২০১১ সালের জানুয়ারিতে আট কিলোমিটার দীর্ঘ মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ শুরু হয়। কিন্তু দুই দফা সময় বাড়িয়েও শেষ হয়নি নির্মাণ কাজ।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের অধীনে শুরু হওয়া এই উন্নয়ন প্রকল্প কবে নাগাদ শেষ হবে তাও কেউ বলতে পারছেন না।
রাজধানীবাসীর ক্ষোভ, ছয় বছরের ভোগান্তির শেষ কবে? এই সমন্বিত ফ্লাইওভারের কাজ চলছে তিন ভাগে। এর মধ্যে মাত্র এক তৃতীয়াংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি দুই ভাগের সিংহভাগ কাজই বাকি রয়ে গেছে।
শুক্রবার (০৭ এপ্রিল) সরেজমিনে দেখা যায়- মৌচাক-মগবাজার, মৌচাক-মালিবাগ রেলগেট ও মৌচাক-রাজারবাগ, কাকরাইল পর্যন্ত সমন্বিত ফ্লাইওভারে কাজ চলছে। দীর্ঘদিন ধরে চলা এই ফ্লাইওভারের কাজের কারণে মৌচাক, মগবাজার, মালিবাগ, রাজারবাগ ও কাকরাইল এলাকা দুর্ভোগের আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে। ফলে এসব এলাকা দিয়ে যাতায়াত করা লোকজন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের দীর্ঘ ছয় বছর ধরে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
এছাড়া বৃষ্টি হলেই ওইসব এলাকায় সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। ফলে ভোগান্তির পরিমাণ আরও কয়েক গুণ বেড়ে যাচ্ছে। রোদের সময় ধুলো আর বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা- এসব মিলিয়ে মগবাজার-মৌচাক সমন্বিত ফ্লাইওভারের নির্মাণাধীন এলাকা দিয়ে চলাফেরা করা ভোগান্তি ছাড়া আর কিছুই নয়!
মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ নিয়ে ক্ষোভের শেষ নেই রাজধানীবাসীর। এসব এলাকা দিয়ে যাতায়াত করা লোকজন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফ্লাইওভারের কাজের জন্য রাজধানীর অন্য সব এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে মগবাজার ও মৌচাক এলাকা। এসব এলাকা যাতায়াত করলে ভোগান্তি ছাড়া কিছুই মেলে না। এক কথায় ওইসব এলাকার মানুষরা এখন বন্দি জীবন যাপন করছে। অফিস, স্কুল, কলেজ এমনকি কোথাও একটু ঘুরতেও যাওয়া যায় না এই নির্মাণ কাজের জন্য।
মৌচাকের বাসিন্দা মো. জাফর আলী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। প্রতিদিন তার কর্মস্থল রামপুরায় যেতে হয় এই দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি কোনোভাবেই বিষয়টি বুঝতে পারছি না আসলে প্রকল্পটি কি উন্নয়ন কাজ না ভোগান্তির কাজ। আমি মৌচাক থেকে রামপুরা যাওয়ার সময় কতোদিন যে কাটা রাস্তায় পড়ে গেছি তার কোনো হিসেব নেই। কাজ হচ্ছে উপর দিয়ে কিন্তু নিচের রাস্তার এমন বেহাল দশা যে এই এলাকা এখন বসবাসের অনুপযোগী।
মালিবাগ এলাকার বাসিন্দা মো. জাহাঙ্গীর বাংলানিউজকে বলেন, আজ চার বছর ধরে আমরা বাসার দরজা-জানালা খুলি না ধুলোবালির কারণে। এই নির্মাণ কাজ আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এভাবে জনদুর্ভোগ করে বিশ্বের কোথাও উন্নয়ন কাজ হয়েছে কিনা আমি জানি না। এটা কোনো উন্নয়ন কাজ না মৃত্যুর ফাঁদ।
মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজের জনদুর্ভোগ নিয়ে স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বাংলানিউজকে বলেন, এ প্রকল্পের জনদুর্ভোগই প্রমাণ করে ঢাকা শহরে এ ধরনের উন্নয়ন কাজ করার সক্ষমতা আমদের নেই। তাছাড়া এই প্রকল্পটির আদৌ প্রয়োজন রয়েছে কিনা সে বিষয়টিও সমীক্ষা করে দেখা হয়নি। এখন পর্যন্ত এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ চলার সময় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এতে বোঝা যায়, জননিরাপত্তার বিষয়টির দিকেও নজর দেয়নি সরকার।
তিনি বলেন, এই প্রকল্পের কারণে গত দুই-তিন বছর ধরে যে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে তা মাত্রা অতিরিক্ত। আসলে প্রকল্পটি জনবান্ধব না হয়ে এখন জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আদৌ প্রকল্প শেষে এর সুফল মানুষ পাবেন কিনা তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।
প্রকল্প মেয়াদ দুই দফা বাড়ানো হলেও এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারছেন না প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা। একে অন্যের কাঁধে দোষ চাপিয়ে নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।
এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছে তমা কনস্ট্রাকশন। এ বিষয়ে তমা কনস্ট্রাকশনের প্রজেক্ট ম্যানেজার শরিফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আগামী জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে, কিন্তু মনে হয় না এ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে। নিচ দিয়ে ওয়াসা ও সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়নের কাজের জন্য যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে এজন্য কাজ এগোতে পারছে না।
কবে নাগাদ কাজ শেষ হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তারা বলতে পারবেন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের প্রকল্পের পরিচালকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০১৭
এমএ/এসএনএস