণ, স্বাধীনতা সংগ্রামসহ যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গঠনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা তুলে ধরা হয়।

প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখার পর সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রামাণ্য চিত্র, লেজার শো ও মঞ্চায়নের মাধ্যমে ভাষা আন্দোলন, পাকিস্তান আমলে বাঙালির অধিকার আদায়ের আন্দোলন, ৭ মার্চসহ স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়।

এরপর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আলোর ঝলকানি হঠাৎ নেমে এলো আলোর ঝলকানি। তুলে ধরা হয় ২৫ মার্চসহ মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদারদের গণহত্যার দৃশ্য।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা/ছবি: পিআইডিযুদ্ধকালীন সময়ে শরণার্থীদের দেশ ত্যাগ, স্বাধীনতার ঘোষণা, বাংলাদেশ বেতারের অবদান, উজ্জীবিত বাঙালির সশস্ত্র সংগ্রাম, ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে বিজয়ের দৃশ্য তুলে ধরা হয় মঞ্চায়নের মাধ্যমে।

ঢেঁকিতে ধান ভানা, গ্রামের জীবনযাত্রা-কর্মচাঞ্চল্য, মাছ ধরা, সারি গানের সঙ্গে নৌকা বাইচ, হাডুডু, সোনালী আঁশ পাট চাষ, সংগ্রহ, নৌকায় ঘুরতে ঘুরতে শাপলা ফুল তোলা, বৈশাখী মেলার বৈচিত্র্য, মৃৎশিল্প, বায়োস্কোপ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির মধ্যে স্বাধীন ধর্মচর্চা, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা-প্রযুক্তিতে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার চিত্র মঞ্চায়ন করা হয় অনুষ্ঠানে।

মঞ্চে সারি গানের সঙ্গে নৌকা বাইচ, ধান ভানা কিংবা জাল দিয়ে মাছ ধরার দৃশ্য কিছুক্ষণের জন্য নিয়ে ‍যায় বাংলার কোনো গ্রামে।

গ্রাফিক্স অ্যানিমেশন ও লেজার শোর মাধ্যমে পদ্মাসেতু, কর্ণফুলী টানেলসহ দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন চিত্র, স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার, মসজিদ-মন্দির, তরুণ জনশক্তি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সহজ-সরল কর্মঠ মানুষসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সম্ভাবনার কথা দেশি-বিদেশি অতিথিদের সামনে তুলে ধরা হয়।

১৭৩টি দেশের সংগঠন আইপিইউভুক্ত দেশগুলোর সংসদ সদস্য, বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক সংস্থার প্রতিনিধিসহ দেশি-বিদেশি কয়েক হাজার অতিথি এ অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় বসে তারা জানতে পারেন গোটা বাংলাদেশকে।

অনুষ্ঠান আকর্ষণীয় করে তুলতে এরই মধ্যে সংসদের ভেতরের রাস্তায় স্থাপিত হয়েছে নানা রঙের মরিচবাতি শোভিত বৃক্ষ।

সম্মেলন উদ্বোধনের সঙ্গে আইপিইউ ওয়েব টিভির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, আইপিইউর সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী ও সেক্রেটারি জেনারেল মার্টিন চুংগং।

 অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মহাসচিবের বার্তা পড়ে শোনান সহাকারী সেক্রেটারি জেনারেল মিরোস্লাভ জেনকা।
২ এপ্রিল থেকে ৫ এপ্রিল আইপিইউ সম্মেলনের বিভিন্ন সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে।

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে ১৩৬তম আইপিইউ সম্মেলন।

এবারের সম্মেলনে মূল প্রতিপাদ্য, ‘সমাজের বৈষম্য নিরসনের মাধ্যমে সবার মর্যাদা ও মঙ্গল সাধন। ’
 
বাংলাদেশ সময়: ০১৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০১৭
এমইউএম/এএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।