তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি বাদে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ভিন্ন প্রস্তাব সরকার আমলে নেয়নি বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চলমান ভারত সফর সম্পর্কে সোমবার (১০ এপ্রিল) সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘মমতা কি প্রস্তাব দিলেন, সেটি আমলে নেয়নি সরকার। ভারত সরকারের সঙ্গে তিস্তা নিয়ে কথা হয়েছে। ভারত সরকার বলেনি যে, তিস্তা চুক্তি হবে না। বরং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, শেখ হাসিনার সময়কালেই এ চুক্তি হবে’।
ইনু বলেন, ‘চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ-চীন প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি’২০০২ এবং রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশের ১০টি চুক্তি রয়েছে। বাংলাদেশ ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ সামরিক সরঞ্জাম কেনে চীন থেকে’।
‘ভারত থেকে সামরিক সরঞ্জাম কিনলে আমাদের কেনাকে আরো বহুমুখী ও প্রতিযোগিতামূলক করবে। নির্দিষ্ট কোনো নির্ভরশীলতা থেকে বের হয়ে আসার পদক্ষেপ ভারতের সঙ্গে চুক্তি’।
তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ‘সামরিক ক্ষেত্রে সমঝোতা স্মারক, লাইন অব ক্রেডিট, ভারত থেকে সামরিক সরঞ্জাম কেনা সংক্রান্ত বিষয়ে কেউ কেউ কথা বলার চেষ্টা করছেন। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, ভারতকে শত্রু বিবেচনা করা আর ভারতকে প্রতিবেশী বিবেচনা করা- এ দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য আছে। সব বিষয়ে ভারতের সঙ্গে সমঝোতা-সহযোগিতা করা যাবে, কিন্তু সামরিক বা প্রতিরক্ষা বিষয়ে সমঝোতা বা সহযোগিতা করা যাবে না- এ দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যেই সেই পাকিস্তানি বস্তাপচা 'শত্রু-শত্রু খেলা' দৃষ্টিভঙ্গি লুকিয়ে আছে। চীন আমেরিকা, রাশিয়া, ইতালি থেকে সামরিক সরঞ্জাম কেনা যাবে কিন্তু ভারত থেকে সামরিক সরঞ্জাম কেনা যাবে না!- এটিও ওই রাজনীতির দৃষ্টিভঙ্গি’।
‘সব দেশ থেকে ঋণ নেওয়া যাবে, কিন্তু ভারত থেকে ঋণ নেওয়া যাবে না- এটিও সেই একই রাজনীতির দৃষ্টিভঙ্গি’।
মন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আগে থেকেই সামরিক ক্ষেত্রে যৌথ মহড়া, যৌথ অনুশীলন, উচ্চ পর্যায়ের সফর, প্রতিরক্ষা কলেজগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি, দুই বছর অন্তর প্রতিরক্ষা সংলাপসহ বিভিন্ন সহযোগিতা রয়েছে। চুক্তিগুলোর মাধ্যমে বিদ্যমান ক্ষেত্রগুলোকেই প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগত রুপ দেওয়া হয়েছে’।
‘ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তিগুলো বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে কোনো হুমকিতেই ফেলবে না, বিপদেও ফেলবে না। বরং, এর মাধ্যমে আমাদের সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং উন্নততর প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি হবে’।
বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর সর্ম্পকে না জেনেই মন্তব্য করছেন উল্লেখ করে ইনু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চলমান ভারত সফর ও ভারতের সঙ্গে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর নিয়ে খালেদা জিয়া চিরাচরিত ঢালাও বক্তব্য দিয়েছেন। তার বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে, তিনি চুক্তির বিষয়বস্তু সম্পর্কে অবগত নন। এমনকি চুক্তির শিরোনামগুলোও পড়ে দেখেননি’।
খালেদাকে উদ্দেশ্য করে ইনু বলেন, ‘বাংলাদেশের পক্ষে নন, তিনি পাকিস্তানের পক্ষে। পাকিস্তানের চোখ দিয়ে দেখে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে শত্রুতা জিইয়ে রাখতে চান। খালেদা জিয়া প্রতিবেশীকে শত্রুর কাতারে ফেলে উত্তেজনার বলয়ে ফায়দা লুটতে চান। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের পক্ষে প্রতিবেশীকে বন্ধু ভেবে সমস্যার সমাধান ও সহযোগিতা বৃদ্ধিতে দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে চলেছেন’।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৭
এমএন/এএসআর