ঢাকা, রবিবার, ২৬ মাঘ ১৪৩১, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

তিস্তায় মোদিতে ভরসা ‘পাতা নেহি দিদিমনি কেয়া করেগি’

মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৭
তিস্তায় মোদিতে ভরসা ‘পাতা নেহি দিদিমনি কেয়া করেগি’ হায়দ্রাবাদ হাউজে দুই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি

নয়াদিল্লি থেকে: ‘মুঝে কুছ পাতা নেহি দিদিমনি কেয়া করেগি। নয়া কুছ দেখা দিয়া... পানি মাঙ্গা, ইলেক্ট্রসিটি দেয়া... কই বাত নেহি... কুছ তো মিলা।’ তিস্তার পানি বণ্টন প্রসঙ্গে এভাবেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন শেখ হাসিনা। তবে তিনি আশাবাদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কথায়। শেখ হাসিনা বলেন, মোদিজি বলেছেন সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে তিস্তার পানি বণ্টন বিষয়ের সমাধান করবেন। আশা করি তিনি তার কথা রাখবেন। 

ভারতের প্রধানতম বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের দেওয়া নাগরিক সংবর্ধনায় কথা বলছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ভারতে তার রাষ্ট্রীয় সফরের চতুর্থ ও শেষ দিন (১০ মার্চ, সোমবার) সকালে দিল্লির ইম্পেরিয়াল হোটেলে শেখ হাসিনাকে দেওয়া এই নাগরিক সংবর্ধনায় সমবেত হয়েছিলেন বিশিষ্ট নাগরিকরা।

 

তাদের উদ্দেশ্যে ইংরেজি-হিন্দি-বাংলা মিলিয়ে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে তাকে বিশ্ব নেতা হিসেবে উল্লেখ করে বক্তব্য রাখেন বক্তারা।  

শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক পারস্পরিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে, যার ভিত গড়ে গিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। উভয় দেশের মধ্যে সব ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগিতা রয়েছে তারই ধারাবাহিকতায় সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন ছিলো এক গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যা আমরা দু’দেশ মিলে সম্পন্ন করেছি।  

এ পর্যায়ে হিন্দিতে শেখ হাসিনা বলেন, সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন এক ঐতিহাসিক ঘটনা, যেখানে ভারতের সকলে যেন এক হয়ে গিয়েছিলেন, ঠিক যেমন মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করেছিলেন ভারতীয়রা। আমরা এই সহযোগিতার কথা কখনোই ভুলবো না।  

কানেক্টিভিটির ওপর জোর দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের এই যোগাযোগ স্থাপনে আরও উদার হতে হবে এবং নতুন নতুন দিক উন্মোচন করতে হবে।  

এরপরই তিনি আসেন তিস্তার পানি বণ্টন প্রসঙ্গে। প্রথমে ইংরেজিতে শেখ হাসিনা বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন শিগগির তিস্তার পানি বণ্টন সমস্যার সমাধান করবেন।  লেকিন পাতা নেহি দিদিমনি কেয়া করেগি... দিদিমনিকো সাথ বাত হুয়া...উনোনে তো নয়া কুছ দেখা দিয়া... পানি মাঙ্গা, ইলেক্ট্রিসিটি দিয়া... কই বাত নেহি... কুছ তো মিলা। ফের ইংরেজিতে শেখ হাসিনা বলেন, তবে প্রধানমন্ত্রীর কথায় আমরা ভরসা রাখছি। আশা করি শিগগিরই এর সমাধান হবে।

এরপর প্রধানমন্ত্রী ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণার জন্য ভারতবাসীর সহযোগিতা চান। তিনি বলেন, যারা এক সময়ের শত্রু তাদের আমরা ক্ষমা করে দিতে পারি, কিন্তু তাদের দেওয়া সেই ক্ষত ভুলতে পারি না।  

শেখ হাসিনা বলেন, উই ক্যান ফরগিভ বাট ক্যান নট ফরগেট। ২৫ মার্চ আমাদের দেশে যে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে... আর যারা তা ঘটিয়েছে তা একটি বড় ক্ষত। আমি দিনটিকে গণহত্যা দিবস ঘোষণায় ভারতসহ বিশ্ব নেতৃত্বের সহযোগিতা চাই।  

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ভারত যে সহযোগিতার মনোভাব আমার পরিবারকে দেখিয়েছে তা আমি কখনোই ভুলবো না- বলেন শেখ হাসিনা। সে সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কিভাবে জার্মানি থেকে তাকে ও ছোটবোন শেখ রেহানাকে ডেকে আশ্রয় দিয়েছিলেন সে কথাও স্মরণ করেন হাসিনা।  

তিনি আরও বলেন, ভারতের গণতন্ত্র আর আমাদের গণতন্ত্রে পার্থক্য রয়েছে। ভারত সৌভাগ্যবান টানা গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারছে। আমাদের মিলিটারি শাসক আসে, স্বার্থবাদী শক্তি আসে, তাদের কারণে দেশ পিছিয়ে যায়।  

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সবার সম্পর্কের মূলে দু’দেশের জনগণ। তাদের প্রধান সমস্যা দারিদ্র্য। আমরা যদি একসাথে কাজ করতে পারি তাহলে এই মানুষগুলোকে উন্নত জীবন দিতে পারবো।  

তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব অনেক বড় গুরুত্বপূর্ণ। ছোট কিংবা বড় দেশ বিষয় নয়, উভয়ই স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। আমরা বন্ধুত্বকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেই... বন্ধুত্ব দিয়েই যেকোনো সমস্যার ভালো সমাধান সম্ভব। আমাদের সবার একমাত্র শত্রু দারিদ্র্য। দক্ষিণ এশিয়ার দারিদ্র্য আমরা সবাই মিলে যেন সমাধান করতে পারি সেটাই প্রত্যাশা।

ইন্ডিয়া ফাউন্ডশনের এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শুরু হয় সকাল সাড়ে ৯টায় হোটেল ইমপেরিয়ালে। এতে বাংলাদেশ-ভারতের কৌশলগত অংশীদারিত্ব নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে আলোচকরা কথা বলেন। অংশ নেন ভারতের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী লাল কৃষ্ণ আদভানি, বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী নির্মলা সীতারাম।  

নির্মলা আলোচনায় অংশ নিয়ে শেখ হাসিনাকে বর্তমান সময়ের বিশ্বনেতা বলে উল্লেখ করেন। তার নেতৃত্বে দেশ কিভাবে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তার উল্লেখ করে নির্মলা বলেন, শেখ হাসিনাকে বারবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে, বারবার তাকে জেলে আটকে থাকতে হয়েছে, কিন্তু এই লড়াকু নেতা তার সব মনোবল দিয়ে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।  

আদভানি ফুল দিয়ে শেখ হাসিনাকে বরণ করে নেন এবং উত্তরীয় পরিয় দেন। ইন্ডিয়া ফাউন্ডশেনর পক্ষ থেকে তার হাতে তুলে দেওয়া হয় বিশেষ উপহার।  

পরে আদভানি তার বক্তৃতা করেন।  হিন্দিতে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি বলেন, আমার জানা নেই, এর আগে আর কোনো প্রতিবেশী দেশের নেতা এত দীর্ঘ সময় ধরে ভারতের প্রিয় বন্ধু ও প্রিয়জন হয়ে থেকেছেন। শেখ হাসিনাকে ভারতে যে সম্মান দেখানো হচ্ছে তার অংশ হতে পেরে আমিও ধন্য মনে করছি।  

ভারত ও বাংলাদেশ মিলে উন্নয়ন কিভাবে ত্বরান্বিত করা যায় সে চেষ্টা করতে হবে। শেখ হাসিনা তার দেশকে যেভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তা অসাধারণ এবং তাতে অসাধারণ সফলতাও তিনি পেয়েছেন। এই বিষয়ে গর্ব সবারই। বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক আরও মজবুত করার ওপর জোর দেন- আদভানি।  

এ সময় তিনি দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, সবাইকে যেন অন্তর্ভূক্ত করা যায় সেটাই সবচেয়ে ভালো। তিনি বলেন, এশিয়াতে আমাদের আরও কিছু দেশ রয়েছে তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সাধারণ হলে আমরা খুশি হবো। এ লক্ষ্যে ভূমিকা রাখতে শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানান ভারতীয় জনতা পার্টির উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান এল কে আদভানি।  

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আরও অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যাবে বলেও কামনাও করেন তিনি।  

বাংলাদশ সময়: ১১৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৭
এইচএ/এমএমকে

আরও পড়ুন
** প্রণবের সঙ্গে ৭১’র স্মৃতিচারণ, প্রশংসায় সোনিয়া
** হাসিনা-প্রণব সাক্ষাৎ, এরপর নৈশভোজে
** শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে সোনিয়া-রাহুল
** নৈশভোজে হাসিনার জন্য ব্যস্ত ৩২ পাচক​
** আজমীর শরিফ জিয়ারত করলেন প্রধানমন্ত্রী​
** সকালে আজমীর যাচ্ছেন হাসিনা, সন্ধ্যায় প্রণবের নিমন্ত্রণ
** হাসিনা-মমতা সাক্ষাৎ, কথা হলো তিস্তা ও অন্যান্য প্রসঙ্গে
** বাংলাদেশ-ভারত বন্ধন ভ্রাতৃত্বের, যৌথ ঘোষণা
** ভারতীয় সেনাদের আত্মত্যাগে বাংলাদেশ চির কৃতজ্ঞ​
** ৩৬ চুক্তি, সমঝোতা স্মারক সই, এলওসি ৫ বিলিয়ন ডলার

** মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মোদির তিন ঘোষণা
** ৪.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে ভারত
** ঢাকা-দিল্লি যৌথ ঘোষণায় সম্পর্কের সব বিষয় সমন্বয়​
** যে যে বিষয়ে ২২ চুক্তি-স্মারক
** প্রযুক্তিতে দু’দেশের তরুণপ্রজন্মকে যুক্ত করতে হবে

** মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় শহীদদের সম্মাননা দিলো বাংলাদেশ
** ভারত আমাদের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী
** এ সফর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেবে
** তিস্তা ‘গুরুত্বপূর্ণ’: মোদি, শিগগির ‘সমাধান’: হাসিনা
** বাংলায় নববর্ষের শুভেচ্ছা জানালেন মোদি
** বাংলাদেশ-ভারত ২২ চুক্তি সই
** ভারতীয় সেনাদের সম্মাননার সিদ্ধান্ত হৃদয় ছুঁয়েছে
** হিন্দিতে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর মোড়ক উন্মোচন 
** গান্ধীজি অনুপ্রেরণার প্রতীক, লিখলেন হাসিনা​
** শেখ হাসিনাকে গার্ড অব অনার নয়াদিল্লিতে
** আজ আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা, একান্ত বৈঠক ও চুক্তি স্বাক্ষর
**হাসিনার সঙ্গে সুষমা স্বরাজের সাক্ষাৎ
** প্রণব-মোদি-সোনিয়াদের জন্য ঝুড়ি ঝুড়ি উপহার হাসিনার
** আমি অভিভূত, বললেন প্রধানমন্ত্রী
** সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মোদি
** দিল্লিতে হাসিনার আগমনে মোদির চমক
** তিস্তা চুক্তির বিষয়ে আশাবাদী শেখ হাসিনা

** দিল্লিতে হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন মোদি
** নয়াদিল্লি পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী
** হাসিনার শহীদ সম্মাননা তালিকায় অংশুয়ার বদলে সুগন সিং

** প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে দিল্লির পথে ডানা মেললো আকাশপ্রদীপ​
** দু’দেশের বন্ধুত্ব নতুন উচ্চতায় নেবে হাসিনার সফর
** ৬ মন্ত্রী ২৫ সচিবসহ ৩৫১ সফরসঙ্গী প্রধানমন্ত্রীর

**ভারতীয় ৭ শহীদের স্বজনদের ক্রেস্ট দেবেন প্রধানমন্ত্রী
** গুরুত্বপূর্ণ সফরে শুক্রবার দিল্লি যাচ্ছেন হাসিনা 
** মমতা রাজি না হলে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে রফা তিস্তা ইস্যুর
** তিস্তায় কত জল!
** শেখ হাসিনার আগমন ঘিরে নয়াদিল্লিতে সাজ সাজ রব
** শহীদ সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বাংলায়
** সোনিয়ার সঙ্গে রাহুলও আসছেন হাসিনা সাক্ষাতে

** ‘তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি অসম্ভব নয়’
**তিস্তা চুক্তির বিষয়ে আশাবাদী শেখ হাসিনা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।