ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১, ১৪ মার্চ ২০২৫, ১৩ রমজান ১৪৪৬

জাতীয়

বিমানবন্দর সড়কে মুক্তিযুদ্ধের সর্বোচ্চ ভাস্কর্য ‘বীর’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০১৭
বিমানবন্দর সড়কে মুক্তিযুদ্ধের সর্বোচ্চ ভাস্কর্য ‘বীর’ বিমানবন্দর সড়কে মুক্তিযুদ্ধের সর্বোচ্চ ভাস্কর্য ‘বীর’। ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল-বাংলানিউজ

ঢাকা: পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে গ্রেনেড ছুড়ে মারছেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। ঠিক সামনে অস্ত্র হাতে এগিয়ে যাচ্ছেন বাংলার স্বাধীনচেতা নারী। সঙ্গে রাইফেল তাক করে যুদ্ধজয়ে উদ্যত আরও দু’জন মুক্তিযোদ্ধা।

পেছনে পতপত করে উড়ছে তৎকালীন বাংলাদেশের পতাকা। এভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে নির্মিত হয়েছে দেশে মুক্তিযুদ্ধের সর্বোচ্চ উচ্চতার ভাস্কর্য ‘বীর’।

তিন মাসে প্রায় শেষ হয়েছে ৫৩ ফুট উচ্চতার এ ভাস্কর্যের নির্মাণ কাজ।

বনানী-বিমানবন্দর সড়কের নিকুঞ্জের ১ নম্বর গেট বরাবর এ ভাস্কর্য চারদিক থেকে দৃশ্যমান। খুব কাছে বিমানবন্দর হওয়ায় আশপাশে বহুতল ভবন নেই বলে এটি দেখা যাবে দূর থেকেও। ঠিক ওপরে প্লেনের উড্ডয়ন রোড হওয়ায় আকাশ থেকেও ‘বীর’ ভাস্কর্যটি দৃশ্যমান হবে। বিমানবন্দর সড়কে মুক্তিযুদ্ধের সর্বোচ্চ ভাস্কর্য ‘বীর’।  ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল-বাংলানিউজ
শত বছর আয়ু ধরে নির্মাণ করা এ ভাস্কর্য বাংলাদেশের অন্য সব ভাস্কর্য থেকে স্বতন্ত্র এবং দৃষ্টিনন্দন। সন্ধ্যা হলেই সাত রঙের এলইডি আলো ফুটে উঠবে ভাস্কর্য ঘিরে। দিনরাত ভাস্কর্য ঘিরে ফোয়ারা থেকে পানি উৎসারিত হবে। ৫৩ ফুট উচ্চতার ভাস্কযটির দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট এবং প্রস্থ ৬২ ফুট।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ভিনাইল ওয়ার্ল্ডের অর্থায়ন ও পরিকল্পনায় নির্মিত এ ভাস্কর্য। কোনো একটি স্পন্সরের সহযোগিতা নিয়ে কিছুদিনের মধ্যে এটি ‍উদ্বোধন করা করা হবে বলে জানান ভিনাইল ওয়ার্ল্ড গ্রুপের সিইও আবেদ মনসুর।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ঢাকা সড়ক সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খান জানান, ভালোভাবেই ভাস্কর্যটির নির্মাণ শেষ হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এর উদ্বোধন করবেন।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, প্রথাগতভাবে কোনো বিখ্যাত স্থপতি নেই এ ভাস্কর্যের। চারুকলা থেকে পাস করা কয়েকজন মেধাবী তরুণ গ্রুপস্ট্যাডির মাধ্যমে ‘বীর’ ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছেন। তবে মূল ডিজাইনার চারুকলার পেইন্টিং বিভাগ থেকে সদ্য পাস করা হাজ্জাজ কায়সার। তার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ভিনাইল ওয়ার্ল্ডের সিভিল ইঞ্জিনিয়ার টিম। আর ফাউন্টেন নির্মাণ তদারকি করছেন সাবির সারওয়ার উপল। বিমানবন্দর সড়কে মুক্তিযুদ্ধের সর্বোচ্চ ভাস্কর্য ‘বীর’।  ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল-বাংলানিউজ এ কারণে অন্য ভাস্কর্যের মতো ‘স্থপতি’ বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে এর বৈশিষ্ট্যগত দিক ও বিষয়বস্তুকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

হাজ্জাজ কায়সার বাংলানিউজকে জানান, এতোদিন পর্যন্ত রাঙামাটি ক্যান্টনমেন্টে ৫০ ফুট উচ্চতার ভাস্কর্যই ছিলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত সর্বোচ্চ ভাস্কর্য।

এটি নির্মাণে দক্ষ প্রকৌশলীদের সার্বক্ষণিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও তত্ত্বাবধান ছিলো। যাতে দীর্ঘদিন এটি টিকে থাকে। আগামী ১০০ বছর এ ভাস্কর্যের কিছুই হবে না- বলছিলেন হাজ্জাজ কায়সার।

হাজ্জাজ আরও বলেন, যতদিন এখনে বিমানবন্দর থাকবে ততদিন আশপাশে বহুতল ভবন গড়ে উঠবে না। এরফলে দূর থেকে সহজেই দৃশ্যমান হবে ভাস্কর্যটি। বিমানবন্দর সড়কে মুক্তিযুদ্ধের সর্বোচ্চ ভাস্কর্য ‘বীর’।  ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল-বাংলানিউজনামকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’ এই স্লোগান থেকেই ‘বীর’ শব্দটি নেওয়া হয়েছে। একজন নারী ও তিনজন পুরুষ মুক্তিযোদ্ধার যে দৃঢ়তা দেখানো হয়েছে তাতে তাদের ক্লান্ত মুখায়ব এবং যুদ্ধের সাহসী বীর ভঙ্গিমাই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, মাঝখানের ফিগারে বসে শত্রুর ‍দিকে অস্ত্র তাক করে আছেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। পাশে একজন নারী ও একজন পুরুষ অস্ত্র নিয়ে শত্রুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। আর পেছনে একজন দৃঢ় ভঙ্গিমায় সাহসিকতার সঙ্গে শত্রুর দিকে গ্রেনেড ছুড়ছেন। এ কারণেই নামটি ‘বীর’। তার পেছনে বাংলাদেশের তৎকালীন মানচিত্র। যার জন্য যুদ্ধ করছেন তারা। বিমানবন্দর সড়কে মুক্তিযুদ্ধের সর্বোচ্চ ভাস্কর্য ‘বীর’।  ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল-বাংলানিউজ  

বিমানবন্দনর সড়কের বিউটিফিকেশন কাজ করছে আবেদ মনসুর-এর প্রতিষ্ঠান ভিনাইল ওয়ার্ল্ড। এই ভাস্কর্য সেই বিউটিফিকেশনেরেই একটি অংশ। আগামী জুন-জুলাই মাসে শেষ হবে বনানী-বিমানবন্দর সড়ক বিউটিফিকেশনের কাজ। কাজ শেষ হলে এটি হবে দেশের প্রথম ডিজিটাল সড়ক। এরইমধ্যে চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য দৃশ্যমান হচ্ছে।
 
আবেদ মনসুর জানান, বাংলাদেশে এটাই একমাত্র ভাস্কর্য যে ভাস্কর্যের চারপাশ ঘিরে দুই লেয়ারের ফাউন্টেন আছে। ফাউন্টেনের ১০০টি নজেল থেকে পানি ছাড়ানো দেখা যাবে।  
 
তিনি আরও জানান, ভাস্কর্য নিমার্ণের শুরুতে আয়রন স্ট্রাকচার করা হয়েছে। এরপর আয়রনের ওপর ব্যবহার করা হয়েছে সিমেন্ট। সিমেন্টের ওপর জিপসাম পুডিং, ডকোপেইন্ট, টকোপ্রিন্ট এবং সবশেষে এন্টিক ব্রোঞ্জ লাগানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৭
এসএ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।