বর্ষবরণকে ঘিরে আদিবাসী পল্লীগুলোতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। নতুন জামা-কাপড় কেনা, পিঠা তৈরি, ঘর সাজানো, বৌদ্ধবিহারে ধর্মীয় গুরুদের জন্য খাবার নিয়ে যাওয়া সর্বোপরি মৈত্রী পানিবর্ষণের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস, সব মিলিয়ে পুরো জেলার সবক’টি সম্প্রদায়ের মানুষ এখন একাট্টা হয়েছে নতুন বছরকে বরণ করে নিতে।
পুরনো দিনের সমস্ত গ্লানি ধুয়ে মুছে নতুনের আয়োজনে এখন ব্যস্ত সবাই। আদিবাসী সম্প্রদায়গুলোর এসব আয়োজনের সঙ্গে বাঙালিদের পহেলা বৈশাখ উদযাপনের প্রস্তুতি মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে পাহাড়ি জেলা বান্দরবানে।
সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, বুধবার (১২ এপ্রিল) থেকে পুরাতন রাজবাড়ি মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে সাংগ্রাই পোয়ে উৎসবের সূচনা হবে। বান্দরবান জেলা প্রশাসন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন পরিষদ, বাংলাদেশ তঞ্চঙ্গ্যা কল্যাণ সংস্থা, ম্রোচেটের সহায়তায় সাংগ্রাই উৎসব পালনে পাঁচ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শোভাযাত্রা, শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) বিকেলে স্থানীয় খ্যংওয়া ক্যং (বিহার) ও খ্যংফিয়া ক্যং থেকে বুদ্ধমূর্তি স্নান করাতে নিয়ে যাওয়া হবে উজানী পাড়ার সাঙ্গু নদীর ঘাটে। এরপর রাতে পাম্প হাউজ, উজানী পাড়া ও এলাকার বিভিন্ন স্থানে রয়েছে পিঠা তৈরির আয়োজন।
শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ঐতিহ্যবাহী রাজার মাঠ থেকে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা, যেমন খুশি তেমন সাজ ও লোকজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বৈশাখী পিঠা উৎসব, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বুদ্ধমূর্তি স্নান ও পাহাড়ি পিঠা তৈরি উৎসব।
শনিবার (১৫ এপ্রিল) থাকছে বান্দরবানে সাংগ্রাই উৎসবের সবচেয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজন। এদিন অনুষ্ঠিত হবে উৎসবের মূল আকর্ষণ মৈত্রী পানিবর্ষণ। একইদিন সন্ধ্যায় উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে রাজবাড়ি মাঠে অনুষ্ঠিত হবে আদিবাসী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
রোববার (১৬ এপ্রিল) রয়েছে একই ধরনেরর অনুষ্ঠানমালা। ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে থাকবে বৌদ্ধ মন্দিরে যাত্রা, ধর্ম দেশনা শ্রবণ, শীল গ্রহণ ও উৎসর্গের মাধ্যমে পাঁচ দিনব্যাপী সাংগ্রাই উৎসব শেষ হবে সোমবার (১৭ এপ্রিল)। এছাড়া জেলা সদরের রেইছা, সুয়ালক, রাজবিলা, কুহালং এবং রোয়াংছড়ি, থানচি ও রুমা উপজেলায় আদিবাসী মারমা, চাকমা, ত্রিপুরা ও তঞ্চঙ্গ্যারা বৈসাবি উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান মালার আয়োজন করা হয়েছে।
এসব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন- পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা, জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক ও পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় প্রমুখ।
সাংগ্রাই উদযাপন কমিটির সভাপতি হ্লাগ্যচিং মারমা বাংলানিউজকে জানান, প্রতিবছরের মতো এবারও মারমা সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব সাংগ্রাই মহাসমারোহে উদযাপিত হবে। এটি মারমা সম্প্রদায়ের উৎসব হলেও জেলার বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষের অংশগ্রহণে তা হয়ে ওঠে সার্বজনীন। এ উৎসবের মাধ্যমে বান্দরবানের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন আরও সুদৃঢ় হবে এটাই আমাদের কাম্য।
এ পানিবর্ষণ উৎসবের মধ্য দিয়েই মার্মা আদিবাসীরা বিদায়ী বছরের সমস্ত দুঃখ, বেদনা, পারস্পরিক সম্পর্কের টানাপোড়েন ধুয়ে মুছে ফেলে নতুন বছরের জন্য একে অপরের বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করে নেয়। এছাড়াও ঐতিহ্যবাহী পিঠা উৎসবসহ বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে সপ্তাহব্যাপী মার্মা জনপদগুলো মুখরিত হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৭
আরবি/