পর্যটনের এতো সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বিপত্তি সড়ক ব্যবস্থায়। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকের ভীতিতে অনাগ্রহ তৈরি হচ্ছে পর্যটকদের মধ্যে।
খাগড়াছড়ির বিভিন্ন থানার পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১ বছরে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে প্রায় ৩০ জনের প্রাণ গেছে, আহত হয়েছে দেড় শতাধিক।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দীঘিনালা এলাকায় জিপ-সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হন ১ জন, আহত হন আরো ২ জন। ফেব্রুয়ারিতে আলুটিলায় সড়ক দুর্ঘটনায় নারী ও শিশুসহ ৮ জন নিহত হন। আহত হন আরো ৩০ জন। মার্চ মাসে মাটিরাঙ্গা ও মানিকছড়িতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ৩ জন, আহত হন ৪ জন।
গত বছরের নভেম্বর মাসে গুইমারার জালিয়াপাড়া এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় ২ জন নিহত হন, আহত হন আরো তিনজন। সেপ্টেম্বর মাসে এ সড়কের মাটিরাঙ্গা সামপাড়া এলাকায় যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে ৫ জন নিহত হন, আহত হন ৪০ জন। একইমাসে আলুটিলা এলাকায় বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে ৫ জন নিহত হন, আহত হন আরো ৩ জন।
খাগড়াছড়ির গুইমারা থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, এ সড়কের প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। আলুটিলা এলাকায় আঁকাবাঁকা উঁচু পাহাড় থেকে নেমে আবার ওপরে ওঠার সময় দ্রুত মোড় নিতে হয়। চালকেরা এই বাঁকটিকে বিপদজনক বলে মনে করেন।
এ সড়কে চলাচলকারী শান্তি পরিবহনের চালক কবির আহম্মদ বাংলানিউজকে জানান, সচেতনভাবে এ সড়কে চালকরা গাড়ি চালান, কিন্তু বাঁকগুলোর এক পাশ থেকে অন্যপাশ না দেখা যাওয়ায় মাঝে মধ্যেই দুর্ঘটনা হয়। এতে গাড়ি বিকল হয়ে যেমন চালক ক্ষতিগ্রস্ত হন, তেমনি যাত্রীদের প্রাণও ঝরে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কের খাগড়াছড়ি অংশের প্রায় ৬৩ কিলোমিটার রাস্তায় ২৫০টির মতো ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে। এগুলোতেই ঘটে দুর্ঘটনা। স্থানীয়রা মনে করছেন, এ বাঁকগুলো যদি সরলীকরণ করা হয়, তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশেই কমে আসবে।
খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক কামাল উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলোর কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। তারপরও চলাচল করতে হয়। সড়কের বাঁকগুলোর সরলীকরণ করা হলে দুর্ঘটনা কমে আসবে।
খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপদের নির্বাহী প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, সড়কে দুর্ঘটনা কমাতে বিভিন্ন বাঁকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। এছাড়া ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা হয় নিয়মিত।
সড়কের সরলীকরণের ব্যাপারে তিনি জানান, সড়ক সরলীকরণ একটা র্দীঘ প্রক্রিয়া, এটা করতে হলে পাহাড় কাটতে হবে। আবার যেসব জায়গায় খাদ রয়েছে সেসব স্থানে মাটি ভরাট করতে হবে, আর এর জন্য প্রচুর মাটি প্রয়োজন।
তিনি জানান, এ ব্যাপারে একটি এরিয়া সার্ভের পরিকল্পনা রয়েছে সড়ক বিভাগের। সার্ভে শেষ হলে সরকারের কাছে উন্নয়ন প্রস্তাবনা দেওয়া হবে। প্রস্তাবনা পাশের পর বাজেট পেলেই সরলীকরণ করা যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৭
এসএইচডি/আরআর/এএ