ঢাকা, শনিবার, ২৫ মাঘ ১৪৩১, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

দিল্লি সফরে ২১ প্রকল্পে আসছে ৩.৬১ বিলিয়ন ডলার

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০১৭
দিল্লি সফরে ২১ প্রকল্পে আসছে ৩.৬১ বিলিয়ন ডলার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী

ঢাকা: তৃতীয় দফায় বাংলাদেশ ২১টি প্রকল্পে আরও ৩ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা  নিতে যাচ্ছে ভারতের কাছ থেকে। নমনীয় শর্তের এ ঋণে  (এলওসি) বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগের ২১টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছে দায়িত্বশীল সূত্র।

আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরকালেই অর্থ সহায়তা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ভারতের ঋণে বাস্তবায়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ আগেই তাদের প্রকল্প জমা দেয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি)।

সেগুলো যাচাই-বাছাই করে ২১টি প্রকল্প চূড়ান্ত করা হয়েছে।

সারসংক্ষেপ মতে, প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে তিন দশমিক ৬১ বিলিয়ন বা ৩৬১ কোটি ডলার ঋণ নেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ২৮ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা (এক ডলার সমান ৮০ টাকা ধরে)। নমনীয় ঋণ (এলওসি) হিসেবে ভারত সরকারের কাছ থেকে পাওয়া এ অর্থেই তা বাস্তবায়ন করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চারদিনের দ্বিপক্ষীয় সফরে ভারতে যাচ্ছেন শুক্রবার (০৭ এপ্রিল)। এ সফরকালে এসব প্রকল্পে সহায়তার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে পারে বলেই জানাচ্ছেন দায়িত্বশীলরা।

তারা বলছেন, বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বহুমাত্রিকতা আনতে প্রধানমন্ত্রীর এ সফর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ইআরডি’র ভারপ্রাপ্ত সচিব কাজী শফিকুল আযম সমঝোতা স্মারকগুলোতে স্বাক্ষর করবেন, এমনটাও অনেকটা চূড়ান্ত হয়ে আছে বলে জানিয়েছে সূত্র।

প্রকল্পগুলোর প্রায় সবগুলোই আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট। বিশেষ করে- রেল, বিদ্যুৎ, তথ্যপ্রযুক্তি, সড়ক পরিবহন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নৌ-পরিবহন, অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ নানা খাতের উন্নয়ন বিষয়ক প্রকল্পগুলো নেওয়া হয়েছে।

অর্থ ও পররাষ্ট্রসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা ২১টি প্রকল্প চূড়ান্ত করেন। এসব প্রকল্পের কোনটিতে কি পরিমাণে ভারতীয় ঋণ নেওয়া হবে, তারও একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে।

ইআরডি সূত্র জানায়, ২১টি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের চারটি, রেল মন্ত্রণালয়ের তিনটি, বিদ্যুৎ বিভাগের চারটি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দু’টি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দু’টি, আইসিটি বিভাগের একটি, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) একটি ও সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের তিনটি।

আরেকটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ২১টি প্রকল্পের পৃথক পৃথক ব্যয়ও চূড়ান্ত করা হয়েছে।

এর মধ্যে ‘বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার কার্যক্রম’ প্রকল্পের আওতায় নতুন ধলেশ্বরী-পুংলি-বনসাই-তুরাগ-বুড়িগঙ্গা খনন করা হবে। এ প্রকল্পে ভারতীয় ঋণ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ কোটি ৬১ লাখ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা)। বুড়িগঙ্গা নদীর পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি করে নাব্যতা বজায় রাখা, পানির গুণগতমান বৃদ্ধি, নৌ-চলাচল অব্যাহত রাখা এবং আর্থ-সামাজিক  মান উন্নত করাও প্রকল্পের উদ্দেশ্য।

‘আশুগঞ্জ-জকিগঞ্জ নৌ-রুট খনন’ প্রকল্পে ভারতীয় ঋণ চাওয়া হয়েছে ৩ দশমিক ৮ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩০৪ কোটি টাকা)।

‘পায়রা বন্দরের বহুমুখী টার্মিনাল নির্মাণে’ ৩৫ কোটি ডলার ও ‘মংলা পোর্টে সরঞ্জামাদি ক্রয়’ প্রকল্পে ৪ কোটি ডলার ভারতীয় ঋণের আশা করা হচ্ছে। ‘বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন পর্যন্ত ডুয়ালগেজ রেলপথ নির্মাণে’ ৫০ দশমিক ১ কোটি ডলার ও ‘ফেনীতে ৩৩ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে’ ১০ কোটি ডলার ভারতীয় ঋণ চাওয়া হয়েছে।

‘স্থলবন্দরের শুল্ক স্টেশনের আধুনিকায়নে’ ১০ কোটি ডলার, ‘ঈশ্বরদীতে অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) নির্মাণ’ প্রকল্পে ৩ দশমিক ৫ কোটি ডলার, ‘মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে’ ১০ কোটি ডলার এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ‘সৈয়দপুর বিমানবন্দর উন্নয়নে’ ১০ কোটি ডলার ভারতীয় ঋণের আশা করা যাচ্ছে। তবে স্থলবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

‘দেশব্যাপী ডিজিটাল শিক্ষাকেন্দ্র নির্মাণ’ প্রকল্পে ২০ দশমিক ৮ কোটি ডলার ভারতীয় ঋণ ধরা হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের ‘বগুড়া-ঝাড়খন্ড (ভারত) পর্যন্ত ৪০০ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণে’ ১৭ দশমিক ৭ কোটি ডলার ঋণ নেওয়া হবে। ‘মোল্লাহাট ১০০ মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার প্ল্যান্টে’ ১৫ দশমিক ৭, ‘গাজীপুরে ৪৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে’ ৪০ দশমিক ২ এবং ‘রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অবকাঠামো উন্নয়নে’ ৯৪ কোটি ডলার ঋণ দেবে ভারত।

‘বেনাপোল থেকে যশোর হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত চারলেন সড়ক  উন্নীতকরণে’ ১০ কোটি, ‘বাগেরহাট জেলায় ৩৫ কিলোমিটার ফোরলেন নির্মাণে’ ৫ কোটি এবং ‘ময়মনসিংহ-ব্রাক্ষণবাড়িয়া রুটে ফোরলেন নির্মাণে’ ৭ দশমিক ৫ কোটি ডলার ঋণ নেওয়া হবে।

‘টেলিটক নেটওয়ার্ক উন্নয়নে’ দুই কোটি, ‘ই-ওয়েজ-রিসাইকেলিং’ প্রকল্পে দুই দশমিক ৫ কোটি ডলার এবং ‘খুলনা বিমানবন্দর নির্মাণে’ ১০ কোটি ডলার ভারতীয় ঋণ চাওয়া হয়েছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) ভারপ্রাপ্ত সচিব কাজী শফিকুল আযম বলেন, ‘এলওসি’র বিষয়ে এখনও কিছু বলা যাবে না। সবকিছু চূড়ান্ত হবে দিল্লিতে। দিল্লি সফর শেষ হলেই সব কিছু বলা যাবে’।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৭

এমআইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।