কর্মক্ষেত্রে যেতে ও কাজ শেষে ঘরে ফিরতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। নারীদের জন্য আসন রাখার বিষয়টিকে আমলেই নিচ্ছে না গণপরিবহনের মালিক-শ্রমিকরা।
অথচ সম্প্রতি ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৭’ খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ আইনে মহিলা, শিশু, বয়োজ্যেষ্ঠ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে অন্য কোনো যাত্রী বসলে বা বসার অনুমতি দিলে সর্বোচ্চ এক মাসের জেল বা ৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
গণপরিবহনে নারীদের অধিকার সংরক্ষণে আইন হলেও তার বাস্তবায়ন না থাকায় এসবের তোয়াক্কা করছেন না কেউ। নারীরা আসন তো পাচ্ছেনই না, উল্টো নানা রকম বাজে মন্তব্যের শিকার হচ্ছেন। এমন অভিযোগই করলেন তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তাসনিয়া জান্নাত।
তাসনিয়া বলেন, আমরা বাসে উঠতে গেলে আমাদের ওঠানো হয় না। যদিও কষ্ট করে উঠি তারপরও সিট খালি পাই না। সেখানে পুরুষ যাত্রী বসে থাকে। গাদাগাদি করে যাত্রী ওঠালে আমাদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। তাই সরকারের উচিত আইনের বাস্তবায়নের পাশাপাশি মহিলাদের জন্য আলাদা বাসসার্ভিস চালু করা। এটা করলে নারীদের ভোগান্তি কমবে।
অর্থমন্ত্রণালয়ে কর্মরত মাহমুদা হক বলেন, আমি গাজীপুর থেকে সেগুনবাগিচায় একটি ট্রেনিংয়ে অংশ নিয়েছিলাম। গাজিপুরে ফেরার পথে বাসের জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করি। মহিলা হওয়ায় কয়েকটি বাস আমাকে ওঠাতে আপত্তি জানালো। িএর মধ্যে ‘সুপ্রভাত’ নামের একটি বাসের হেলপার আমাকে বললো ‘সিট নাই’। আমি উঠতে গেলে কন্ডাক্টর আমাকে উঠতে বাধা দিল। জোর করে উঠে দেখি, মহিলা সিটে সব পুরুষযাত্রী বসা।
তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সোমা রহমান বলেন, একদিন আমি বাসে উঠতে গিয়ে খুব বাজে আচরণের শিকার হই। বাসে উঠে দেখি কোন সিট খালি নাই। কন্ডাক্টরকে ‘মহিলা সিটে পুরুষ কেন বসেছে’ বলতেই পিছন থেকে একজন পুরুষযাত্রী বলে উঠলেন, মহিলা সিটে পুরুষ বসলে জরিমানার আইন এসব বাসের জন্য নয়। সরকারকে বলুন, নতুন বাস তৈরি করে সেসব বাসে মহিলা আসনের ব্যবস্থা করতে। আমি শুনে অবাক হলাম। এভাবে আমরা নারীরা প্রতিনিয়ত পুরুষদের তাচ্ছিল্যের শিকার হচ্ছি। অথচ মহিলা সিটে বসলে জরিমানার বিধান রেখে আইন করা হয়েছে। আইনের প্রয়োগ না থাকায় আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
ইডেন কলেজের কর্মজীবী নারীসংঘের নেত্রী ওয়াহিদা আক্তার তৃষ্ণা বলেন, গণপরিবহনে আমরা নারীরা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছি। নারীদের জন্য আইন করা হয়েছে। শুধু আইন নয়, আইনের পাশাপাশি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন দরকার। পুরুষদেরও উচিত নারীদের সন্মান করা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে যাত্রী-অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক কেফায়াত শাকিল বাংলানিউজকে বলেন, আমরা যাত্রীদের অধিকার সংরক্ষণে দীর্ঘদিন আন্দোলন করে যাচ্ছি। নারী-যাত্রীদের বিভিন্ন হয়রানির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় আমরা সোচ্চার ছিলাম, এখনও আছি। সরকার যে আইনের খসড়া অনুমোদন করেছে তা অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য। তবে আমাদের দাবি, দ্রুত এ আইন বাস্তবায়ন করা হোক। তাহলে নারীরা নিরাপদে চলাচলের সুযোগ পাবেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৭
এএম/জেএম