রোববার (০৯ এপ্রিল) সচিবালয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সভা শেষে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেছেন, ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০’ বাস্তবায়নে এবার কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড, ব্যাংক ঋণ সুবিধা বন্ধ, লাইসেন্স বাতিল, আইআরসি বা ইআরসি বাতিলের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আরো কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২০১৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর ছয়টি পণ্য- প্রথমে ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি মোড়কীকরণে পাটের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। পরবর্তীতে চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি আরও ১১টি পণ্যে (মরিচ, হলুদ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ডাল, ধনিয়া, আলু, আটা, ময়দা, তুষ-খুদ-কুঁড়া) পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহারের জন্য নির্ধারণ করা হয়।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আবারো ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি সংরক্ষণ ও পরিবহনে প্লাস্টিকের বস্তার ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এটি রোধ করতে আবারো ঢাকাসহ সারাদেশে বিশেষ অভিযান পরিচালিত হবে। এজন্য সব বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের এ আইন সুষ্ঠু বাস্তবায়নে আগের মতো মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ মনিটরিংয়ের জন্য আবারো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
যদিও ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি সংরক্ষণ ও পরিবহনে দেশের বিভাগ, জেলা, উপজেলা, থানা পর্যায়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে বলে সভায় জানানো হয়েছে।
আইনের ১৪ ধারা অনুযায়ী, পাটের মোড়ক ব্যবহার না করলে অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। এ অপরাধ ফের সংগঠিত হলে সর্বোচ্চ দণ্ডের দ্বিগুণ দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
আইন বাস্তবায়ন অগ্রগতি বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সব যুগ্ম-সচিবদের সমন্বয়ে নয়টি মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে।
পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইনের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন পর্যালোচনা, ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে এ সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় জানানো হয়, আইনটি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হলে প্রতিবছর ১০০ কোটি পাটের বস্তার চাহিদা সৃষ্টি হবে। স্থানীয় বাজারে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি, পাট চাষিরা পাটের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত এবং সর্বোপরি পাটের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ পাটের শিল্প ও পরিবেশ রক্ষা পাবে।
২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে আইনের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য দেশজুড়ে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয় এবং তা এখনও অব্যাহত রয়েছে। অভিযানে জেলা প্রশাসন মাঠ পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তর/প্রতিষ্ঠান/চেম্বার/বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সহযোগিতায় জনগণকে উদ্বুদ্ধ করাসহ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে আইন বাস্তবায়নে সাহসী ও গতিশীল ভূমিকা পালন করেছে।
এরফলে দেশের যেকোনো শহর-বন্দরে, হাটে-বাজারে আইনের অধীন ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি সংরক্ষণ ও বিপণনে পাটজাত মোড়ক বা বস্তা দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। আইনটি বাস্তবায়নে সাধারণ মানুষ এখন সচেতন হয়েছে। তবে দেশের বিভিন্ন বাজারে এখন কিছু কিছু আড়ৎ/দোকান/প্রতিষ্ঠানে/বিভিন্ন সুপার শপে প্লাস্টিকের ব্যাগে পণ্য মোড়কীকরণ করে বাজারজাত করা হচ্ছে, যা রোধ করা প্রয়োজন।
আইন অনুযায়ী ছয়টি পণ্য (ধান, চাল, গম, ভূট্টা, সার ও চিনি) মোড়কীকরণে পাটজাত পণ্যের ব্যবহার প্রায় শতভাগ বাস্তবায়ন হয়। এজন্য গত বছরের ৬ মার্চ প্রধানমন্ত্রী ৪১ ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন।
গত বছরের ৩০ নভেম্বর বিশেষ অভিযানে সারাদেশে এক হাজার ৬০৮টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে ১ কোটি ৫১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং দু’জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া ওই বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৮৪৭টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে ৭৬ লাখ ৯৬ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে।
সভায় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফয়জুর রহমান চৌধুরী, পাট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোছলেহ উদ্দিন, বিজেএমসির চেয়ারম্যান ড. মো. মাহমুদুল রহমান, বাণিজ্য, কৃষি ও শিল্প মন্ত্রণালয় এবং বিজেএমএ প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডাররা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০১৭
এমআইএইচ/জেডএস