এরইমধ্যে মাথায় বাজ ভেঙে পড়ার মতো খবর আসে।
সদ্য জন্ম দেওয়া তার সেই ফুটফুটে নবজাতককে পাওয়া যাচ্ছে না।
এরইমধ্যে নবজাতক চুরির খবরটি পুরো হাসপাতালে ছড়িয়ে পড়ে। স্বামী মো. রুবেল ছুটে আসেন। নানী রেহেনা বেগম ছোটাছুটি শুরু করেন। অনেক খোঁজাখুজি করেও নবজাতকের সন্ধান মেলাতে ব্যর্থ হন হোসনে আরার স্বজনরা। এ খবর শুনে যন্ত্রণায় কাতর হোসনে আরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
তার বুক ফাঁটা কান্নায় চারদিকের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। উপস্থিত সবাই তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেন। সেই থেকে সন্তান হারানোর শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন এ নারী।
নাওয়া-খাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে তার। ঘুমের ঘোরেও চিৎকার দিয়ে উঠছেন তিনি। স্বজনরা তাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু কিছুই খাওয়াতে পারছেন না।
রোববার (০২ এপ্রিল) বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ৩৫ নং বেডে কোনোরকমে বসে আছেন হোসনে আরা। তাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন তারই খালা মাহমুদা বেগম। মা রেহেনা বেগমসহ অন্য স্বজনরা তাকে খাওয়াতে ব্যর্থ হন।
সদর উপজেলার ঝোপগাড়ী এলাকার বাসিন্দা দোকান কর্মচারী মো. রুবেলের সঙ্গে প্রায় দেড় বছর আগে বিষয়ে হয় হোসনে আরার। প্রসব বেদনা উঠলে মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) দুপুরে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার প্রসূতি বিভাগের ৩৫ নং বেডে তাকে ভর্তি করান স্বামী।
পরদিন বুধবার (২৯ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সিজারের মাধ্যমে ফুটফুটে এক ছেলে সন্তানের জন্ম দেন হোসনে আরা। ভর্তির পর থেকেই প্রসূতির সঙ্গে ছিলেন নানী রেহেনা বেগম। শুরু থেকেই প্রসূতি ও বাচ্চার দেখভাল করে আসছিলেন তিনি।
এরইমধ্যে ওই নানীসহ আশেপাশের বেডে থাকা অন্য রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে হাসপাতালে অবস্থানকারী অচেনা এক নারীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নানা অজুহাতে অচেনা ওই নারী হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘোরাঘুরি করেন। একইভাবে হাসপাতালের বেডেও যাতায়াত করেন।
শুক্রবার (৩১ মার্চ) হাসপাতালের ১৫নং বেডের মেঝেতে রাতযাপন করেন ওই নারী। হাসপাতালে ভর্তি না হয়েই এসব কর্মকাণ্ড করেন তিনি।
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার ঘটনা। চিকিৎসকের পরামর্শে নবজাতককে নিয়ে নানী বাইরে রোদে যান। এসময় অচেনা ওই নারীও তার সঙ্গে যান। একপর্যায়ে নবজাতক পায়খানা করলে ওই নারী তাকে তোয়ালে বা অন্য কাপড় আনতে বলেন।
এ সুযোগে নবজাতককে নিজের কোলে নেন ওই নারী। ফিরে এসে নবজাতকসহ ওই নারীর আর দেখা পাননি নানী। মুহূর্তে নবজাতককে নিয়ে উধাও হয়ে যান। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। নিজেদের দায়িত্বহীনতা এড়াতে কর্তৃপক্ষ পুলিশকে ঘটনাটি জানায়।
ওইদিন বিকেলে হাসপাতালের পক্ষ থেকে ‘আপনার সন্তানকে অপরিচিত ব্যক্তির নিকট দিবেন না’ আদেশক্রমে কর্তৃপক্ষ- এরকম কাগজ বিভিন্ন স্থানে সাঁটিয়ে দেওয়া হয়।
আমিনুল ইসলাম ও ফারজানা আকতার দম্পতি বাংলানিউজকে বলেন, এটা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এক ধরনের দায়সারা কাজ। তাও কাজটি আগে করলে হতো। মায়ের বুক খালি হওয়ার পর সবাইকে সতর্ক করে লাভ কি?
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০১৭
এমবিএইচ/জেডএস