শুক্রবার (০৭ এপ্রিল) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মালিবাগ আবুল হোটেলের সামনে থেকে রাজারবাগ পুলিশ লাইন ও মৌচাক থেকে শান্তিনগর মোড় পর্যন্ত কাজের গতি একদমই নেই বললেই চলে। নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের যন্ত্রাংশ নিচের রাস্তায় ফেলে রাখায় প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে অসংখ্য যানবাহন।
আবার মালিবাগ-মৌচাক-শান্তিনগরের ফ্লাইওভারটির কাজ চললেও নিচের অংশ ডুবে রয়েছে পানিতে। ফলে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারে কোনো যন্ত্রাংশ তুলতে হলে পুরো রাস্তা বন্ধ করেই কাজ করা হয়।
কবে নাগাদ ফ্লাইওভারটির কাজ শেষ হচ্ছে এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা গ্রুপের মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. শরিফুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়।
বাংলানিউজকে তিনি জানান, নির্ধারিত সময় জুন অব্দি থাকলেও তারা এই সময়ের মধ্যে কোনোভাবেই কাজ শেষ করতে পারবেন না।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দ্রুত কাজ করে ফ্লাইওভারটির নির্মাণ কাজ শেষ করার মতো কোনো পরিবেশ নেই। নিচে সিটি করপোরেশন কাজ করছে, তারা ইচ্ছামতো রাস্তা খুঁড়ে রেখে দিচ্ছেন। এসব সমস্যার বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেও কোনো সমাধান মেলেনি। তাই নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটির কাজ শেষ করা সম্ভব নয়।
ফ্লাইওভারটির কাজ শেষ হতে নির্ধারিত সময়ের বাইরে আরও তিন মাস সময় বেশি লেগে যেতে পারে বলে তিনি জানান।
ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তায় মালামাল ফেলে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজ করতে গেলে মালামাল থাকবে আর মালামাল যদি না থাকে তাহলে কাজ করবেন কীভাবে। তবে বৃষ্টি হওয়ায় মালামাল যেনো নষ্ট না হয়ে যায় সেজন্য একটু জায়গা নিয়েই রাখা হয়েছে। এছাড়া আর কিছু নয়। সিটি করপোরেশনের কাজের জন্যই মূলত তাদের কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। তারা রাস্তা খুঁড়ে রেখে দেওয়ার কারণে যানজট তৈরি হচ্ছে।
দুর্ভোগ সম্পর্কে সরকারি চাকুরীজীবী সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, যথাসময়ে ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় ভোগান্তি বাড়ছে। যদি যথাসময়ে কাজ শেষ হতো তাহলে নগরবাসীর সময় অনেক রক্ষা পেতো। কেননা যারা সচিবালয় বা সদরঘাটের আশেপাশে অফিস করেন তাদেরকে হাতে অনেক সময় নিয়ে বের হতে হয়। তবে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ার কারণ সরকারের গাফিলতি। সরকারের এই বিষয়টি নিয়ে যদি সঠিক তদারকি থাকতো তাহলে এই ফ্লাইওভারটির কাজ আরও আগেই শেষ হয়ে যেতো। শুধু কী তাই, কিছুদিন আগে একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনাও ঘটেছে যা ঘটতো না।
জানা যায়, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্পটি ২০১১ সালের ০৮ মার্চ একনেক বৈঠকে অনুমোদন পায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। প্রথমে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১১ থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরে প্রকল্পের মেয়াদ ডিসেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু এই সময়েও কাজ শেষ না হওয়ায় সময় বাড়ানো হয় চলতি বছরের (২০১৭) জুন পর্যন্ত। কিন্তু জুনেও কাজ শেষ হচ্ছে না।
এদিকে, প্রথম ধাপে প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ছিলো ৩৪৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। দ্বিতীয় ধাপে তা বেড়ে ৭৭২ কোটি টাকা আর এখন প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২১৮ দশমিক ৮৯ কোটি টাকা। আর ফ্লাইওভারটির মোট দৈর্ঘ্য ৮.২৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে রমনা থেকে তেজগাঁও সাতরাস্তা পর্যন্ত দুই কিলোমিটার ও ইস্কাটন থেকে ওয়্যারলেস (মৌচাক ক্রসিং) পর্যন্ত এক কিলোমিটার অংশ আগেই খুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে কাজ বাকি রয়েছে এখনও প্রায় ছয় কিলোমিটার।
স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বাংলানিউজকে বলেন, যানজট নিরসন বা পরিবহন কৌশলে ফ্লাইওভারগুলো করা হচ্ছে। কিন্তু ফ্লাইওভার করতে গিয়ে যখন নিচের রাস্তার ৪০ শতাংশ নষ্ট করে করা হচ্ছে তখন এটা হিতে বিপরীত হচ্ছে।
আর রাস্তাকে হত্যা করা হচ্ছে। ফলে রাস্তা নষ্ট করে জনগণের দুর্ভোগ বাড়িয়ে কখনও ফ্লাইওভার করা উচিত নয়। রাস্তা বাঁচিয়ে ফ্লাইওভার কিংবা মেট্রোরেল করার চিন্তাভাবনা করতে হবে। নতুবা যেমনভাবে চলছে সেটাকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন এই নগর পরিকল্পনাবিদ।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ব্যক্তিগত ফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৭
এসজে/এসএনএস