ঢাকা, শনিবার, ২৫ মাঘ ১৪৩১, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

সাক্ষাৎকার-১

মিসড কল পেলেও রেসপন্স করে ফায়ার সার্ভিস

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০১৭
 মিসড কল পেলেও রেসপন্স করে ফায়ার সার্ভিস বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহাম্মেদ খান;ছবি-বাদল

যে কোনো দুর্যোগ-দুর্ঘটনায় প্রথম সাড়াদানকারী সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর।

গতি, সেবা ও ত্যাগের মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে এ বিভাগের কর্মীরা দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা মানুষের সেবায় নিয়োজিত। কোনো নম্বর থেকে মিসকল পেলেও ঘটনাস্থলে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। দুর্যোগ-দুর্ঘটনায় প্রথম সাড়া দেয়াই এই বিভাগের প্রতিটি কর্মীর নৈতিক দায়িত্ব।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহাম্মেদ খান বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি)। সম্প্রতি বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে ফায়ার সার্ভিসের সাফল্য, সীমাবদ্ধতা, স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং নিজের পেশাগত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন তিনি।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলানিউজের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট আবাদুজ্জামান শিমুল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট শেখ জাহাঙ্গীর আলম ও প্রশান্ত মিত্রবাংলানিউজের পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটির চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।

প্রশ্ন: ঝুঁকি মোকাবেলায় ফায়ার সার্ভিসের অবস্থান ?

উত্তর:  ফায়ার সার্ভিস একটি অর্গানাইজেশন যেটা একটা ইমারজেন্সি সার্ভিস। যেকোনো দুর্যোগ, দুর্বিপাক ও অঘটনেও ফায়ার সার্ভিস প্রথম রেসপন্স করে। যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটলে, আগুন লাগলে, সড়ক দুর্ঘটনা, ভবন ধস, নদীতে লঞ্চ ডুবিসহ সব ক্ষেত্রেই ফায়ার সার্ভিসই প্রথম সাড়া দেয়। এসব ক্ষেত্রে জনগণ ফায়ার সার্ভিসকেই প্রথমে চায়।

ফায়ার সার্ভিসে কোনো মিসড কল যদি আসে তবে সেখানেও ফায়ার সার্ভিস প্রথমে রেসপন্স করে। ইনফরমেশন অনুযায়ী অনেক সময় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় কোনো ঘটনা ঘটেনি। সেক্ষেত্রে আমরা নিকটবর্তী থানাকে ফোন নম্বরসহ ভুল তথ্যের কথা জানিয়ে আসি। যাই হোক, এটাই আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

প্রশ্ন: ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় বর্তমানে বাংলাদেশ কোন অবস্থানে আছে?

উত্তর: বাংলাদেশে এতো জনসংখ্যা তার উপর ভৌগলিক কারণেও এটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ দেশে পরিণত হয়েছে। এখানে জলবায়ুর পরিবর্তন আছে, এখানে জনসংখ্যা বেশি। অপরিকল্পিত নগরায়ন, শিল্পায়ন হচ্ছে কিন্তু সেখানে প্রয়োজনীয় ফায়ার ফাইটিংয়ের কোনো সিস্টেম নাই। এছাড়াও আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ খুবই কমে যাচ্ছে। একটি গণতান্ত্রিক দেশকে কিভাবে উন্নত করা যায় সে বিষয়ে সরকার কাজ করছে, তবে দেশের জনগণকেও এর জন্য এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলানিউজ টিমের সঙ্গে আলাপচারিতায় ফায়ার সার্ভিসের ডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহাম্মেদ খানপ্রশ্ন: উন্নয়নের সাথে নিরাপত্তা কতটা ভাবা হচ্ছে?

উত্তর: বর্তমানে দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, এর সাথে সাথে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে, কল-কারখানা তৈরি হচ্ছে তবে এর সেফটির (নিরাপত্তা) বিষয়ে কিন্তু প্রশ্ন চলে আসছে। ঝুঁকি মোকাবেলার কাজটা সিভিল সিফেন্সের। দুর্যোগপূর্ণ সময়ে প্রথমেই কমিউনিটির স্থানীয়রাই এগিয়ে আসে। বর্তমান সরকার চায় কমিউনিটি ভিত্তিক এ বিষয়ে শিক্ষিত করতে। এজন্য দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, গার্মেন্টসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোতে ফায়ার ফাইটিংয়ের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মশালা করা হচ্ছে।

বহুতল ভবন নির্মাণের সময় নিজস্ব একটি ফায়ার ফাইটিং সিস্টেমের কথা ভাবতে হবে। যে কোন ৩০ তলা ভবন ও ৫০ তলা ভবনের জন্য নিজস্ব ল্যাডার থাকা প্রয়োজন। তাদের একটি ফায়ার ফাইটার টিম থাকবে, এলার্ম থাকবে। আগুন লাগলে যেন সেই টিমই প্রথমে ফায়ার ফাইটিং করতে পারে।

বহুতল ভবন ও কল-কারখানাগুলোতে পর্যাপ্ত ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম আছে কিনা তার নিয়মিত অডিট করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, যারা এই অডিটগুলো করতে যাচ্ছেন তাদেরকে বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করে ফেলছে। এটাই কিন্তু ওই ভবনের জন্য একটি বড় ক্ষতির কারণ।

প্রশ্ন: রাজধানীতে বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা কত?

উত্তর: এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি পর্যবেক্ষণ চলছে। বহুতল ভবন, গার্মেন্টস, কারখানা, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ ও কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থাকছে এই পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে। এসব ভবনগুলো অগ্নিঝুঁকিতে আছে। এগুলোতে যদি আগুন লাগে তবে অনেক জীবনহানি ঘটবে। এদের নিজস্ব কোন ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা নেই।

প্রশ্ন: এদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে?

উত্তর: ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর বিষয় রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়রদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই সব ভবনে আমরাও চিঠি দিয়ে অবগত করেছি। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নিচ্ছে। এটাই সুখকর খবর। তবে কিছু কিছু হাসপাতাল, স্কুল কলেজ মার্কেট আছে যারা ব্যবস্থা নিচ্ছে না।  

আমরা চাই প্রতিটি ভবনেই যাতে নিজস্ব ফায়ার সেফটি ব্যবস্থা থাকে। বাসা-বাড়ি থেকে স্কুল-কলেজ ও অফিসগুলোকে আমরা বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি, যেখানে একসাথে অনেক মানুষ কাজ করে। ওই সব ভবনে ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা থাকা অত্যন্ত জরুরি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৭
এজেডএস/এসজেএ/পিএম/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।