ফলে সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার দায়ে তাদের ফাঁসি কার্যকর এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য দুই জঙ্গি হচ্ছেন- দেলোয়ার হোসেন রিপন ও শরীফ শাহেদুল আলম বিপুল।
মামলার প্রধান আসামি মুফতি হান্নান ও বিপুলকে গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে ও রিপনকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্তে এখন যেকোনো সময় ফাঁসি কার্যকর করবে স্ব স্ব কারা কর্তৃপক্ষ।
কাশিমপুর কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের কাছে ফাঁসি কার্যকরের কোনো নির্দেশনা এখন পর্যন্ত আসেনি। তবে আসামিদের প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হয়ে গেছে বলে আমি শুনেছি’।
গত ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় ‘মুফতি’ হান্নান ও বিপুল এবং দুপুরে রিপন স্ব স্ব কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে রাষ্ট্রপতি বরাবরে প্রাণভিক্ষা চান। তাদের আবেদনগুলো ওইদিনই রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। দুই মন্ত্রণালয় হয়ে যাওয়ার পর রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দেন বলে জানিয়েছে সূত্র।
কারা সূত্র জানায়, এখন আবার স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় হয়ে প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচের চিঠি কারাগারে পৌঁছালে ফাঁসি কার্যকরের চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু হবে।
গত ২২ মার্চ রিভিউ খারিজ করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় পড়ে শোনানো হয় ‘মুফতি’ হান্নান ও বিপুলকে।
কারা কর্তৃপক্ষ জানতে চাইলে তারা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন বলে জানান। একইদিন সন্ধ্যায় তাদের দু’জনের মৃত্যু পরোয়ানা কারাগারে এসে পৌঁছালে সেটিও পড়ে শোনানো হয়।
অন্যদিকে একইদিন রিভিউ খারিজের রায় পড়ে শোনানো হয় রিপনকেও। ওইদিন রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইবেন কি-না জানতে চাওয়া হলে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানান তিনি। পরদিন ২৩ মার্চ আইনজীবীর মাধ্যমেই প্রাণভিক্ষার আবেদন জানাবেন বলে জানান রিপন। তিনিও শোনেন নিজের মৃত্যু পরোয়ানা।
এজন্য তিনজনেরই হাতে কাগজ-কলম তুলে দেন কারা কর্তৃপক্ষ।
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার ছগির মিয়া সে সময় বাংলানিউজকে জানিয়েছিলেন, রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষার আবেদন প্রত্যাখ্যান করলে ৩ জঙ্গির ফাঁসি কার্যকরে আর কোনো বাধা থাকবে না। সরকারের সিদ্ধান্তে যেকোনো সময় তাদের ফাঁসি কার্যকর করতে পারবে কারা কর্তৃপক্ষ।
২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটের হযরত শাহজালালের (র.) মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা হয়। হামলায় আনোয়ার চৌধুরী, সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত এবং নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ তিনজন।
মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত ৫ আসামির মধ্যে ‘মুফতি’ হান্নান, বিপুল ও রিপনকে মৃত্যুদণ্ড এবং মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।
২০০৯ সালে আসামিরা জেল আপিল করেন।
গত বছরের ০৬ জানুয়ারি এ মামলায় হাইকোর্টে আপিল শুনানি শুরু হয়ে ০৩ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়। বিচারিক আদালতের দণ্ড বহাল রেখে ১১ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
গত বছরের ২৮ এপ্রিল হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়।
১৪ জুন রায় হাতে পাওয়ার পর ১৪ জুলাই আপিল করেন দুই আসামি ‘মুফতি’ হান্নান ও বিপুল। অপর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রিপন আপিল না করলেও আপিল বিভাগ তার জন্য রাষ্ট্রীয় খরচে আইনজীবী নিয়োগ করেন।
শুনানি শেষে গত বছরের ০৭ ডিসেম্বর আসামিদের আপিল খারিজ করে চূড়ান্ত রায় দেন সর্বোচ্চ আদালত।
গত ১৭ জানুয়ারি এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর আসামিরা পুনর্বিবেচনা চেয়ে রিভিউ আবেদন জানান।
গত ১৯ মার্চ দেওয়া রিভিউ খারিজের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি ২১ মার্চ প্রকাশিত হয়। পরদিন মৃত্যু পরোয়ানায় স্বাক্ষর করে কারাগারে পাঠান বিচারিক আদালত সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল।
বাংলাদেশ সময়: ২২২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৭
এজেডএস/ এএসআর