ঢাকা, শুক্রবার, ২৪ মাঘ ১৪৩১, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

লাইনম্যান নামে বেপরোয়া চাঁদাবাজরা  

অন্তু মুজাহিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০১৭
লাইনম্যান নামে বেপরোয়া চাঁদাবাজরা   ফুটপাত দখল করে বসছে হকাররা-ছবি আনোয়ার হোসেন রানা

ঢাকা: ঢাকা সিটি কর্পোরেশন হকার উচ্ছেদে নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও এখনো পুরোপুরি দখলমুক্ত হয়নি ফুটপাত। তবে অভিযান অব্যাহত থাকায় স্থায়ীভাবে হকাররা বসতে পারছেন না কোথাও। ভ্রাম্যমান এসব হকার সকাল-বিকাল এখানে-সেখানে ছোটাছুটি করে বিক্রি করছেন পণ্য।

হকাররা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে কাঙ্ক্ষিত সমাধান পাননি আর এ সুযোগে লাইনম্যানরা মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তাদের কাছ থেকে। হকারদের ভাষায়, তাদের সামনে লাইনম্যানরা রীতিমত চাঁদাবাজের ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।

লাইনম্যানদের বেপরোয়া কায়দায় টাকা ওঠানোয় বিরক্ত পথপার্শ্বের এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।  

সম্প্রতি রাজধানীর গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম, জিপিও, ক্রীড়াভবন, দৈনিক বাংলা, স্টেডিয়াম, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, মতিঝিল, ফকিরাপুল, টিকাটুলি, নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, ঢাকা কলেজ, গাউছিয়া, যাত্রাবাড়ী, শাহবাগ, মালিবাগ, মৌচাক, ফার্মগেট, মিরপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হকার উচ্ছেদ করা হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, এখনো অনেক এলাকায় দখলমুক্ত হয়নি ফুটপাত। হকাররা কোথাও কোথাও আবারও বসে গেছেন চৌকি নিয়ে, আবার কোথাও বসেছেন চাদর মুড়িয়ে। তবে এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর ভোগান্তি কমেনি। প্রতিমুহূর্তে ধরা পড়ার ভয় তাদের তাড়া করছে। এই বুঝি পুলিশ আসে, ধরে নিয়ে যায়। একদিকে, পুলিশের নিয়মিত অভিযানে দৌড়ের উপর থাকতে হয়। অন্যদিকে লাইনম্যানদের বেপরোয়া চাঁদাবাজি।  

লাইনম্যানরাও আবার এই চাঁদাবাজিটা করে থাকে রাজনৈতিক নেতা, প্রভাবশালী ব্যক্তি ও পুলিশকে ম্যানেজ করে। এমনটাই  দাবি গুলিস্তানের এক হকারের।

ফুটপাত দখল করে বসছে হকাররা-ছবি আনোয়ার হোসেন রানাআলাপচারিতায় গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের হকার মনিরুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা তো আর ফ্রি এখানে ব্যবসা করছি না। প্রতিদিন সন্ধ্যায় তিন চার দফায় টাকা দিতে হয়। কাউকে ৩০০, ২০০,১০০, ৫০ এভাবে দিন শেষে হাজার টাকা চলে যায়। না দিলে তো আর ব্যবসা করতে দেবে না। তাই বাধ্য হয়ে সবাইকে ম্যানেজ করে চলতে হচ্ছে। ’

ফার্মগেটে ফুটপাতের এক জুতাবিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, ফুটপাতে বসতে অনেক স্থায়ী দোকানের মতো অগ্রিম টাকা গুনতে হয় হকারদের। তাছাড়া নিয়মিত চাঁদা তো আছেই। ভাড়ার দোকানে যে খরচা, ফুটপাতে ব্যবসা করতে খরচা তার চেয়ে মোটেই কম নয়।

ফল বিক্রেতা মজিদ মিয়া ক্ষোভের সঙ্গে জানালেন, প্রতিদিন লাইনম্যান, আনসার, নেতা সবাইকে টাকা দিতে হয়। না দিলে তারা বসতে দেবে না। নানা সময় হুমকি ধমকিও দেয়। তাই চাঁদাবাজির শিকার হওয়ার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ফলের দামও বেশি রাখতে হচ্ছে। ’

দেখা যায়, উচ্ছেদের পর স্পর্শকাতর জায়গাগুলোতেও আবার হকার বসেছেন। বঙ্গভবনের পাশে দিলকুশাজুড়ে হকাররা বসে গেছেন পণ্য নিয়ে। একই অবস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সোনালী ব্যাংকের সামনেও।
ফুটপাথে ফলের পসরা সাজিয়ে বসেছে ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ী
একাধিক হকার জানান, অনেকেই ফুটপাতের পাকা স্থাপনায় বসে ব্যবসা করতেন। লাইনম্যান, চাঁদাবাজ ও স্থানীয় মাস্তানরা তাদের বসিয়েছিল। বিনিময়ে তারা অগ্রিম টাকা নেয়। কোনো কোনো দোকানের জন্য এক-দেড় লাখ টাকা অগ্রিম নেওয়া হয়েছে এমন অভিযোগও রয়েছে। উচ্ছেদের তালিকায় ওইসব পাকা স্থাপনাও রয়েছে। কিন্তু হকাররা যে অগ্রিম দিয়েছিলেন সেটাকা আর তা ফেরত দেননি চাঁদাবাজরা। উচ্ছেদের পর আরেকদফা চাঁদা নিয়ে ওইসব স্থানে আবারো হকার বসানো হয়েছে।  

ভূক্তভোগী হকাররা অভিযোগ করেন, এক দিকে হকার উচ্ছেদ হচ্ছে, অপর দিকে লাইনম্যান ও চাঁদাবাজরা তাদের চাঁদার রেট বাড়ছে। হকাররা চান, সরকার ও কর্তৃপক্ষ মানবিক দিকটা বিবেচনা করে তাদের জীবন-জীবিকার এই সমস্যার স্থায়ী একটা সমাধান করে দেবেন।

বাংলাদেশ হকার ফেডারেশনের সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, ফুটপাত নিয়ন্ত্রণ করে লাইনম্যানরা। লাইনম্যান নামধারী চাঁদাবাজরাই হকারদের বসায়। একজন হকার বসাতে পারলেই এ মুহূর্তে একজন লাইনম্যানের দিনে ১০০-২০০ টাকা উপার্জন। চাঁদাবাজদের পুঁজি হচ্ছে নিরীহ এ হকারেরা। এদের এই নৈরাজ্য বন্ধ করা গেলে এসব ছোট ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি কমবে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০১৭
এএম/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।