ইট তৈরিতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে মাটি। ইটভাটার এসব মাটি আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে রেজিস্ট্রেশনবিহীন মহেন্দ্র ট্রাক্টর।
সম্প্রতি সরেজমিনে সিংগাইর-হেমায়েতপুর সংযোগ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে এসব ইটভাটার। উপজেলার গাড়াদিয়া, খোলাপাড়া, বলধারা, চান্দইর, চারিগ্রাম, সাহরাইল ও ধল্ল্যায়তেও গড়ে উঠেছে বেশ কিছু ইটভাটা।
প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাক্টরে করে ইটাভাটায় মাটি সরবরাহের কাজে ব্যস্ত থাকে চালকেরা। এসব চালকের বেশিরভাগই শিশু-কিশোর। যাদের বয়স মাত্র ১১ থেকে ১৬ বছর।
মাটিভর্তি এসব ট্রাক্টর যত্রতত্র দুর্ঘটনাও ঘটাছে। ট্রাক্টরগুলোর বডির তুলনায় সামনের অংশে চালকের বসার স্থানটি হালকা ও কম সুরক্ষিত হওয়ায় দুর্ঘটনার সময় চালকদেরই প্রাণহানির সম্ভাবনা বেশি। অভাব-অনটনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ এসব ট্রাক্টর চালানোর পেশায় জড়িয়ে পড়ছে এলাকার শিশু-কিশোরেরা।
মোটরসাইকেলসহ অবৈধ যেকোনো যানবাহনের ওপর পুলিশের কড়া নজর থাকলেও রেজিস্ট্রেশনবিহীন মাহেন্দ্র ট্রাক্টর পার পেয়ে যাচ্ছে অনায়াসে।
কালিয়াকৈর এলাকার রমেজ উদ্দিনের ছেলে মাহেন্দ্র ট্রাক্টর চালক হৃদয় হোসেন (১৩) বাংলানিউজকে জানায়, পারিবারের অভাব-অনটনের কারণেই সে দুই বছর আগে মাহেন্দ্র চালকের সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করে। এখন সে নিজেই পুরোদমে মহেন্দ্র চালক হয়ে গেছেন।
উপজেলার গোবিন্দল এলাকার আলী আকবরের ছেলে মহেন্দ্র চালক আলী রাজ (১৬) বাংলানিউজ বলেন, বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে এই সময় ইটভাটার মৌসুম থাকায় এখন আয়ের পরিমাণ বেশি। প্রতিমাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা আয় (মাটির ট্রিপ অনুযায়ী বেতন) থাকে। যা বছরের অন্যান্য সময়ে এই আয় হয় ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা। অল্প বয়সে লাইসেন্স ছাড়া মহেন্দ্র চালানোর কারণে বিভিন্ন সময়ে তাদের পুলিশ আটক করে।
তবে পুলিশি ঝামেলা মহেন্দ্র মালিকেরাই সমাধান করেন বলেও জানান আলী রাজসহ একাধিক চালক।
মহেন্দ্র ট্রাক্টরের মেকানিক সঞ্জয় মন্ডল বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশে মহেন্দ্র ট্রাক্টরের রেজিস্ট্রেশন দিচ্ছে না সরকার। এ কারণে সিংগাইরের শতাধিক মহেন্দ্র মালিক বিপাকে পড়েছেন। তবে থানা পুলিশকে ম্যানেজ করলে তেমন কোনো সমস্যা হয় না।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক মহেন্দ্র ট্রাক্টরের মালিক বলেন, চালকের লাইসেন্স ও মহেন্দ্রের রেজিস্ট্রেশন না থাকার কারণে রাস্তাঘাটে মাঝে মধ্যে পুলিশি ঝামেলা পোহাতে হয়। তবে টাকা পয়সা দিয়ে এসব সমস্যার সমাধান করা যায়।
সিংগাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার ইমাম হোসেন বাংলানিউজকে জানান, সিংগাইর এলাকায় শিশু-কিশোরেরা অবৈধ মহেন্দ্র চালানোর কাজে জড়িত রয়েছে। যে কারণে যত্রতত্র দুর্ঘটনাও ঘটছে। গাড়িগুলোর কোনো রেজিস্ট্রেশন নেই। এসব অবৈধ গাড়িগুলো রাস্তাঘাটে পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। এ ব্যাপারে সিংগাইর থানা পুলিশ যথেষ্ট সর্তক রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
তবে থানা পুলিশের সদস্যদের টাকা পয়সা লেনদেনের বিষয়টি সম্পর্কে ওসি বলেন, সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পেলে অবশ্যই দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০১৭
জিপি/এমজেএফ