ঢাকা, শনিবার, ২৫ মাঘ ১৪৩১, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

৭শ’ টাকার জন্য ঝরে গেল ৪ প্রাণ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০১৭
৭শ’ টাকার জন্য ঝরে গেল ৪ প্রাণ ৭শ’ টাকার জন্য ঝরে গেল ৪ প্রাণ-ছবি: বাংলানিউজ

লালমনিরহাট: মাত্র সাতশ’ টাকার জন্য ৪টি তাজা প্রাণ অকালেই নিষ্প্রাণ হয়ে গেল। লালমনিরহাটের হাতিবান্ধায় ঝড়ে ছিঁড়ে যাওয়া বৈদ্যুতিক তার মেরামত করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এই ৪জনের করুণ মৃত্যু হয়।

এরা হলেন-হাতিবান্ধা উপজেলার ভেলাগুড়ি এলাকার শামছুদ্দিনের ছেলে স্থানীয় ইলেক্ট্রিশিয়ান খোরশেদ আলম (৪৫), একই এলাকার আজিজার রহমানের ছেলে ইলেক্ট্রেশিয়ান ফেরদৌস আলম (২৮), গোলাপ মিয়ার ছেলে উকিল (২৫) ও ওই এলাকার জোনাব আলীর ছেলে উত্তর বাংলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মিলটন মিয়া (২৪)।
 
স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার বিকেলে ঝড়ের কারণে ছিঁড়ে যায় ওই উপজেলার ভেলাগুড়ি ইউনিয়নের কাছিম বাজার এলাকার ৩৩ হাজার ভোল্টেজের বৈদ্যুতিক লাইনের তার।

এতে বিদ্যু‍ৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে পুরো এলাকা।
 
ছিঁড়ে যাওয়া তার মেরামত করতে নিজেরা না এসে মোবাইল ফোনে স্থানীয় ইলেক্ট্রিশিয়ানদের সঙ্গে চুক্তি করে বিদ্যুৎ বিভাগ। এ কাজে স্থানীয় ইলেক্ট্রিশিয়ানরা এক হাজার দুইশ’ টাকা দাবি করলে বিদ্যু‍ৎ বিভাগের লোকজন তাদের সাতশ’ টাকা দিতে চায়। একপর্যায়ে তারা রাজিও হয়।

কথামত বুধবার (৫ এপ্রিল) সকাল ১১টার দিকে কাজ শুরুর আগে মেইন লাইনে বিদ্যু‍ৎ বিচ্ছিন্ন করা হলে উকিল মিয়া নামে এক ইলেক্ট্রেশিয়ান খুঁটি বেয়ে উপরে ওঠেন। বাকী ৩জন ছিঁড়ে যাওয়া তার উপরে তুলে দিচ্ছিলেন। এ সময় বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন অসাবধানতা বশত লাইন চালু করলে বিদ্যু‍ৎস্পৃষ্ট হন উকিল মিয়া। তাকে বাঁচাতে গিয়ে একে একে বাকী ৩জনও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন।

খুঁটিতে থাকা উকিল মিয়া ছিটকে নিচে পড়ে গুরুতর আহত হন এবং নিচে থাকা খোরশেদ আলম, ফেরদৌস ও মিলটন হোসেন তারে জড়িয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।

আহত উকিলকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসকরা তাকেও মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় একসঙ্গে ৪টি মরদেহ দেখে হতবাক হয়ে গেছে ওই এলাকার মানুষ। কাছিম বাজার এলাকায় বইছে শোকের মাতম। বন্ধ হয়ে গেছে বাজারের বিকিকিনী।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই এলাকায় বৈদ্যুতিক কোনো সমস্যা হলে বিদ্যুৎ বিভাগকে ডেকেও পাওয়া যায় না। তারা নিজেরা না এসে স্থানীয় ইলেক্ট্রিশিয়ানদের দিয়েই সমস্যার সমাধান করেন।
নিহতদের বন্ধু কাছিম বাজার এলাকার মুকুল মিয়াসহ এলাকাবাসী এ ঘটনার সু‍ষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

খবর পেয়ে হাতিবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ এনামুল কবির, ওসি রেজাউল করিম, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ১৫ ব্যাটালিয়নের জাওরানী ক্যাম্পের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
 
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড লালমনিরহাট বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসনাত জামান বাংলানিউজকে জানান, ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগের কারও গাফলাতির প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবুল ফয়েজ মো. আলাউদ্দিন খান বাংলানিউজকে জানান, তদন্ত করে দ্রুত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য হাতিবান্ধা ইউএনও সৈয়দ এনামুল কবিরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫২ ঘণ্টা, ০৫ এপ্রিল, ২০১৭
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।